Tota On Karan Johar

‘নিন্দকেরা অনেক কিছু বলবে, কান দেবে না’, কর্ণের কথাগুলোই বীজমন্ত্র আমার: টোটা রায়চৌধুরী

‘‘ছেলেমেয়েকে ভারতীয় ঘরানায় শিক্ষিত করছেন কর্ণ। বড়দের মুখোমুখি হলেই যশ-রুহি জোড়হাতে নমস্তে করে’’, বললেন টোটা।

Advertisement
টোটা রায়চৌধুরী
টোটা রায়চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৪ ২০:০৪
Image Of Karan Johar, Tota Roy Chowdhury

কর্ণকে নিয়ে অকপট টোটা। নিজস্ব চিত্র।

‘রকি অওর রানি কি প্রেম কহানি’র জন্য নির্বাচিত। নির্দিষ্ট দিনে ধর্মা প্রযোজনা সংস্থার অফিসে যাওয়ার ডাক পেয়েছি। একটু বুক ঢিপঢিপ করছিলই। মাথাও চলছিল সমান বেগে, আমি অপেক্ষায় থাকব। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর ডাক পড়বে। মুখোমুখি হয়ে এই বলব সেই বলব... ইত্যাদি প্রভৃতি। অফিসটাও দেখার মতো। ঝকঝকে, ফ্যাশনেবল। চারিদিকে রঙের ঢেউ। ঠিক যেমন কর্ণ জোহর। একটা দেওয়াল ‘হল অফ ফেম’। সব ছবির তারকা অভিনেতাদের ছবিতে সাজানো। একটা ছবির শুট হয়ে যায়! চারিদিকে চোখ বোলাতে বোলাতে হঠাৎ দেখি, করিডরে খোদ ধর্মা প্রোডাকশনের কর্ণধার দাঁড়িয়ে। পুরো ভাবনা বদলে গেল। কিছু বলে ওঠার আগেই চেনা হাসি। উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে কর্ণ বললেন, ‘‘ধর্মা প্রযোজনায় সংস্থায় স্বাগত।’’ ভয় সরে বুকের ভিতরে শিরশিরানি। নিজের ডেরা টলিউডেও কি কোনও দিন এমন অভ্যর্থনা পেয়েছি?

Advertisement

চরিত্র পছন্দ? অভিনয় করবে?

হাত ধরে নিজের ঘরে বসিয়েছেন কর্ণ। প্রশ্ন, চা-কফি-ঠান্ডা পানীয়— কী চাই? কফির কথা বলতেই বেল বাজিয়ে নির্দেশ। তার পর আমার দিকে ফিরে বললেন, ‘‘তোমার কাজ দেখেই তোমায় বেছেছি। কিন্তু কত্থক শিখতে হবে। কোনও চিট করবে না। রাজি?’’ সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় কাত করে জানালাম, পরিশ্রম করতে পিছপা নই। শুনে খুশির ঝলক। চরিত্র নিয়ে‌, চিত্রনাট্য নিয়ে আলোচনা চলল। তার পর বিনীত প্রশ্ন, ‘‘চরিত্র পছন্দ? অভিনয় করবে তো?’’ আমি হাঁ। লোকে যাঁর ছবিতে অভিনয়ের জন্য মুখিয়ে, তিনি আমায় জিজ্ঞেস করছেন? বললাম, ‘‘চরিত্র খুব পছন্দ হয়েছে। আপনার সঙ্গে অবশ্যই কাজ করব।’’

এত প্যাম্পারে তো বিগড়ে যাব!

সমস্ত প্রশিক্ষণের পর নির্দিষ্ট দিনে শুট শুরু। প্রযোজক-পরিচালক কর্ণ জোহর ময়দানে। এখনকার পরিচালকেরা সিটে বসে মাইকে সব কিছু জানান অভিনেতা, কলাকুশলীদের। কোনও দৃশ্য আবার নেওয়া হবে কিংবা শট ওকে। কর্ণ একদম বিপরীত। ঠিক হলে মাইকে বলছেন ওকে। শট এনজি হলে উঠে এসে অভিনেতার কাঁধ হাত রেখে প্রথমে প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন। তার পর জানাচ্ছেন, অভিনেতার কোনও খামতি নেই। তাঁর কিছু টেকনিক্যাল ভুল হয়েছে। তাই দৃশ্যটা আর এক বার ক্যামেরায় ধরবেন। কর্ণের এত বিনয়! দেখতে দেখতে মনে হয়েছিল, এই কারণেই তিনি এক নম্বরে। সবার মন জয় করতে গেলে নম্র হতে হয়। ওঁর সংস্থার কর্মীরা ওঁকে আত্মীয় মনে করেন! শুধু এই? প্রযোজনা সংস্থার প্রত্যেকে অভিনেতাদের কী প্রচণ্ড প্যাম্পার করেন! সকালে সেটে পা দেওয়ার পর থেকে, কী খাবেন, কোথাকার খাবার খাবেন, কোথায় বসবেন— আদরের ঠ্যালায় অস্থির। শেষে কর্ণকে মুখ ফুটে বলেই ফেলেছিলাম, এত প্রশ্রয় দিলে তো অন্য কোথাও কাজ করতেই পারব না! শুনে হেসে ফেলে বলেছিলেন, ‘‘সেটাই তো চাই। আমার অভিনেতারা কঠোর পরিশ্রমের পরেও ধর্মার সঙ্গে কাজ করে খুশি থাকবেন। ’’

বাবা করণ...

‘রকি অওর রানি কি প্রেম কহানি’ করতে গিয়ে বাবা কর্ণ জোহরকেও দেখেছি। সেটে বার কয়েক ওঁর ছেলেমেয়ে যশ-রুহি এসেছিল। প্রত্যেক বার সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘নমস্তে করো’’। ওরাও সঙ্গে সঙ্গে হাত জোড় করে ঝুঁকে নমস্কার জানিয়েছে। বুঝলাম, বাইরে ট্র্যাক স্যুটে যতই ঝকঝকে হোন, কর্ণ অন্তরে সনাতনী ভাবধারায় বিশ্বাসী। তার প্রতিফলন সন্তানদের আচরণে। খাঁটি ভারতীয় ঘরানায় ছেলেমেয়েদের মানুষ করছেন। যার ছাপ তাঁর প্রত্যেক ছবিতে।

কর্ণ বনাম কটাক্ষ

ওঁর মতো কটাক্ষের শিকার খুব কম জনেই হন। কর্ণের সকাল শুরু হয় ট্রোল দিয়ে। ওঁর লিঙ্গপরিচয় নিয়ে তো আছেই। মা-বাবা, ছেলেমেয়ে কেউ বাদ যান না! তার পরেও দিনের শেষে হাসিমুখে কাজ করে যাচ্ছেন. কোনও রাগ নেই। ক্ষোভ নেই। কারও সঙ্গে খারাপ আচরণও নেই। কী করে পারেন? জানতে চেয়েছিলাম। সাফ বলেছেন, ‘‘নিন্দকেরা অনেক কিছু বলবে। তোমায় টেনে নামানোর চেষ্টা করবে। কান দেবে না, ইগনোর করো। তুমিও আমার মতোই দিনের শেষে ইতিবাচক থাকবে।’’

কর্ণের এই কথাই এখন আমার বীজমন্ত্র।

আরও পড়ুন
Advertisement