সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের আগামী ছবিতে কে কাজ করবেন?
দ্বন্দ্ব শেষ। উত্তেজনার অবসান। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের আগামী ছবি ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম’-এ গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু অনির্বাণ ভট্টাচার্য নন। নামভূমিকায় দেখা যাবে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে। ছবির ছ’টি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের একটি মহাপ্রভুর প্রথম পক্ষের স্ত্রী লক্ষ্মীপ্রিয়া। সেই ভূমিকায় দেখা যাবে প্রিয়াঙ্কা সরকারকে। আনন্দবাজার অনলাইনকে এ কথা জানিয়েছেন পরিচালক স্বয়ং। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘মিথ্যে রটনা ছড়ানো হয়েছে আমাকে আর যিশু সেনগুপ্তকে নিয়ে। কোনও দিনই আমি এই চরিত্রের জন্য যিশুকে ভাবিনি। মূল চরিত্রের সমান গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রের জন্য আমার পছন্দ যিশু।’’ সৃজিতের আরও দাবি, তিনি ২০১৯ থেকে মহাপ্রভুর জন্য বেছে নিয়েছেন পরমব্রতকে। পাশাপাশি, অনির্বাণ ভট্টাচার্যও তাঁর ভাবনায় ছিলেন। অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের জন্য।
খবর, ‘মহাপ্রভু’ ধারাবাহিকের স্মৃতিতাড়িত হয়েই ছবিতে যিশুকে চেয়েছিলেন যুগ্ম প্রযোজকের অন্যতম রানা সরকার। ছোট পর্দা, ওয়েব সিরিজ, বড় পর্দা মিলিয়ে যিশু সত্যিই মহা ব্যস্ত। সম্ভবত সেই কারণেই তিনি এই বৃত্তের বাইরে।
সৃজিতের ঘোষণা অবসান ঘটিয়েছে জল্পনার। কতটা টেনশনে ফেলেছে পরমব্রতকে? অভিনেতার জবাবে পরিচালকের কথার সুর স্পষ্ট, ‘‘২০১৯-এর এপ্রিল মাসে সৃজিত আমায় বলে রেখেছিলেন, মহাপ্রভু চরিত্র আমি করছি। ফলে, কথাটা শোনার পর অবশ্যই খুশি হয়েছি। তবে অবাক হইনি।’’ নিজেকে বিতর্কে না জড়িয়েই পরমব্রতর দাবি, মাঝখান থেকে কী ভাবে যিশু সেনগুপ্তকে জড়িয়ে ফেলা হল সেটা তিনিও বুঝতে পারছেন না। এক টানা হয় রহস্য-রোমাঞ্চ নয় ভয়ের ছবিতে অভিনয় করছেন অভিনেতা। সৃজিতের ‘গৌরাঙ্গ’ সেই একঘেয়েমি থেকে কি মুক্তি দিতে চলেছে তাঁকে? ‘‘মনে হচ্ছে, খুব শিগগিরি এক ঝলক টাটকা বাতাসের খোঁজ পেতে চলেছি’’, স্বীকার করলেন অভিনেতাও। তার জন্যই তিনি হাতের কাজ শেষ করে কিছু দিন বিশ্রাম নেবেন। পড়াশোনা করবেন মহাপ্রভুকে নিয়ে। তাঁর দাবি, কিছু মানুষ ‘বিশেষ’ নানা কারণে। মহাপ্রভু বাংলা তথা ভারতে যুগাবতার আধ্যাত্মিক কারণে। এই ধরনের ‘চরিত্র’ হয়ে ওঠার আগে তাই মানসিক প্রস্তুতি জরুরি। আপাতত এটাই তাঁর ‘হোমওয়ার্ক’। সব ঠিক থাকলে নতুন বছরে ‘মহাপ্রভু’-র মধ্যে মিশিয়ে দেবেন নিজেকে। ছবিটি লর্ড অফ দ্য ইউনিভার্স-এর নিবেদন। যুগ্ম প্রযোজক সায়নদীপ ধর।
শারীরিক প্রস্তুতি কেমন হবে পরমব্রতর? অভিনেতা অকপট, দুটো মানুষের শারীরিক গঠন কখনওই এক হওয়া সম্ভব নয়। এ দিকে ছবিতে দীর্ঘ সময় তাঁকে খালি গায়ে দেখা যাবে। তার জন্য শরীরে কিছু বদল আনবেন তিনি। ছোট পর্দার এক সময়ের আলোড়ন তৈরি করা ধারাবাহিক ‘মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য’ বড় পর্দায় আসছে। যার হাত ধরে অভিনয় দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন যিশু। সেই জনপ্রিয়তা আজও ম্লান হয়নি। একে কী করে সামলাবেন পরমব্রত? ‘‘যিশুর নামের সঙ্গে যেমন মহাপ্রভুর নাম জড়িয়ে, তেমনই পরমব্রত মানেই যেন তোপসে। এ গুলো ইতিহাস। বদলানো সম্ভব নয়। তা বলে কি নতুন ইতিহাস লেখা হবে না?’’ পাল্টা প্রশ্ন পরমব্রতর। স্পষ্ট জবাবও দিলেন নিজেই, সেই জায়গা থেকে তিনি ‘মহাপ্রভু’-র চরিত্রে অভিনয় করবেন। এটা তাঁর কাজ। বাকিটা সময়ের উপরেই ছেড়ে দেওয়া ভাল।
‘লক্ষ্মীপ্রিয়া’ প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে কবি শ্রীজাত-র প্রথম পরিচালিত ছবি ‘মানবজমিন’-এও দেখা যাবে পরমব্রতকে। পরপর দুটো ছবিতে কাজ স্বাচ্ছন্দ্য তৈরি করে দেবে, এটাও মানছেন অভিনেতা। এও যোগ করেছেন, প্রিয়াঙ্কার প্রথম অভিনয় ছোট পর্দায় তাঁর ‘ভাইঝি’ হিসেবে। অনেক দিনের সেই চেনাশোনা নতুন রূপ পেতে চলেছে আগামী দু’টি ছবিতে। প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে মুখ খুলেছেন পরিচালকও। তাঁর কথায়, ‘‘এখনকার শক্তিশালী অভিনেত্রীদের মধ্যে প্রিয়াঙ্কা অন্যতম। কিন্তু এখনও প্রিয়াঙ্কাকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করেনি ইন্ডাস্ট্রি। আমার আগামী ছবিতে তাই ওঁকে বেছেছি। আমি জানি, প্রিয়াঙ্কা আমার আশা পূরণ করবেন।’’
সৃজিতের এই কথা ইতিমধ্যেই ‘ভোকাল টনিক’-এর কাজ করেছে। অভিনেত্রী উত্তেজিত ‘হেমলক সোসাইটি’, ‘রাজকাহিনী’-র পর আবারও পরিচালকের সঙ্গে কাজের সুযোগ পেয়ে। তাঁর দাবি, সৃজিতের সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে থাকেন তিনি। তবে এ বার সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার ছবি। পিরিয়ড ড্রামা মানেই প্রচুর পড়াশোনা, চেহারায় পরিবর্তন। প্রিয়াঙ্কার মতে, ‘‘হাতে কিছুটা সময় পাব। তখন নিজেকে যত্ন করে তৈরি করব।’’
পরমব্রতকে নিয়ে অভিনেত্রীর বক্তব্য, ‘‘ভাইঝি থেকে নায়িকা! পরমদার সঙ্গে অনেকটা পথ চলা হয়ে গেল।’’