গান এবং অভিনয় এই দুইই ছিল তাঁর চলচ্চিত্র জীবনের অঙ্গ। কিন্তু কোনওটাই সে ভাবে কাজে লাগাতে পারলেন না চন্দ্রচূড় সিংহ।
নিরীহ চোখ, চকোলেট বয় চন্দ্রচূড়ের ৯ বছরের পরিশ্রমও কাজে লাগল না। কেরিয়ার শুরুর পরেই যেন মিলিয়ে গেল অকালেই। মাত্র ৬ বছরেই কেরিয়ার শেষ হয়ে যায় তাঁর। দারুণ ভাবে শুরু করে, ২৬টি ফিল্মে অভিনয় করেও তারকার স্বাদ উপভোগ করতে পারলেন না চন্দ্রচূড়।
চন্দ্রচূড়ের জন্ম ১৯৬৮ সালে ওড়িশায়। ফিল্মমহল প্রথমে চন্দ্রচূড়কে ‘মন্দ কপাল’-এর তকমা দিয়ে দিয়েছিল। কারণ যে ছবিতে চন্দ্রচূ়ড় সই করছিলেন সেগুলিই যেন কোনও না কোনও কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।
চন্দ্রচূড়ের প্রথম ছবি ছিল ‘যব প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া’। এই ফিল্মটি ৬০ শতাংশ শ্যুট হওয়ার পর টাকার অভাব ঘটে। মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর আরও দু’টো ছবির প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ইতিমধ্যেই ‘মন্দ কপাল’-এর দাগ লেগে যাওয়ায় পরবর্তী দু’টি ছবি থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর নামের সঙ্গে দুর্ভাগ্যের দাগ যেন আরও গভীর হয়ে উঠেছিল।
এর পর তিনি মু্ম্বই ছেড়ে দিল্লি চলে যান। চন্দ্রচূড় গানেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। দিল্লি গিয়ে তিনি একটি গানের স্কুলের শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। কিছু দিন দিল্লিতে কাটানোর পর তিনি দেহরাদুন চলে যান। সেখানে একটি স্কুলে ইতিহাস পড়াতে শুরু করেন।
স্থায়ী চাকরি পেয়ে গিয়েছিলেন চন্দ্রচূড়। জীবন ঠিকঠাকই এগোচ্ছিল কিন্তু তার মধ্যেই ফের মুম্বই থেকে তাঁর কাছে ফোন আসে। জয়া বচ্চন একটি ছবির জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল না তাঁর কাছে।
১৯৯৬ সালের এই ফিল্ম ‘তেরে মেরে সপনে’ দিয়েই তাঁর বলিউডে হাতেখড়ি হয়। ফিল্মটি মুক্তি পাওয়ার আগেই পরিচালকের মৃত্যু হয়। ফিল্মের মুক্তিও পিছিয়ে যায়। মুম্বইয়ের চলচ্চিত্র দুনিয়া হয়তো আরও একবার তাঁর নামের সঙ্গে দুর্ভাগ্যের বিষয়টি জুড়ে দিত, যদি না তাঁর অন্য একটি ছবি ‘মাচিস’ সফল হত।
প্রথম ফিল্ম করার সময় ‘মাচিস’ নামে আরও একটি ফিল্ম সই করেছিলেন তিনি। ‘তেরে মেরে সপনে’-র মুক্তি পিছিয়ে যাওয়ায় ‘মাচিস’ আগে মুক্তি পেয়েছিল। ‘মাচিস’-এর জন্য তিনি সবচেয়ে ভাল অভিষেককারী অভিনেতার পুরস্কারও পেয়েছিলেন।
‘মাচিস’-এ তাঁকে দেখার পর মুম্বইয়ের ফিল্ম দুনিয়া তাঁর নামের সঙ্গে ‘পরবর্তী বড় অভিনেতা’র তকমা জুড়ে দিয়েছিল। এর পর চন্দ্রচূড় অনেকগুলি ফিল্মেই মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু সে ভাবে কোনও ফিল্মই সফল হয়নি।
পরবর্তীকালে ক্রমে মুখ্য চরিত্র থেকে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে শুরু করেন তিনি। দর্শক চন্দ্রচূড়কে তেমন পছন্দ করছিলেন না।
কর্ণ জোহরের ছবি ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-তেও আমন (সে চরিত্র সলমন খান করেছিলেন)-এর চরিত্রের জন্য প্রথম তাঁর কাছেই প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে আর রাজি ছিলেন না তিনি। প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। সেটা তাঁর অভিনয় জীবনের বড় ভুল ছিল।
অভিনয় জীবনের শুরুতেই যে প্রশংসা পেতে শুরু করেছিলেন, তা ক্রমশ ম্লান হতে শুরু করেছিল। কোনও ভাল চরিত্র তিনি পাচ্ছিলেন না। এমতাবস্থায় গোয়ার এক দুর্ঘটনা তাঁর অভিনয় জীবনে ব্যাপক ছাপ ফেলে। গোয়ায় বড় দুর্ঘটনা ঘটে। যাতে তাঁর হাত খুব বাজে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
হাতের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হয়েছিল তাঁকে। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর তিনি পুরোপুরি সুস্থ হন। কিন্তু তত দিনে অনেকটাই ওজন বেড়ে গিয়েছিল তাঁর। চোখে মুখে সেই নিরীহ ভাব এবং চকোলেট বয় ভাবমূর্তি ছিল না।
ফিল্ম দুনিয়াও তাঁকে প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। ফলে নায়ক হিসাবে প্রত্যাবর্তন খুব কঠিন হয়ে পড়ে তাঁর জন্য। সেটা আর সম্ভব হয়নি।
২০২০ সালে হটস্টারের একটি ওয়েব সিরিজে সুস্মিতা সেনের বিপরীতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
তাঁর ঝুলিতে অনেকগুলি ছবি রয়েছে। দুটি ছবির নেপথ্য সঙ্গীতেও গান করেছেন তিনি। অথচ তা সত্ত্বেও সে ভাবে তারকার স্বাদ পাননি তিনি।
এ নিয়ে আক্ষেপও করেন না চন্দ্রচূড়। স্ত্রী অবন্তিকা কুমারী এবং এক সন্তানের সঙ্গেই ব্যস্ত। নায়ক-গায়কের বাইরে পরিবারের কাছে আরও একটি পরিচিতি রয়েছে তাঁর। তিনি অত্যন্ত ভাল একজন রাঁধুনী।