ছবি : সংগৃহীত।
ভারী খাওয়াদাওয়া করেই ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন! এ দিকে, চোখ বোজার কিছু ক্ষণ পরেই শুরু হল অস্বস্তি। আইঢাই ভাব। কী করবেন বুঝতে না পেরে কয়েক ঢোঁক জল খেলেন হয়তো। কিন্তু লাভ হল না তাতে। বরং বুকজ্বালা করা, চোঁয়া ঢেকুরের অত্যাচার শুরু হল! রাতবিরেতে এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে কী করবেন? মধ্যরাতের ‘অ্যাসিড রিফ্লাক্স’কে সামলাবেন কী করে?
হজমের সমস্যা এবং পেটের রোগের চিকিৎসক দত্তাত্রেয় সোলাঙ্কি জানাচ্ছেন, রাতের ওই অ্যাসিড রিফ্লাক্সের একটা নাম আছে— গ্যাস্ট্রো ইসোফেজিয়েল রিফ্লাক্স ডিজ়িজ় বা জিইআরডি। এটি এক ধরনের ক্রনিক রোগ, অর্থাৎ এমন অসুখ, যা বার বার ফিরে আসে। দত্তাত্রেয় বলছেন, ‘‘জিইআরডির সমস্যা তখনই হয়, যখন পাকস্থলীতে থাকা অ্যাসিড শারীরিক গোলযোগের কারণে খাদ্যনালিতে উঠে আসে। সেটা যখনই হয়, তখনই গলা-বুক জ্বালা, তিক্ত অম্ল স্বাদের জল মুখে উঠে আসা, চোঁয়া ঢেকুর, বুকে ব্যথা, গলার কাছে কিছু আটকে থাকার মতো অনুভূতি হতে থাকে।
কেন এমন হয়?
চিকিৎসক সোলাঙ্কি বলছেন, জিইআর়ডি হওয়ার একটি মূল কারণ হল লোয়ার ইসোফিজিয়াল স্পিংটারের কাজে গলদ। লোয়ার ইসোফিজিয়াল স্পিংটার বা এলইএস আসলে পাকস্থলী আর খাদ্যনালির সংযোগস্থলে আংটির মতো দেখতে একটি পেশি। যা খাবার খাওয়ার সময় বা জল পান করার সময় শিথিল হয়ে তা পাকস্থলীতে যেতে দেয়। অন্য সময় সংকুচিত থেকে পাকস্থলীর মুখ বন্ধ রাখে। চিকিৎসক বলছেন, মুশকিল হয় তখন, যখন ওই প্রবেশ পথটি যথা সময়ে বন্ধ হয় না। তখনই পাকস্থলীতে থাকা অ্যাসিড বাইরে আসার সুযোগ পায় এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা শুরু হয়। বিশেষ করে রাতে শুয়ে থাকার সময় খোলা পথ দিয়ে অ্যাসিড বাইরে আসে আরও বেশি পরিমাণে।
কী ভাবে ঠেকাবেন?
ঘুমনোর সময়ে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা যাতে না হয়, তার জন্য সাবধান হতে হবে রাতের খাবার খাওয়ার আগে থেকে। পাশাপাশি জীবনচর্যায় বদল আনার পরামর্শও দিয়েছেন চিকিৎসক সোলাঙ্কি। মূলত চারটি বিষয়ে নজর দিতে বলছেন তিনি।
১। গভীর রাতে খাওয়ার অভ্যাস ছাড়া উচিত। তিনি বলছেন, বিছানায় শোয়ার অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নেওয়া উচিত।
২। অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা থাকলে ঘুমোোনোর সময় বালিশে পিঠ দিয়ে বিছানা থেকে অন্তত ৬-৮ ইঞ্চি উঁচুতে মাথা রেখে ঘুমোন। তাতে পাকস্থলী থেকে খাদ্যনালি বেয়ে অ্যাসিড উঠে আসার সমস্যা কিছুটা কমবে।
৩। বাঁ দিক ফিরে শুলে খাদ্যনালীর উপর চাপ পরে কম। তাতেও অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা কমানো সম্ভব।
৪। বাজারে পাওয়া অ্যান্টাসিডও সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে। তবে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নিন।