COPD Treatment

স্টেরয়েড না নিয়েই সারবে হাঁপানি, সিওপিডি? নতুন ওষুধ তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা

গত ৫০ বছরে হাঁপানির চিকিৎসায় এই প্রথম স্টেরয়েড ছাড়াই ওষুধ তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা, যার নাকি কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এখনও অবধি দেখা যায়নি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:৩৯
A new treatment for asthma has been found by scientists

নতুন ওষুধ কী ভাবে সিওপিডি সারাবে, জানালেন বিজ্ঞানীরা। প্রতীকী ছবি।

হাঁপানির কষ্ট সারাতে আর স্টেরয়েড প্রয়োগের দরকার পড়বে না। হাঁপানি, সিওপিডি-র রোগীদের জন্য নতুন ওষুধ তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। ‘দ্য ল্যানসেট রেসপিরেটরি মেডিসিন’ বিজ্ঞানপত্রিকায় এই গবেষণার খবর বেরিয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, গত ৫০ বছরে হাঁপানির চিকিৎসায় এই প্রথম স্টেরয়েড ছাড়াই ওষুধ তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা, যার নাকি কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এখনও অবধি দেখা যায়নি।

Advertisement

লন্ডনের কিংস কলেজ ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় নতুন ওষুধ তৈরির দাবি করা হয়েছে। গবেষক দলের সদস্য মোনা ব্যাফাডহেল জানিয়েছেন, নতুন ওষুধটির নাম 'বেনরালিজ়ুমাব'। এই ওষুধটি তৈরি করতে কোনও রকম স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়নি। ওষুধটির দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল সফল হয়েছে বলেই দাবি করেছেন বিজ্ঞানী। তিনি আরও জানিয়েছেন, হাঁপানি ও সিওপিডি-র যে রোগীদের ওষুধটি দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা ধীরে ধীরে সুস্থ হওয়ার পথে। ওষুধ খাওয়ার পরে তাঁদের শরীরে কোনও রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যায়নি।

ওযুধটি ইঞ্জেকশনের মাধ্যামে দেওয়া হবে। এটি আসলে এক প্রকার ‘মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’, যা শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় করে তুলবে। মোনা জানাচ্ছেন, এত দিন সিওপিডি রোগীদের স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধই বেশি দেওয়া হত। কিন্তু এ বার বাইরে থেকে অ্যান্টিবডি শরীরে ঢুকিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধী কোষগুলিকে সক্রিয় করে তুলে রোগ সারানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

রক্তের শ্বেতকণিকার তিন রকম কোষের মধ্যে ইওসিনোফিল কোষটির সংখ্যা যদি বেড়ে যায়, তা হলে ফুসফুসে প্রদাহ শুরু হয়। তখন শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়। নতুন ওষুধটি কাজ হবে শরীরে ঢোকার পরে রক্তে মিশে গিয়ে ওই ইওসিনোফিল কোষগুলির বাড়বৃদ্ধি বন্ধ করা। যাতে আর শ্বাসনালিতে কোনও রকম প্রদাহ না হয়, স্বাভাবিক ভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া যায়।

সিওপিডি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। হু-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৫ সালে প্রায় ৩১ লক্ষ রোগীর মৃত্যু হয়েছিল সিওপিডি-র কারণে। ২০১৬ সালে বিশ্বে এই রোগীর সংখ্যা ছিল ২৫ কোটি ১০ লক্ষ। ২০২৩ সালের হিসেবে বিশ্ব জুড়ে সিওপিডি রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬ কোটি ৪০ লক্ষ। যে হারে দূষণ বাড়ছে, তাতে কেবল প্রবীণ বা মধ্যবয়স্কদের নয়, সিওপিডি এখন থাবা বসাচ্ছে কমবয়সিদের শরীরেও। যে কোনও ধরনের শ্বাসকষ্ট এর প্রধান লক্ষণ। হাঁটতে গেলে, সিঁড়ি ভাঙতে গেলে, এমনকি ঘুমের মধ্যেও দমবন্ধ হয়ে আসতে পারে। ক্রমাগত কাশি, রাতে কাশির দমকে ঘুম ভেঙে যাওয়া, সিঁড়ি বা উঁচু জায়গায় ওঠানামার ক্ষেত্রে বুকে চাপ অনুভব করা, বুকের মধ্যে সাঁইসাঁই শব্দ হওয়া, এমন বেশ কিছু উপসর্গ দেখলেই বুঝতে হবে যে, সিওপিডি-র সমস্যা শুরু হয়েছে।

কিন্তু মুশকিল হল, এই শ্বাসকষ্টকে বেশির ভাগ মানুষই প্রথমে উপেক্ষা করেন। সাধারণ সর্দি-কাশি বা ধূমপানের কারণে এই শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বলে তাঁরা প্রথমেই ধরে নেন। ফলে বিপদ বাড়তে থাকে। কিছু দিনের মধ্যে তা দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগের আকার নেয়। লন্ডনের কিংস কলেজের গবেষক সামান্থা ওয়াকার জানিয়েছেন, সিওপিডি ধরা পড়ার পরে যদি এই নতুন ওষুধটির চিকিৎসা শুরু করা যায়, তা হলে রোগ এক সময়ে নির্মূল হতে পারে। তবে আরও অনেকের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষার পরেই ওষুধটি বাজারে নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Advertisement
আরও পড়ুন