‘বিনোদিনী অপেরা’য় শরীরে-মনে নিজেকে নিঃশেষ করে দিয়েছেন সুদীপ্তা, তা বুঝতে পেরেই বিশেষ সতর্কবার্তা আগন্তুকের। ছবি: ফেসবুক।
মধ্যরাতে চমক। ফোনে যাঁর মেসেজ ঢুকল তাঁকে একেবারেই এমন সময়ে প্রত্যাশা করেননি সুদীপ্তা চক্রবর্তী। এ যে মুনমুন সেন! উচ্চকিত সাধুবাদে ভরিয়ে দিয়েছেন তিনি কনিষ্ঠ অভিনেত্রীকে। তবে সেখানেই কি থামলেন সুচিত্রা-কন্যা?
গত ৪ এপ্রিল অ্যাকাডেমি মঞ্চে ‘বিনোদিনী অপেরা’ দেখার পর থেকেই তোলপাড় দর্শক-হৃদয়। ঊনবিংশ শতকের মহিলা নাট্যব্যক্তিত্ব বিনোদিনী দাসীর চরিত্রকে রক্ত-মাংসে জীবন্ত করে তুলেছেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। শুধু তা-ই নয়, বিনোদিনী চরিত্রের যন্ত্রণা, আক্ষেপ এ যুগের সমাজেও চারিয়ে দিতে পেরেছেন সুদীপ্তা তাঁর অভিনয়গুণে। বহু তারকার ভিড়ে অভিনেত্রী মুনমুন সেনও দেখতে এসেছিলেন সেই প্রযোজনা। সুদীপ্তাকে মধ্যরাতে মেসেজ করেন তিনিই। তার পর স্বপ্নের মতো কিছু অভিজ্ঞতা, যা সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নিলেন সুদীপ্তা।
গত সপ্তাহে ছিল মুনমুনের জন্মদিন। তাঁকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি সুদীপ্তা অনুরোধ করেছিলেন মুনমুনকে, যদি তিনি ‘বিনোদিনী অপেরা’ দেখতে আসেন। মুনমুন তাতে রাজি হন। নিজের খরচে চারটি টিকিট কাটেন। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে আসেন নাটকটি দেখতে।
রাতে সুদীপ্তাকে টেক্সট মেসেজ করে জানান অভিনেত্রী, তিনি খুবই উপভোগ করেছেন নাটকের মঞ্চায়ন। সকলের পারফরম্যান্সই তাঁর ভাল লেগেছে। দর্শকের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়াও মুনমুনের চোখ এড়িয়ে যায়নি।
তবে ‘বিনোদিনী’র ধকল তো আর কম যায়নি! এই নাটকে শরীরে-মনে নিজেকে নিঃশেষ করে দিয়েছেন সুদীপ্তা, তা বুঝতে পেরেই বিশেষ সতর্কবার্তা মুনমুনের তরফে। সুদীপ্তাকে গরম জলে স্নান করে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এবং সকালে গার্গল করারও পরামর্শ দেন মুনমুন। এর পরেই ছিল অন্য চমক। সুদীপ্তার কথায়, ‘‘রাত ১২টা নাগাদ উনি লেখেন, আমায় কিছু উপহার দিতে চান, সে জন্য আমার বাড়ির ঠিকানা জানতে চান। আমি ঠিকানা পাঠিয়ে দিই। বলি, কিছু দিনের মধ্যেই বরং আমিই ওঁর বাড়িতে গিয়ে উপহার নিয়ে আসব। শুনে খুশি হন তিনি।’’
পরের দিন, অর্থাৎ, ৫ তারিখ বিকেলে সুদীপ্তা কোনও কাজে বাড়ির বাইরে যান। ঘণ্টাখানেক বাদে ফিরে এসে দেখেন, দারোয়ান একটি ব্যাগ নিয়ে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন। ভিতরে দুটি চমৎকার শাড়ি! উপহারগুলি কে দিয়ে গেলেন জানতে চাওয়ায় বাড়ির দারোয়ান অভিনেত্রীকে বলেন, ‘‘এক জন ম্যাডাম এসেছিলেন, খুব চিনি। নামটা মনে করতে পারছি না। বোধহয় ফোন করছিলেন কাউকে। অনেক ক্ষণ গাড়িতে বসেছিলেন। তার পর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি বাড়ি আছেন কি না।’’
সুদীপ্তা তার একটু আগেই বেরিয়ে গিয়েছেন শুনে তিনি ব্যাগটি দারোয়ানের হাতে দিয়ে সুদীপ্তাকে দেওয়ার জন্য বলে যান। জানিয়ে যান, আর এক দিন আসবেন তিনি। বিস্মিত সুদীপ্তা জানতে চান, ‘‘আমাদের বাড়িতে আগে কখনও আসতে দেখেছ ওঁকে?’’ দারোয়ান জানান, বাড়িতে না দেখলেও সিনেমায় দেখেছেন, খুব চেনা মুখ।
সুদীপ্তা আন্দাজ করতে পারেন উপহার প্রেরক কে। দেখেন তিন বার হোয়াটসঅ্যাপে তাঁকে ফোন করেছিলেন অভিনেত্রী মুনমুন সেন। দিদি বিদীপ্তার সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলছিলেন বলে সুদীপ্তা বুঝতে পারেননি। ও দিকে মুনমুন লিখেছেন, ‘‘সদ্য তোমার বাড়ি থেকে বেরোলাম। কী সুন্দর জায়গায় তুমি থাকো! পরে আবার আসব।’’ যদি সুদীপ্তা উপহারটি বদলাতে চান, সেই কারণে দোকানের নাম-ঠিকানাও দিয়ে রেখেছেন মুনমুন।
সুদীপ্তা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান। একই সঙ্গে তিনি বিড়ম্বিত, অনুতপ্ত এবং খুশি। এই উপহার তাঁর কাছে তথাকথিত পুরস্কারের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান বলে জানান অভিনেত্রী। একটি মঞ্চাভিনয় তাঁকে এত ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়েছে দেখে আপ্লুত সুদীপ্তা। মুনমুনের এই উপহার যে তাঁর কাছে বিরাট পাওয়া, জানাতে ভোলেননি তিনি।