Bengali serial

জোড়হাতে মেয়ের জন্য ‘জাস্টিস’ চাইছেন উষসী! ধারাবাহিকের সংলাপ উস্কে দিচ্ছে আরজি কর?

চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “‘জাস্টিস’ মানুষ চাইবেন, কোনও ঘটনার সাপেক্ষে বা নিরপেক্ষে— এটাই সত্যি। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনার তেমন কোনও যোগ নেই।”

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:১৩
Image of  Usashi Chakraborty

গত শুক্রবারের পর্বে এই রূপেই দেখা গিয়েছে উষসী চক্রবর্তীকে। ছবি: সংগৃহীত।

পুলিশের কাছে হাতজোড় করে ‘জাস্টিস’ চাইছেন এক মা। বলছেন, “মা হিসাবে আমি আমার মেয়ের জন্য জাস্টিস চাইছি। আমার একমাত্র মেয়েকে যদি জাস্টিস দিতে না পারি, তা হলে ওর কাছে মুখ দেখাতে পারব না স্যর, আমি জাস্টিস চাই।”

Advertisement

বাস্তবে নয়, উষসী চক্রবর্তী এমন দাবি তুলছেন টেলিভিশনের পর্দায়। ধারাবাহিকের নাম ‘রোশনাই’। কাহিনি পরম্পরা বলছে, নায়ক ‘বাদশাহে’র সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল উষসী ওরফে ‘সুরঙ্গমা’র মেয়ে ‘গরিমা’র। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে বাদশাহ আর গরিমার মধ্যে এসে উপস্থিত হয়েছে সুরঙ্গমার বোনের মেয়ে ‘রোশনাই’। নায়কের মন এখন রোশনাইয়ের দিকে। তবু সে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে, কনে গরিমা। কিন্তু ছাঁদনাতলায় ঘটে গিয়েছে অঘটন। বিবাহ-আচার চলার সময়ই গরিমার শাড়িতে উল্টে যায় প্রদীপ। আগুন ধরে যায় আঁচলে। জখম মারাত্মক না হলেও আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়ে কনে। এ দিকে সমস্ত দোষ দেওয়া হয় রোশনাইকে। যদিও সে সময় কম্বল চাপা দিয়ে গরিমাকে বাঁচিয়ে ছিল সে-ই।

ধারাবাহিকের অন্দরমহলে আসলে রয়েছে বড় ষড়যন্ত্র। সুরঙ্গমারূপী উষসী নিজেই উল্টে দিয়েছিল প্রদীপ। যাতে দোষারোপ করে রোশনাইকে একেবারে সরিয়ে দেওয়া যায় বাদশাহের জীবন থেকে। নিষ্কণ্টক হয় তাঁর মেয়ের ভবিষ্যৎ।

এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু শুক্রবার রাত ১০টায় দর্শকের চোখ-কান যখন টেলিভিশনের পর্দা সংলগ্ন, তখনই লাগল চমক। জোর গলায় উষসী উচ্চারণ করলেন সেই সংলাপ, ‘মেয়ের জন্য জাস্টিস চাই।’ যদিও ধারাবাহিকের কাহিনি সম্পর্কে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁরা জানেন উষসীর চরিত্র নিতান্তই খল। তার আনা অভিযোগও সম্পূর্ণ মিথ্যা।

এ দিকে ক্যালেন্ডারের হিসাবে চার মাস পেরিয়ে গিয়েছে। গত ৯ অগস্ট ২০২৪, কলকাতার বুকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আলোচনাকক্ষ থেকে উদ্ধার হয় কর্তব্যরত চিকিৎসকের মৃতদেহ। ১৪ অগস্ট থেকে কলকাতায় শুরু হয় একের পর এক মিছিল ও আন্দোলন। যার মূল সুর ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। বিচারের দাবিতে দিনের পর দিন পথে দেখা গিয়েছে উষসী চক্রবর্তীকেও। এ বার পর্দায়ও তাঁর মুখে শোনা গেল মেয়ের জন্য বিচারের দাবি।

কেন ধারাবাহিকের সংলাপে এই ‘জাস্টিস’ শব্দটির অবতারণা? এ কি সমকালকে তুলে ধরার প্রয়াস? না কি মানুষকে আরও এক বার ধাক্কা দেওয়া? না কি বাস্তবের সঙ্গে একাত্মতা আসলে টিআরপি বৃদ্ধির কৌশল?

চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছেন, এই সংলাপ গত তিন-চার মাসে লেখা নয়। তার অনেক আগে থেকেই এই দৃশ্য ও সংলাপ রচিত হয়ে রয়েছে হিন্দি ধারাবাহিক ‘ঝনক’-এর জন্য। লীনা বলেন, “এই যে ন্যায্য বিচারের দাবি, তা অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি চাওয়া। নির্দিষ্ট প্রেক্ষিতে ধারাবাহিকের সংলাপে তা এসেছে স্বাভাবিক নিয়মেই। ‘জাস্টিস’ মানুষ চাইবেন, কোনও ঘটনার সাপেক্ষে বা নিরপেক্ষে— এ তো সব সময়ই সত্যি। গল্প উপন্যাসে বা টেলিভিশনে এই দাবি আগেও এসেছে, এখনও আসছে। ভবিষ্যতেও আসবে। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনার তেমন কোনও যোগ নেই।”

যদিও এর আগে সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘টেক্কা’ ছবির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল প্রচারে আরজি কর-কাণ্ডের আবেগ ব্যবহার করার। সে বার স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের একটি ছবির সঙ্গে পোস্টারে লেখা হয়েছিল ‘আমার মেয়েকে ফিরাবে কে?’ পোস্টার পড়তেই শুরু হয় রাজনৈতিক চাপানউতর। স্বস্তিকা নিজেও আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে পথে নেমেছেন, রাত জেগেছেন। পরে প্রযোজনা সংস্থার তরফে ওই পোস্টারের বাক্যাংশ বদলে ‘আমার অবন্তিকাকে ফেরাবে কে’ করে দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে উষসী চক্রবর্তী বলেন, “আমি তো ভাবতেই পারিনি ধারাবাহিকের সংলাপ নিয়েও আমাকে এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। এই সংলাপ যে চরিত্রের মুখে, সে আদ্যন্ত একজন খল মানুষ। মিথ্যা অভিযোগকে জোরালো করতে এই ‘জাস্টিস’-এর প্রসঙ্গ তুলে এনেছে। নিজেরই বোনা ষড়যন্ত্রের অঙ্গ এই সংলাপ। এর সঙ্গে ব্যক্তি উষসী চক্রবর্তীর কোনও সম্পর্ক নেই। বাস্তবের পৃথিবীতে আমি আজও ‘জাস্টিস’ চাইছি। আরজি কর-কাণ্ডের ন্যায় বিচার হবে এক দিন, অপেক্ষায় রয়েছি আমরা সকলে।”

Advertisement
আরও পড়ুন