RG Kar Case Verdict

‘সঞ্জয় একা দোষী নন’, দলীয় লাইনের বিপরীত সুর তৃণমূলের অভিনেতা-বিধায়ক সোহমের গলায়

“আমার ব্যক্তিগত মত, হয়তো শারীরিক অত্যাচার সঞ্জয়ই করেছিলেন। কিন্তু ওই রাতে তো শুধুই সঞ্জয় আর নির্যাতিতা বোনটি ছিলেন না! কোনও আওয়াজ কি হয়নি?” প্রশ্ন তুললেন তৃণমূল বিধায়ক।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:১৩
আরজি কর রায় নিয়ে বিস্ফোরক সোহম চক্রবর্তী।

আরজি কর রায় নিয়ে বিস্ফোরক সোহম চক্রবর্তী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আরজি কর-কাণ্ডে অপরাধী সঞ্জয়ের শাস্তি ঘোষণা হল সোমবার। নিম্ন আদালতে আমৃত্যু কারাদণ্ডের ঘোষণা করেন বিচারক অনির্বাণ দাস। এক্স হ্যান্ডলে আরজি করের ঘটনাকে ‘জঘন্য অপরাধ’ বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির দাবিতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হবে রাজ্য সরকার। নিম্ন আদালতের শাস্তি ঘোষণার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মালদহে দাঁড়িয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, এখনও দোষীর ফাঁসির দাবিতে তিনি অনড়।

Advertisement

মমতা লিখেছেন, ‘‘আরজি করে চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনাকে আদালত বিরলের মধ্যে বিরলতম বলল না। এটা দেখে আমি স্তম্ভিত। আমি মনে করি, এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা, যাতে ফাঁসির সাজাই হওয়া উচিত। কী ভাবে বিচার শেষে একে বিরলের মধ্যে বিরলতম বলে মনে করা হল না? ’’ এর পরেই তিনি এই মামলাকে ‘সংবেদনশীল’ জানিয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি তুলেছেন।

তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ফাঁসি না হওয়ায় দোষ চাপিয়েছেন সিবিআইয়ের ঘাড়ে। তিনি বলেছেন, “গুড়াপ, ফরাক্কা, জয়নগরের ঘটনায় রাজ্য পুলিশ তদন্ত করেছিল। সেগুলির সব ক’টিতে ফাঁসির সাজা হয়েছে। সিবিআই কেন পারল না, সেই ব্যাখ্যা তারাই দিতে পারবে।” কলকাতা পুলিশ তদন্ত চালালে এত দিনে ফাঁসির শাস্তি হয়ে যেত বলেও মত কুণালের। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার ছিলেন আমতলায় তাঁর সাংসদ কার্যালয়ে। সেখানেও তিনি ঘনিষ্ঠবৃত্তে বলেছেন, ‘‘সঞ্জয়কে জেলের মধ্যে খাইয়ে-পরিয়ে জনগণের টাকা খরচ করার কোনও মানেই হয় না।’’

তৃণমূল নেতৃত্ব গোড়া থেকেই বলে এসেছেন, ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় একমাত্র সঞ্জয়ই জড়িত। যাঁকে ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। তৃণমূলের এ-ও বক্তব্য, গত ১৫৭ দিন তদন্ত করেও সিবিআই নতুন কিছু বার করতে পারেনি। সেখানে উল্টো সুর চণ্ডীপুরের তৃণমূল বিধায়ক সোহম চক্রবর্তীর। দলীয় লাইনের বিরুদ্ধে মতামত দিলেন সোহম চক্রবর্তী। বরং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারেরা আরজি কর মামলায় শাস্তি ঘোষণা নিয়ে যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, চণ্ডীপুরের তৃণমূল বিধায়ক সোহমের বক্তব্যের সঙ্গে তার মিল রয়েছে।

ফাঁসির আদেশের পরিবর্তে কেন কারাদণ্ড, তা নিয়ে নানা মত রয়েছে বিভিন্ন মহলে। মিশ্র প্রতিক্রিয়া টলিপাড়ার অন্দরেও। সঞ্জয়ের আমৃত্যু কারাদণ্ড নিয়ে অখুশি সোহম। কী মত তাঁর? জানালেন আনন্দবাজার অনলাইনকে।

কোনও রাখঢাক না রেখেই ক্ষোভ উগরে দিলেন বিধায়ক। বললেন, “আদালতের এই রায় আমরা মেনে নিতে বাধ্য। কিন্তু আমার মন ভরেনি। বাকি অনেকের মতো আমিও চেয়েছিলাম, অপরাধীর চরমতম শাস্তি হোক। ফাঁসি-ই চেয়েছিলাম। সেটা হল না।” তার পরেই যেন নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছেন, “মহামান্য আদালত যেটা ঠিক মনে করেছে সেটাই করেছে। তার পরেও বলব, কোথাও যেন বড় ফাঁক থেকে গেল। যাঁরা এই ধরনের ঘৃণ্য মানসিকতার, তাঁদের যেন সুযোগ করে দিল এই শাস্তি।” সোহম এখানেই থামেননি। তাঁর আশঙ্কা, “যেন উস্কানি থেকেই গেল। তাঁরা হয়তো ভাবতেও পারেন, আমি তো করে পার পেয়ে যাচ্ছি! বাকি জীবনটা না হয় হাজতেই কাটিয়ে দেব।”

এই শাস্তি আগামী দিনে অপরাধীদের মনে ভয় ধরাবে না, এই ধরনের অপরাধ করার আগে দ্বিতীয় বার ভাবাবে না— এমনই মত প্রযোজক-অভিনেতার। তিনি মনে করেন, এই শাস্তি আগামীতে দৃষ্টান্ত স্থাপনে ব্যর্থ। এ বার কি শেষ ভরসা উচ্চ আদালত? সোহমের কথায় যদিও আশার সুর মেলেনি। তাঁর মতে, “না হলে তো মানুষের রোষ, দিনের পর দিন সকলের পথে নামা— ব্যর্থ হয়ে যাবে। তার থেকেও বড় কথা, নির্যাতিতা বোন এবং তাঁর পরিবার যে ন্যায়, যে সম্মান দাবি করেন, সেটা যেন অসম্পূর্ণ থেকে গেল।” জানালেন, সমাজসচেতন প্রত্যেক নগরবাসী সেই কথা মাথায় রেখে তাই রাতের পর রাত জেগে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছিলেন। “সেই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি মিলল কই?” আফসোস সোহমের।

রায় শুনে হতাশ সোহম, নির্যাতিতার মা-বাবার সঙ্গে দেখা করার উৎসাহও যেন পাচ্ছেন না। তাঁর কথায়, “আমি ওঁদের সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকব। কিন্তু শুধুই সান্ত্বনা জানিয়ে ওঁদের শূন্যতা তো ভরাট করতে পারব না! যে ন্যায়বিচার ওঁদের বা ওঁদের মেয়ের পাওয়ার কথা সেটাও দিতে পারব না। কারণ, আমার হাতে কিছুই নেই।” বলতে বলতে জমে থাকা ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন তিনি। সন্দেহপ্রকাশ করেছেন সিবিআইয়ের তদন্তের উপর। শাসকদলের বিধায়কের সাফ দাবি, “আদালত অবশ্যই তথ্যপ্রমাণের উপর নির্ভর করে একা সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেছে। তার পরেও বলব, সঞ্জয় একা দোষী নন, সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। ওঁর সঙ্গে যিনি বা যাঁরা ছিলেন এই রায়ের সুবাদে তাঁরা আড়ালে চলে গেলেন। আর সঞ্জয় দোষী হলে ওঁর মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত ছিল, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট। সেটা হল না!” তিনি আরও যোগ করলেন, “ওই রাতে ঘটনাস্থলে শুধুই সঞ্জয় আর নির্যাতিতা ছিলেন, তা তো নয়!” পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, “হয়তো শারীরিক অত্যাচার করেছেন সঞ্জয়। কিন্তু এত কিছু হয়ে গেল, কোনও আওয়াজ কি হয়নি?”

হতাশ সোহম উদাহরণ দিয়েছেন সৌদি আরবের। যেখানে চুরি করলে চোরের আঙুল কাটা যায়। বললেন, “এই শাস্তি ওখানকার লোকেদের মনে ভয় ধরিয়ে দিতে পেরেছে। যার জন্য সৌদি আরবে সোনার দোকান সারা রাত খোলা থাকে। বিক্রেতা নিশ্চিন্ত মনে বাড়ি ফিরতে পারেন।”

Advertisement
আরও পড়ুন