বাংলা ছবির বাজারকে আরও বড় করতে দেব এবং জিৎ কি ভবিষ্যতে হাত মেলাবেন? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
‘পাঠান’ ঝড় থামতে এখনও সময় লাগবে। ছবি নিয়ে আলোচনার একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ছবিতে শাহরুখ খানের সঙ্গে সলমন খানের উপস্থিতি। অতিমারির পর ‘পাঠান’-এর হাত ধরে বলিউডের মরা গাঙে ফের জোয়ার এসেছে। একই সঙ্গে সুপারস্টারদের একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর মতো বিষয়টাও প্রশংসিত হচ্ছে।
বাংলায় ফেরা যাক। অতিমারির পর টলিউডেও ছবির ব্যবসায় ঘোর মন্দা। কিছু ছবি স্টারকাস্ট বা মৌলিক বিষয় ভাবনার জোরে ব্যবসা করেছে। কিন্তু তা কি ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে যথেষ্ট? বাংলা ছবির বাজার বড় করতে সুপারস্টারদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সেখানে নতুন প্রজন্মের মধ্যে দেব ও জিৎকে ঘিরে আলাদা উন্মাদনা রয়েছে। মূলত বাণিজ্যিক ছবি থেকে উত্থান হলেও, এখন অবশ্য তাঁদের ছবির ঘরানা দুই মেরুতে। দু’জনেই ছবি প্রযোজনায় হাত পাকিয়েছেন। শোনা যায়, দু’জনের মধ্যে প্রতিযোগিতার পাশাপাশি ব্যক্তিত্ব সংঘাত রয়েছে। কিন্তু সব কিছু ভুলে তাঁরা এক ছবিতে জুটি বাঁধলে কি ইন্ডাস্ট্রির মঙ্গল? এই উদ্যোগে কী কী সমস্যা রয়েছে? টলিপাড়ার পরিচালকদের কাছে প্রশ্ন রেখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন।
শেষ বার দেব ও জিৎ— দুই সুপারস্টারকে দর্শক দেখেছিলেন ‘দুই পৃথিবী’ ছবিতে। নেপথ্যে ছিলেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। ১২ বছর অতিক্রান্ত। আরও এক বার এ রকম উদ্যোগ কেন নেওয়া হল না? রাজের মতে, ‘‘যে যা-ই বলুক না কেন, আমি ওদের দু’জনকেই ব্যক্তিগত ভাবে চিনি। অত্যন্ত ভাল মানুষ। এখনও ছবিটা নিয়ে আলোচনা হয়। তার পিছনে ওদের বড় অবদান আছে।’’
রাজও ও মনে করছেন দেব-জিতের একসঙ্গে কাজ করা উচিত। তবে সেখানে ছবির গল্পটাও হতে হবে জবরদস্ত। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলা ইন্ডাস্ট্রি খুবই ছোট। অনেক বাধা পেরিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। তারকার সংখ্যাও কম। কিন্তু নতুন প্রজন্মের মধ্যে দেব ও জিতের প্রচুর অনুরাগী। সেখানে আমারও মনে হয় ওদের একসঙ্গে হাত মেলানো উচিত।’’ দেব ও জিতের সঙ্গে একক ভাবেও ছবিতে কাজ করেছেন রাজ। বলছিলেন, ‘‘আমি বরাবরই বলেছি যে কোনও ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ছবির প্রযোজন। কারণ মানুষ বিনোদন পছন্দ করেন। আবার অন্য ধারার ছবিও প্রযোজন। আমার পরিচিতিও তো বাণিজ্যিক ছবির দৌলতেই।’’ এই ধরনের ছবি তৈরির ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের সমর্থন চাইছেন রাজ। তাঁর কথায়, ‘‘বাণিজ্যিক ছবিকে সেই সময় সংবাদমাধ্যম প্রচন্ড সমালোচনা করেছে। হয়তো সেই সময় আমরা রিমেক বেশি করেছি। মানছি কিছু মৌলিক গল্প নিয়েও কাজ করা উচিত ছিল। কিন্তু আজকে তো বলিউডে একের পর এক রিমেক হচ্ছে।’’ ‘প্রলয়’-এর পরিচালক বিশ্বাস করেন, ‘পাঠান’ ভাল না খারাপ, সেটাই বিবেচ্য হওয়া উচিত। ছবির খুঁত বার করাটা কাম্য নয়।
ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গেও দেব-জিৎকে নিয়ে একটা ছবির কথা হয়েছিল রাজের। কিন্তু এখনও তা ফলপ্রসূ হয়নি। যে পরিচালকই এই জুটিকে নিয়ে কাজ করুন, রাজের কথায়, ‘‘ওরা একসঙ্গে ছবি করলে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হব। প্রথম দিন থেকে আমি পাশে থাকব।’’
এই মুহূর্তে টলিপাড়ায় ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের রিপোর্ট কার্ড নিয়ে চর্চা রয়েছে। পর পর সুপারহিট ছবি। তার মধ্যে রয়েছে দেব অভিনীত ‘গোলন্দাজ’। তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘বুঝতে হবে আজকে একটা স্পাইভার্স তৈরির প্রেক্ষাপট তৈরির আগে যশরাজ একক ভাবে তিনটে ছবি তৈরি করেছে। সেটা করতে ১২ বছর সময় নিয়েছে। মার্ভেলও ঠিক একই কাজ করেছে।’’
দেব-জিতের একসঙ্গে কাজ নিয়ে আশাবাদী ধ্রুব অবশ্য কোনও চমকে বিশ্বাসী নন। সোজাসাপটা বললেন, ‘‘শুধু চমকের জন্য দুই তারকাকে এক ছাদের তলায় আনা অপ্রয়োজনীয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যে পরিচালকই এগিয়ে আসুন না কেন, বিষয়ভাবনা যদি দু’জনকে চায় এবং ছবিতে তাঁদের একশো শতাংশ জাস্টিফাই করা যায় তা হলেই ছবিটা সফল হবে।’’ তবে সুপারস্টার নিয়ে ছবি করলেই যে তাঁদের অনুরাগীরা প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করবেন, তা মানতে নারাজ ‘সোনাদা’ সিরিজ়ের পরিচালক। ধ্রুব বলছেন, ‘‘বাংলা ছবি এখন এতটাই বদলে গিয়েছে, দর্শক চাইছেন একটা ভাল ছবি। ফলে দর্শক আসবেন। সেখানে প্রিয় তারকা থাকলে তাঁদের অনুরাগীরাও ভিড় করবেন।’’
দেব-জিৎকে নিয়ে ছবির ক্ষেত্রে কিছুটা ধ্রুবর পথেই হাঁটতে চাইছেন পরিচালক অভিজিৎ সেন। ‘টনিক’ এর পর ‘প্রজাপতি’— দেবকে নিয়ে পরিচালকের দুটো ছবিই ব্লকবাস্টার। অভিজিৎ বললেন, ‘‘মাথায় রাখতে হবে সলমন ক্যামিয়ো করেছেন। ‘সেলফি’র প্রচারে অক্ষয়ের সঙ্গে সলমনকে দেখা যাচ্ছে। আমার কাছে এই পারস্পরিক সাহায্যটা অনেক বেশি করে গুরুত্বপূর্ণ।’’ দেব-প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে ছবি করেছেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে অভিজিৎ বললেন,‘‘ তার মানে একসঙ্গে সুপারস্টারদের বড় পর্দায় দেখার একটা আকর্ষণ দর্শকের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু শাহরুখ-সলমন কি প্রথম থেকে একসঙ্গে রয়েছেন? অর্থাৎ আগে চাই ভাল গল্প। গল্পই খুঁজে নেবে তার পছন্দের অভিনেতাকে।’’
গত বছর ‘কাছের মানুষ’ ছবিতে প্রসেনজিৎ ও দেবকে একসঙ্গে দর্শক দেখেছেন। ছবির পরিচালক পথিকৃৎ বসুর কাছে দেব ও জিতের আবার একসঙ্গে ছবি করার ধারণাটি উত্তেজক। কিন্তু তাঁর কথায়, ‘‘এটা খুবই সময়সাপেক্ষ বিষয়। কারণ দু’জন সুপারস্টারকে সমান গুরুত্ব দিয়ে চিত্রনাট্য তৈরিটা খুবই কঠিন কাজ।’’ সাম্প্রতিক অতীতে দেব ও জিতের ছবি নির্বাচনের বিষয়টাও এখানে বড় ভূমিকা পালন করছে বলেই মনে করছেন পথিকৃৎ। তাঁর কথায়, ‘‘দু’জনে কিন্তু একই ঘরানার ছবি করছেন না। তাই সেটা মাথায় রেখে ওঁদের এক ছাদের নীচে আনাটাও সময়সাপেক্ষ, তবে অসম্ভব নয়।’’ তবে এর বিপরীতে অন্য দিকটাও ভাবাচ্ছে পথিকৃৎকে। তাঁর কথায়, ‘‘একটা ছবি সুপারহিট হওয়াটা কিন্তু কোনও সমাধান নয়। আমাদের আরও নতুন নতুন উদ্যোগ নিতে হবে।’’