বিশ্বে খুব কম জনেরই হয় এমন অসুখ। প্রতীকী ছবি।
বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে দিল্লির হাসপাতালে ভর্তি ৯০ বছরের এক বৃদ্ধ। তাঁর যে রোগ ধরা পড়েছে, তা বিশ্বে এক শতাংশেরও কম মানুষের হয়েছে। দিল্লির স্যর এক হাসপাতালে বৃদ্ধের চিকিৎসা চলছে। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পাকস্থলীর কিছু অংশ বুকের খাঁচা ঠেলে উপরে উঠে এসেছে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতর বৃদ্ধ। খেতেও পারছেন না। ১১ দিনেই ওজন কমে গিয়েছে ৫ কেজি।
রোগের উপসর্গ ধরা পড়ে চলতি মাসের গোড়ায়। খাবার গিলতে গেলেই বিষম খাচ্ছিলেন বৃদ্ধ। ঘন ঘন বমি হচ্ছিল। অম্বলে গলা-বুক জ্বালছিল সব সময়ে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল তাঁর। সেই সঙ্গেই বুকে অসহ্য যন্ত্রণা। বয়সজনিত সমস্যা ভেবে শুরুতে তেমন গা করেননি বৃদ্ধের পরিবারের লোকজন। কিন্তু পরে শারীরিক অবস্থার চূড়ান্ত অবনতি হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসকেরাই পরীক্ষা করে ধরতে পারেন, ঠিক কী রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বৃদ্ধ।
দিল্লির হাসপাতালের ল্যাপারোস্কোপিক বিভাগের চিকিৎসক তরুণ মিত্তল জানিয়েছেন, হাইটাল হার্নিয়ায় আক্রান্ত বৃদ্ধ। এই রোগকে হাইটাস হার্নিয়াও বলা হয়। খুবই বিরল রোগ। কম জনের মধ্যেই ধরা পড়েছে। এই রোগে পাকস্থলী, পেটের নাড়িভুড়ি সব ঠেলে উপরে উঠে আসতে শুরু করে। হার্নিয়া রোগে যেমন পেটের ভিতরে কোথাও ফুটো হয়ে গিয়ে ভিতরের নালি, চর্বি, অন্ত্র সব বাইরে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। হাইটাস হার্নিয়ার ক্ষেত্রে রোগের ধরন আরও মারাত্মক। পেটের ভিতরের সব কিছু বুকের দিকে উঠে আসতে থাকে।
আমাদের শরীরের বক্ষ গহ্বর ও উদর গহ্বর একটি পর্দা দিয়ে আলাদা করা থাকে। একে বলে মধ্যচ্ছদা বা ‘ডায়াফ্রাম’। এই মধ্যচ্ছদা ভেদ করেই পেটের ভিতরের অঙ্গগুলি উপরে উঠে আসতে থাকে। পাকস্থলী ঠেলে উপরে উঠে এলে বিপাকক্রিয়া প্রায় বন্ধই হতে বসে। খাদ্যনালি দিয়ে খাবার আর পাকস্থলীতে যেতে পারে না। ফলে খাদ্যনালিতে খাবার জমতে জমতে সংক্রমণ শুরু হয়। সেই সঙ্গেই পাকস্থলী থেকে অম্লরস বেরিয়ে খাদ্যনালি দিয়ে গলায় উঠে আসে। প্রচণ্ড অম্বলের সমস্যা দেখা দেয় রোগীর। মনে হয় গলা দিয়ে অ্যাসিড উঠে আসছে। গলা-বুক জ্বালা করতে শুরু করে। বৃদ্ধেরও একই দশা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দিল্লির চিকিৎসকেরা।
হাইটাল হার্নিয়ার চিকিৎসায় ল্যাপারোস্কোপি ও লেজ়ার অস্ত্রোপচার করেছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, বৃদ্ধের যা অবস্থা, তাতে পেট কেটে অস্ত্রোপচার করা বিপজ্জনক ছিল। তাই ছোট কয়েকটি ছিদ্র করে তার মধ্যে দিয়ে ক্যামেরা এবং আনুসঙ্গিক যন্ত্রপাতি পেটের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। ল্যাপারোস্কোপির সুবিধা হল, পেট কেটে অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হয় না। সে জন্য রোগী দ্রুত সেরে উঠে কাজে ফিরতে পারেন। অস্ত্রোপচারের দাগও দ্রুত মিলিয়ে যায়। রক্তপাত কম হয়। শরীরে ধকলও কম হয়।
অস্ত্রোপচারের পরে বৃদ্ধের শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলেই জানা গিয়েছে। তবে তিনি কত দিনে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবেন, তা জানা যায়নি।