সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নিজের নামের পাশে ‘নেত্রী’ তকমা বসাতে এখনও নারাজ । ‘দিদির প্রতিনিধি’ হয়েই থাকতে চাইছেন তিনি। আসন্ন নির্বাচনের জন্য কতটা প্রস্তুত? প্রথম বার প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আসার অভিজ্ঞতাই বা কেমন? তৃণমূল নেতা সুব্রত বক্সীর দফতর থেকে ‘পেপারওয়ার্ক’ সেরে আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে অকপট সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজনীতির ময়দানে নতুন অধ্যায়, কিন্তু বড় পর্দায় নেই কেন?
২০১৯ সালে ‘শেষ থেকে শুরু’-তে একটা আইটেম সং করেছিলাম। তার আগে ২০১৮-তে হরনাথ চক্রবর্তীর ‘বাঘ বন্দি খেলা’। মাঝখানে ২০২০ কেমন কেটেছে সেটা নিশ্চয়ই আলাদা করে বলে দিতে হবে না। ওই সময়টাকে মন থেকে মুছে ফেলতে চাই। তবে বলতে পারি কাজ থেকে বিরতি নিইনি কখনওই। কাজের বিষয়ে আমি একটু খুঁতখুঁতে। আমার কাছে মনের মতো কোনও চরিত্র আসেনি। আর যে কাজগুলো হওয়ার কথা ছিল, করোনার জন্য সেগুলোও হয়ে ওঠেনি।
অনেকেই বলছেন ছবিতে কাজ পাচ্ছেন না বলেই রাজনীতিতে পদার্পণ...
১২ মাস কাজ করে যেতে হবে, এমনটা আমি মোটেই মনে করি না। নিজেকে সময় দিতে ভালবাসি। আমি নাচ নিয়ে থাকি, শরীরচর্চা করি, গিটার শিখি। অভিনয়ের বাইরে এ সব করেও আমার ভাল সময় কাটে। তা ছাড়াও আমি বেছে কাজ করি বলেই কিন্তু দর্শকরা আমাকে ভালবাসেন। তাই কে কী বলল, সেটা নিয়ে আমি বিশেষ ভাবি না।
শোনা যাচ্ছে, হাতে কাজ কম বলেই নাকি অর্থের বিনিময়ে তৃণমূলে যোগদান করেছেন?
আমাদের কাজ মানুষের মধ্যে। ছবি করতে গেলেও অনেক মানুষকে নিয়ে করতে হয়। গ্রাম বাংলায় গিয়ে স্টেজ শোও করেছি প্রচুর মানুষের মধ্যে গিয়েই। করোনাকালে সেই ছবি বদলায়। তখন আমাদের কোনও ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর সুবিধা ছিল না। অন্যান্য পেশার মানুষরাও কম-বেশি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন কিন্তু আসতে আসতে সব ঠিক হচ্ছে। তবে কেউ যদি বলে টাকা রোজগারের জন্য রাজনীতিতে এসেছি, তা হলে সেটা সম্পূর্ণ ভুল। আমরা অভিনয় করে টাকা রোজগার করি। মানুষের জন্য কাজ করতে রাজনীতিতে এসেছি।
প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে তো এই প্রথম। চিন্তা হচ্ছে?
(কিছুটা ভেবে) সকলে তো প্রথমেই সব কিছু শিখে আসে না। আমিও ধীরে ধীরে শিখব। এত বছর পশ্চিমবঙ্গে থেকে কাজ করেছি। স্টেজ শো করি যখন সামনে ৫ হাজার দর্শক থাকেন। তাঁদের সঙ্গেও কথা বলতে হয়। সুতরাং মানুষের সঙ্গে কী ভাবে মিশতে হয়, সেটা যে একেবারেই জানি না, তা কিন্তু নয়। এ ছাড়াও সিনিয়রদের দেখে শিখব। ভুল হবে, সেটা শুধরে নেব। বাঁকুড়ার মানুষ, আমার দল ঠিক-ভুল চিনিয়ে দেবে।
বাঁকুড়ার মানুষের প্রতি বেশ আস্থা আপনার। নিজের কেন্দ্রকে কতটা চেনেন?
বাঁকুড়াতে আমি প্রচুর শো করেছি। অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বাঁকুড়াকে খুব ভাল চেনে। কিছুদিন আগেই মেজিয়ার বইমেলায় গিয়েছিলাম। ওখানকার মানুষ প্রচুর ভালবাসা দিয়েছেন আমাকে। আশা করছি, এ বার জায়গাটাকে আরও ভাল ভাবে চিনব।
কেন্দ্রের জন্য কী কাজ করবেন ভেবেছেন?
আমি সেখানকার মানুষের পাশে থাকতে চাই না। ওঁদের মধ্যে একেবারে মিশে যেতে চাই। ওখানকার মানুষের থেকে জানতে চাইব তাঁরা কী চান। নিজের বাড়ির সমস্যা যে ভাবে সমাধান করি, বাঁকুড়ার মানুষের সমস্যাও সে ভাবেই সমাধান করব। কারণ এখন ওঁরাও আমার পরিবার। আমি ইতিমধ্যেই হোমওয়ার্ক শুরু করে দিয়েছি।
হোমওয়ার্ক?
হ্যাঁ। মানে জায়গাটার বিষয়ে ভাল ভাবে জানা। ওখানে কতজন ভোটার রয়েছেন, প্রশাসনিক পদে কারা কারা রয়েছেন। কোনও জায়গার জন্য কাজ করতে হলে আগে সেই জায়গাটাকে চিনতে হবে, জানতে হবে। আমি নতুন। তাই সবটা জেনে বুঝে নিচ্ছি।
মিমি-নুসরতের থেকে সাহায্য নেবেন?
(কিছুটা হেসে) দেখুন, আমরা সকলেই কিন্তু দিদির দলের। ওঁরা আমার আগে রাজনীতিতে এসেছেন। মানুষের ভাল করতে যদি মিমি-নুসরতের সাহায্য লাগে, তা হলে কেন ওঁদের থেকে সাহায্য চাইব না!
কিন্তু আপনার অনেক সহকর্মীই বলছেন মানুষের ভাল করতে হলে রাজনীতির প্রয়োজন পড়ে না…
সকলেই যে একই ভাবে চিন্তা-ভাবনা করবেন, সেটা ধরে নেওয়া ভুল। আমি রাজনীতিতে এসেছি বলে বাকিরাও আমার মতো করে ভাববেন, তার কোনও মানে নেই। এ টুকুই বলব, মানুষের ব্যক্তিগত মতামতকে আমি সম্মান করি।
নির্বাচনের পর তারকা রাজনীতিকদের দেখা পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ ওঠে…
এ সব কথা আমি কানে তুলি না। আমি কাজ করব কি না সেটা সময় বলে দেবে। কেউ আমাকে নিয়ে কোনও খারাপ কথা বললে আমি সেটা নিয়ে ভাবি না। শুধু আমার মা, বাবা সেটা বিশ্বাস করেছেন কি না সেটাই আমার ভাবনার বিষয় হয়। বাঁকুড়ার মানুষজন আমাকে নিয়ে কী ভাবছেন, সেটাই আমার কাছে বেশি জরুরি। আমি এ ভাবেই নিজেকে পজিটিভ রাখি, আনন্দে রাখি।
গতকাল প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হওয়ার পর সবাই মিলে আনন্দ করলেন?
না। কাল কোনও আনন্দ করতে পারিনি। এত বড় দায়িত্ব পাওয়ার পর সবাই নিজেদের কাজে এদিক ওদিক ছুটেছি। কত কাগজ, কত সই, আরও নানা জিনিসপত্র। খুব শীঘ্রই বাঁকুড়া যাব। সব কিছু ঠিকঠাক হলে দিদিকে নিয়ে উৎসব করব।
তার মানে নিজের জয় নিয়ে আপনি নিশ্চিত?
নিশ্চয়ই। বাঁকুড়ার মানুষের থেকে জয় ছিনিয়ে নেব। (হেসে উঠলেন সায়ন্তিকা)