আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে মনখোলা আড্ডায় অরুণিমা ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
অরুণিমা: ধন্যবাদ। ‘মায়াকুমারী’র হাত ধরে বছরের শুরুটা ভালই হতে চলেছে। এর পর ‘কীর্তন’ ছবিটা মুক্তি পাবে। তার পর দেখা যাক, বাকি বছরটা কী রকম কাটে (হাসি)।
প্রশ্ন: চরিত্রের দিক থেকে ‘মায়াকুমারী’ কি এখনও পর্যন্ত আপনার কেরিয়ারের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছবি?
অরুণিমা: রুনি (ছবিতে অরুণিমার চরিত্র) এই সময়ের মেয়ে। তার পর ওকে মায়াকুমারীর বায়োপিকে অভিনয় করতে হচ্ছে। তাই দুটো সময়কাল এবং কথ্য ভাষাকে মাথায় রেখে অভিনয় করাটা একটু কঠিন। কিন্তু সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং বলব না। কারণ, এর আগে ‘রংবেরঙের কড়ি’তে আদিবাসী চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম।
প্রশ্ন: বিগত কয়েক বছরের দিকে তাকিয়ে জানতে ইচ্ছে করছে, আপনি কি কাজের সংখ্যা কমিয়েছেন?
অরুণিমা: মাঝে তো করোনার জন্য দু’বছর কাজই করিনি। আমার বাবা ডাক্তার। আমার অ্যাজ়মা রয়েছে। স্টেরয়েড ওষুধ খেতে হয়। তাই বাড়ি থেকেও খুব একটা অনুমতি পাইনি। অনুরাগীদের মধ্যেও অনেকে বিষয়টা জানেন। তার পর যে যে কাজ করলাম, সেগুলো এখন ধীরে ধীরে মুক্তি পাচ্ছে। এই বছর একটু বেশি কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে।
প্রশ্ন: তার মানে কাজের প্রস্তাবও তো ফেরাতে হয়েছে?
অরুণিমা: প্রথম লকডাউনের পরেই একটা ছবির অফার ছিল। ওটিটিতে একটা হিন্দি কাজের অফার ছিল। কিন্তু বাবা রাজি হলেন না। দু’বছর বাড়িতেই বসেছিলাম। কিন্তু এই বিষয়টা নিয়ে আমার কোনও অনুশোচনা নেই।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই রয়েছেন যাঁদের হাতে কাজ না থাকলেও তাঁরা নিজেদের ব্যস্ততা জাহির করতে পিছপা হন না। সেখানে ‘বাড়িতে বসেছিলাম’ বলার মধ্যে…
অরুণিমা: (থামিয়ে দিয়ে) আমি এ রকমই। সোজা কথা সোজা ভাবেই বলতে পছন্দ করি। আমার কাছের মানুষরা সেটা জানেন। তা ছাড়া আমার তো কিছু হারানোর নেই!
প্রশ্ন: বলা হয়, টলিপাড়ার প্রতি আপনার নাকি চাপা ক্ষোভ রয়েছে। এটা কি সত্যি?
অরুণিমা: (একটু ভেবে) অভিমান বলা যেতে পারে। আসলে এখানে কোনও ছবির পর অভিনেতার কাছে একই শেডের চরিত্রের প্রস্তাব আসতে শুরু করে। ‘লেডি চ্যাটার্জি’ ওয়েব সিরিজ়ের শুটিংয়ের পর আমি আরও দুটো গোয়েন্দা চরিত্রের প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু করিনি। কারণ একই রকম চরিত্র করতে চাই না। একটা ঘটনা বলি?
প্রশ্ন: অবশ্যই।
অরুণিমা: ওটিটিতে একটা কাজ নিয়ে কথা চলছে। আমাকে একটা পজ়িটিভ চরিত্র অফার করা হয়েছিল। কিন্তু আমি অনেক ভেবে নেগেটিভ চরিত্রটা করব বলে দাবি জানালাম। ওরা তো শুনে অবাক। ‘ভাল বউ’ এর চরিত্র করে ক্লান্ত! এ বারে একটু নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করতে চাই।
প্রশ্ন: ছোট পর্দায় কাজের বিষয়ে আপনার কী অভিমত?
অরুণিমা: প্রস্তাব তো আসতেই থাকে। কিছু দিন আগেও প্রস্তুত ছিলাম। প্রযোজক, চ্যানেল— সব পাকা কথা সারা। কিন্তু শেষে প্রোজেক্টটা খুব অদ্ভুত ভাবে আর হল না। সবটাই ভাগ্য।
প্রশ্ন: এই বছর সিরিয়ালের প্রস্তাব এলে কী করবেন?
অরুণিমা: এক সময় টিভির অন্যতম বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া নায়িকা হিসেবে ছোট পর্দা ছেড়েছিলাম। কারণ একের পর এক ছবি হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। টিভি আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। তা ছাড়া এখন মেগাতে অনেকটা সময় দিতে হয়। ভবিষ্যতে ভাল প্রস্তাব পেলে ছোট পর্দায় কাজের খুবই ইচ্ছা রয়েছে। আর নন ফিকশন হলে এখনই রাজি (হাসি)।
প্রশ্ন: আপনি কি এখন সিঙ্গল?
অরুণিমা: লং ডিসট্যান্স সম্পর্কে ছিলাম। গত অক্টোবরে ব্রেক আপ হয়েছে। আপাতত সিঙ্গল। তবে প্রেমের প্রস্তাব আসতেই থাকে।
প্রশ্ন: বিয়ে করবেন না?
অরুণিমা: (প্রচণ্ড হেসে) ইচ্ছে তো আছে। কিন্তু যাদের পছন্দ হয়, সবাই কলকাতার বাইরের ছেলে। আর আমি পরিবার ও কলকাতাকে ছেড়ে থাকতে পারব না। বাইরের ছেলেকে বিয়ে করে দু’দিন পর ‘আমি তো একের পর এক স্যাক্রিফাইস করছি, তুমি তো কিছুই করলে না’— এই ধরনের কথা শুনতে রাজি নই। কলকাতায় থাকে, এমন কোনও ভাল ছেলের সঙ্গেই বিয়ে করতে চাই। কিন্তু ওই যে বললাম, সবটাই কপালের লিখন।
প্রশ্ন: বাংলা ছবিতে তরুণ প্রজন্মের অভিনেত্রীরা কি অনেকটা এগিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে হয়?
অরুণিমা: সবটাই ভাগ্য। আমিও প্রথম ছবির পর অনেকগুলো প্রস্তাব পেয়েছিলাম। আসলে নিজের জায়গাটা ধরে রাখতে হবে। আবির (চট্টোপাধ্যায়) যেমন পর পর গোয়েন্দা চরিত্র করলেও তার মধ্যে নতুনত্ব রাখার চেষ্টা করে।
প্রশ্ন: এখন তো ইন্ডাস্ট্রির কাজের ধরন বদলেছে। কিন্তু কাজ পাওয়ার জন্য কি এখনও কোনও ‘গোষ্ঠী’তে থাকা বা ‘পি আর’ করাটা জরুরি?
অরুণিমা: অবশ্যই। এর মধ্যে কোনও দোষ নেই। কারণ আমার কাছে কোনও ভাল জিনিস থাকলে তো সেটা আমি আমার বন্ধুর সঙ্গেই আগে ভাগ করে নেব। সেটাই তো স্বাভাবিক। সেখানে আমার ‘পি আর’ জঘন্য! শেষ কবে ইন্ডাস্ট্রির কোনও পার্টিতে গিয়েছি, মনে পড়ে না। ভাল কাজ করলে সুযোগ নিশ্চয়ই আসে। কাজ পাওয়ার জন্য কাউকে তেল দিতে পারব না। এত বছরে যখন পারিনি, তখন আগামী দিনেও আমার দ্বারা সেটা হবে না। আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি। হওয়ার থাকলে হবে— এটাই আমার নীতি।