TET-Tollywood

করুণাময়ী-কাণ্ড নিয়ে টুইট অপর্ণার, সরব ঋদ্ধি, কী বলছেন টলি-রাজনীতিকরা?

টালিগঞ্জে যখন সংসদীয় এবং পরিষদীয় রাজনীতির স্রোত তুমুল বেগে বহমান? অভিনেতাদের মধ্যে যেমন রয়েছেন শাসক তৃণমূলের প্রতিনিধি, তেমনই রয়েছেন বিরোধী বিজেপির প্রতিনিধিও।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২২ ১৩:১৪
করুণাময়ী-কাণ্ডে সরব অপর্ণা সেন।

করুণাময়ী-কাণ্ডে সরব অপর্ণা সেন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

করুণাময়ী-কাণ্ডে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সরব অপর্ণা সেন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আন্দোলনরত টেট উত্তীর্ণদের পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার পর শুক্রবার সকালে অপর্ণা টুইট করেন, ‘তৃণমূল সরকার অনশনকারীদের গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘন করছে। অহিংস আন্দোলনে ১৪৪ ধারা জারি হল কেন? পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই অগণতান্ত্রিক এবং অনৈতিক কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’

অভিনেতা ঋদ্ধি সেনও স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই ফেসবুকে লেখেন, ‘ধিক্কার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পুলিশকে এক শান্তিপূর্ণ, যোগ্য আন্দোলনের গায়ে এমন বীভৎস আঘাত করার জন্য। এই জঘন্য কাজের মাশুল গুনতে হবে রাষ্ট্রকে।’

Advertisement

কিন্তু বাকিরা কী ভাবছেন? বিশেষত, টালিগঞ্জে যখন সংসদীয় এবং পরিষদীয় রাজনীতির স্রোত তুমুল বেগে বহমান? অভিনেতাদের মধ্যে যেমন রয়েছেন শাসক তৃণমূলের প্রতিনিধি, তেমনই রয়েছেন বিরোধী বিজেপির প্রতিনিধিও। আবার একই সঙ্গে রয়েছেন প্রাক্তন বাম শাসনের অনুরাগীরা। এই তিন মতাদর্শের বিশ্বাসীদের সঙ্গেই করুণাময়ী-কাণ্ড নিয়ে কথা বলেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী তৃণমূলের বিধায়কও বটে। বিষয়টি ‘বিচারাধীন’ বলে তিনি প্রাথমিক ভাবে মন্তব্য করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কী ঘটেছে জানি। সম্পূর্ণ বিষয়টাই বিচারাধীন। তাই এটা নিয়ে আলাদা করে কিছু বলাটা আমার উচিত হবে না। তবে শুধু একটাই কথা বলব— আন্দোলনকারীদের কিন্তু বারংবার অনুরোধ করা হয়েছিল আন্দোলন তুলে নেওয়ার জন্য। তার পর কার কী কী দাবি ন্যায্য, তা নিয়ে মুখোমুখি বসে আলোচনা করা যেত। কিন্তু ওঁরা মানলেন না। আন্দোলন করে কোথাও তো একটা সিভিল রাইটস ব্যাহত হচ্ছে। হয়তো মুখোমুখি বসলে সমস্যার সমাধান হতেই পারত।’’ পক্ষান্তরে, বিজেপির বিধায়ক তথা অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায় বিষয়টিকে ‘নিন্দনীয়’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তা অবশ্য প্রত্যাশিত। কারণ, হিরণ বিরোধী শিবিরের বিধায়ক। শাসকদলের পদক্ষেপ তাঁর কাছে ‘নিন্দনীয়’ হওয়াই স্বাভাবিক। খড়্গপুর সদর কেন্দ্রের বিধায়কের কথায়, ‘‘অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। পরাধীন ভারতে ব্রিটিশরা যেভাবে শান্তি মিছিলের উপর আক্রমণ করত, বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনাটা ঠিক যেন সে রকমই।’’

প্রসঙ্গত, হিরণের রাজনীতি শুরু হয়েছিল তৃণমূলেই। কিন্তু এখন তিনি বিজেপিতে। সেই বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকের মতোই হিরণের বক্তব্য, ‘‘পরীক্ষায় পাশ করে একদল ছেলেমেয়ে চাকরি পাচ্ছেন না। ওদিকে তাঁদের চাকরি বিক্রি করে মাননীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হচ্ছে! ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি দেখে আমি তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম। পরে সেটা কোথাও আমূল বদলে যাওয়ার জন্যই আমি বিজেপিতে যোগ দিই। আমি কিন্তু কোনও ইডি বা সিবিআই-এর ভয়ে বিজেপিতে আসিনি!’’

পাশাপাশিই হিরণ দুষেছেন সামগ্রিক ভাবে ‘শিল্পীমহল’-কে। তাঁর কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষ কার কাছে আশ্রয় নেবেন, কার কাছে গেলে একটু সমস্যার সমাধান পাবেন, সেটাই বুঝতে পারছেন না। সমাজের শিল্পীমহলের তরফে কোনও পদক্ষেপ দেখি না। সবাই যেন কারও ভয়ে চুপ রয়েছেন! সমাজের বিশিষ্টজনকে রাস্তায় নামতে হবে। সব বিষয়ে তো হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া সম্ভব নয়।’’

অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র বাম শিবিরের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘চোরেরা বাইরে আর শিক্ষিতদের জেলে ভরছে পুলিশ!’’ তবে শ্রীলেখা তাঁর বক্তব্যে জড়িয়ে নিয়েছেন বাঙালির অন্যতম ‘বিগ্রহ’কেও। এই অভিনেত্রীর কথায়,‘‘সবাই এখন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা বলছে। কিন্তু এই মানুষগুলোর কথা কারা বলছে? সৌরভের মতো মানুষরা কেন এদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন না? কেন ওদের হয়ে দু’টো কথা বলছেন না। অপর্ণা সেন তো বললেন! আর কোথায় লোকজন!’’ পাশাপাশিই শ্রীলেখার বক্তব্য, ‘‘আমি বলি বলে আমায় কাজ দেওয়া হয় না। আমি কেন চটিচাটা দলে নেই! কার্নিভাল বুঝি না। রাজ্যে শিক্ষা চাই, স্বাস্থ্যব্যবস্থা চাই। এখনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ করা উচিত!’’

গত বিধানসভা ভোটে সিপিএমের প্রার্থী তথা অভিনেতা দেবদূত ঘোষের বক্তব্য, সমালোচনামূলক। সেটা প্রত্যাশিতও বটে। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে কিন্তু এই রাজ্যের পুলিশ আটক করেনি! কিন্তু শিক্ষকদের ধরে তুলে দিতে পেরেছে, তাঁরা যখন একটা ন্যায্য আন্দোলন করছিলেন। আমি দুশ্চিন্তায় আছি। যাঁরা ন্যায্য আন্দোলন করছিলেন, তাঁরা কেউই মারমুখী ছিলেন না। রাস্তায় বসে স্লোগান দিচ্ছিলেন। কীসের ভিত্তিতে ১৪৪ ধারা জারি হল, তা-ও পরিষ্কার নয়। জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষকরা। সেই মেরুদণ্ডে বৃহস্পতিবার রাতে এই সরকার আঘাত করেছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement