দর্শকাসন আবার ভর্তি হবে, আশায় বাংলা ছবির কলাকুশলীরা। ছবি: সংগৃহীত
সিনেমা হলের ১০০ শতাংশ টিকিটই এ বার বিক্রি করা যাবে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি টলি-পাড়া। কোভিডের আতঙ্ক এখনও পুরোপুরি যায়নি। তার মধ্যেও সুদিন ফেরার অপেক্ষায় সিনেমার সঙ্গে যুক্ত কলাকুশলীরা। কী বলছেন ওঁরা?
সুদীপ্তা চক্রবর্তী (অভিনেত্রী): এটা তো খুবই ভাল খবর। কিন্তু আমি তাতে ১০০ শতাংশ খুশি— এমনটা বলতে পারছি না। আড়াই ঘণ্টা সকলে একটা ঘরের মধ্যে বসে থাকবেন, একই বাতাস সেখানে ঘুরবে ফিরবে। তাতে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়তে পারে। অন্য সব কিছুই খুলে গিয়েছে জানি, তবু ভয় হয়। তবে এক কথায় বলতে গেলে, ইন্ডাস্ট্রির সকলের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্তে খুব খুশি হয়েছি।
ঋদ্ধি সেন (অভিনেতা): বাজার খুলে গিয়েছে। বিমান চলাচল করছে। এ সব কোনও জায়গাতেই দূরত্ব মেনে চলার ব্যবস্থা এখন আর নেই। তা হলে সিনেমা হলে নয় কেন? সিনেমা তো শুধু বিনোদন নয়, অনেকের রোজগারের একমাত্র মাধ্যমও বটে। টিকার ভরসা যখন এসেছে, তখন দর্শকাসনের সব টিকিট বিক্রি করার সিদ্ধান্ত একদম ঠিক।
অরিত্র মুখোপাধ্যায় (পরিচালক): প্রথম ছবিটা ১২ দিন চলার পরেই লকডাউনের কারণে সব হল বন্ধ হয়ে গেল। তাই এই সিদ্ধান্তে আমার চেয়ে খুশি আর কে-ই বা হবে! দর্শকাসনে ছেড়ে ছেড়ে বসতে হবে বলে, অনেকেই একসঙ্গে সিনেমা দেখতে যেতেন না। এ বার সেই সমস্যা মিটবে।
অঙ্কুশ হাজরা (অভিনেতা): সামনেই আমার ছবি মুক্তি পাচ্ছে। আমি তাই স্বাভাবিক ভাবেই খুশি। একটা করে সিট ছেড়ে বসার ফলে দু’জনে একসঙ্গে সিনেমা দেখতে যেতেন না। মাঝের ফাঁকা বসার জায়গাটা নিয়ে আতঙ্কে থাকতেন অনেকেই। নতুন সিদ্ধান্তে পারিবারিক ছবির দর্শকেরা আবার হল-মুখী হবেন।
অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় (পরিচালক): সামনেই আমার ছবি মুক্তি পাচ্ছে। তাই জন্য যেন আনন্দটা দ্বিগুণ। সবাই তো সব জায়গায় ভিড় করছেই। যদি প্রেক্ষাগৃহে সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে মানুষ ছবি দেখতে যেতে পারেন, তাতে ক্ষতি কী? এই কঠিন সময়টা পার করার ক্ষেত্রে বিনোদনের ভূমিকা তো ভুলে গেলে চলবে না। কিন্তু আমার বিশ্বাস, ২০২০ সালটা মানুষ ভোলেননি। তাই তাঁরা সতর্ক থাকবেন। এই ছাড়পত্রকে আমি স্বাভাবিকত্বের পথে আর এক ধাপ হিসেবে দেখছি।
ঋত্বিক চক্রবর্তী (অভিনেতা): অভিনেতা হিসেবে এটি খুশির খবর আমার কাছে! এক জন নাগরিক হিসেবে জিজ্ঞেস করলে বলব, করোনার দাপট তো একটু কমেছে বটে। আর সেই আশঙ্কা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষ এখন বাইরে বেরোচ্ছেন। নানা জায়গায় জড়ো হচ্ছেন। ছবি দেখতে গেলে বরং শিল্পটা একটু নিঃশ্বাস পায়। মানুষের রোজগার বাড়ে। তবে দেখতে হবে, দর্শক আসছেন কি আসছেন না।
সায়নী ঘোষ (অভিনেত্রী): ভীষণ খুশি হয়েছি এই সিদ্ধান্তে। তবে একটু ভয়ও করছে। দেশের মানুষের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, তাঁরা যেন সতর্কতা অবলম্বন করেন। তবে হ্যাঁ, চলচ্চিত্র শিল্পের অঢেল ক্ষতি হয়েছে। মানুষ কাজ হারিয়েছেন। সেই জায়গা থেকে এটা স্বস্তির খবর। বসার আসনের নিয়ম-কানুনের কথা ভাবলে, রেস্তরাঁর চাইতে প্রেক্ষাগৃহ নিরাপদ।
ইন্দ্রাশিস রায় (অভিনেতা): কয়েক হাজার মানুষের জীবিকা জড়িয়ে রয়েছে এই শিল্পের সঙ্গে। আমার বিশ্বাস, দর্শক ফের প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখতে আসবেন। সিনেমা আবার পুরনো জায়গায় ফিরবে।
মানালি দে (অভিনেত্রী): দর্শক আবার সিনেমা হলে গিয়ে বাংলা ছবি দেখবেন, এটা তো খুব ভাল কথা। সব কিছুই আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে, তা হলে আর সিনেমা হল বাদ থাকবে কেন? স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ফলে সিনেমা হল খুলে গেলেও সেখানে সকলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, এটাই আশা করা যায়।
ইশা সাহা (অভিনেত্রী): মুখ্যমন্ত্রী আগেই বলেছিলেন। এ বার কেন্দ্রের অনুমতিও এসে গেল। আমরা যারা এই শিল্পমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত, একটা বছর তাদের খুব কষ্ট করে চালাতে হয়েছে। আশা করছি, এ বার ভাল সময় আসবে।
মৈনাক ভৌমিক (পরিচালক): আমার কাছে মানুষের নিরাপত্তা, তাঁদের সুস্থ থাকাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পরিচালক হিসেবে এই সিদ্ধান্তে খুব খুশি হয়েছি। কিন্তু কোভিড এখনও চলে যায়নি। তাই মানুষকে আরও বেশি করে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, দর্শকাসন ১০০ শতাংশ ভর্তি মানেই সামাজিক দূরত্ব সে ভাবে আর মানা যাবে না। ফলে সতর্ক থাকতেই হবে।