তিয়াসা রায়, উদয়প্রতাপ সিংহ, স্বস্তিকা দত্ত, কৌশিক রায় এবং তথাগত মুখোপাধ্যায়।
ধরুন, চা পানের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি হবে। কেমন ভাবে সেই দৃশ্য গ্রহণ করা হবে? শটের ঠিক আগে অভিনেতার হাতে কলাকুশলীদের কেউ একজন তুলে দেবেন চায়ের কাপ, এটাই শ্যুটিংয়ের নিয়ম। লকডাউনে স্টুডিয়োয় শ্যুট বন্ধ। ফলে আপাতত বন্ধ সে ব্যবস্থাও। ধারাবাহিকের গতি ধরে রাখতে চালু হয়েছে ‘শ্যুট ফ্রম হোম’। এই ব্যবস্থায় আগে উল্লেখিত চা পানের দৃশ্য কী ভাবে শ্যুট করছেন অভিনেতারা? সব সামলাতে গিয়ে কি তাঁদের কি ‘দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা? জানতে আনন্দবাজার ডিজিটাল যোগাযোগ করেছিল জি বাংলার ধারাবাহিক ‘মিঠাই’, ‘কৃষ্ণকলি’, ‘কী করে বলব তোমায়’, স্টার জলসার ‘দেশের মাটি’, ‘খড়কুটো’র অভিনেতাদের সঙ্গে।
কী বলছেন সবাই?
‘কৃষ্ণকলি’ ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্র ‘শ্যামা’ ওরফে তিয়াসা রায় শ্যুটিংয়ের জন্যই কলকাতায়। স্বামী সুবান রায় গোবরডাঙার বাড়িতে। ফলে, তিনি যে তিয়াসাকে সাহায্য করবেন, সে উপায়ও নেই। তাই কিউ দেওয়া, ক্যামেরার ফ্রেম সেট করা, কম আলোয়, দরজা-জানলা বন্ধ করে একা হাতে পর্বের শ্যুটিংও করতে হচ্ছে তাঁকেই, জানালেন তিয়াসা। তাঁর কথায়, ‘‘সাজঘর থেকে আমাদের পোশাক পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সব পোশাক আগে কেচে স্যানিটাইজ করেছি। তার পর সেই পরিষ্কার পোশাক পরে আমরা অভিনয় করছি।’’ যাতে বেশি ওঠা-বসা, নড়াচড়া করতে না হয় তার জন্য সংলাপও সে ভাবেই লিখছেন চিত্রনাট্যকারেরা, দাবি ‘কৃষ্ণকলি’র।
বাড়ি থেকে শ্যুট করতে গিয়ে বেশ বিপাকেই পড়েছেন ‘মিঠাই’-এর অন্যতম চরিত্র ‘রাতুল’। এই ভূমিকায় অভিনয় করছেন উদয়প্রতাপ সিংহ। উদয় বললেন, ‘‘আমার ঘরে ছাদ--আলোর ছড়াছড়ি। কিন্তু সামনে রাখা আর্ক লাইট নেই! ফলে, ছায়া পড়ে চোখের নীচের ডার্ক সার্কল তৈরি হয়ে যাচ্ছে। তার উপর সাজসজ্জাও করতে পারি না। বাবার সঙ্গে থাকি। তিনি প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিতও নন। ফলে, ক্যামেরার ফ্রেম বুঝে যে মোবাইল বা ডিএসএলআর ধরবেন, সেটাও সম্ভব হচ্ছে না!’’ তা হলে কী করে পর্ব শ্যুট করছেন? অভিনেতার দাবি, ট্রাইপড উঁচু তাকের উপরে রেখে শ্যুটিং করতে হচ্ছে। কারণ, তিনি ট্রাইপডের থেকেও অনেকটা লম্বা। পাশাপাশি, আরও সমস্যার তালিকা দিলেন উদয়। যেমন— ‘‘আমার বাড়ি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বিমানবন্দরের কাছে। ফলে, আমার বাড়ির ছাদের দৃশ্য এক রকম। আমার স্ত্রী ‘শ্রীতমা’র ভূমিকায় অভিনয় করছেন দিয়া মুখোপাধ্যায়। ওঁর বাড়ির ছাদে উঠলেই পিছনে বড় বড় আবাসন!’’ দৃশ্যপট বদল ছাড়াও তারতম্য ঘটছে খাওয়ার বাসন এমনকি মিষ্টির আকারেও! উদয়ের দাবি, তিনি এবং দিয়া হয়তো সাদা প্লেট নিয়েছেন। কিন্তু ২ জনের প্লেটের কারুকাজ আলাদা। দিয়া বড় রসগোল্লা নিয়ে ফেলেছেন। এ দিকে উদয়ের রসগোল্লা আকারে ছোট। ‘‘সেই নিজে মজাও হচ্ছে গ্রুপে’’, জানালেন অভিনেতা। তবে কালঘাম ছুটছে শ্যুট করা পর্ব পাঠাতে গিয়ে। উদয়ের কথায়, ‘‘নেটওয়র্ক দুর্বল থাকলে সব ঘেঁটে ‘ঘ’! বড় বড় ফাইল পাঠাতে গিয়ে আমি নাজেহাল।’’
উদয়ের ঠিক বিপরীত মেরুর বাসিন্দা ‘দেশের মাটি’র ‘ডোডো’ ওরফে তথাগত মুখোপাধ্যায়। তথাগত নিজে পরিচালক। ফলে, খুব অসুবিধেয় পড়তে হচ্ছে না তাঁকে। যদিও পরিচালক-অভিনেতা জানিয়েছেন, ‘‘অভিনয়ের সময় আমার পরিচালক সত্তাকে একেবারেই সামনে আসতে দিই না। বরং ধারাবাহিকের পরিচালক যেমন চাইছেন, সেটাই তাঁকে দেওয়ার চেষ্টা করি।’’ তথাগতর স্ত্রী দেবলীনা মুখোপাধ্যায়ও অভিনেতা। তাঁর থেকে প্রচুর সাহায্য পাচ্ছেন ‘ডোডো’, দাবি অভিনেতার। সেই প্রসঙ্গেই তিনি বললেন, ‘‘আগে চা পানের দৃশ্য গ্রহণের ঠিক আগে কেউ হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিতেন। যাঁদের বাড়িতে দেবলীনার মতো কেউ আছেন, তাঁরা সেই কাজটি করে দিচ্ছেন। না থাকলে একাই করতে হচ্ছে!’’ একই সঙ্গে তথাগত জানালেন, ক্রোমা শটও বাড়ি থেকেই দিচ্ছেন তিনি। যেখানে শ্যুট হবে সেখানে সবুজ কাপড় টাঙিয়ে নিয়ে। পরে এডিটররা সেখানে চিত্রনাট্য অনুযায়ী দৃশ্যপট বসিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু কেউ কারওর বাড়ি যাচ্ছেন না, দাবি তাঁর।
‘শ্যুট ফ্রম হোম’ করতে গিয়ে খুব ভাল অভিজ্ঞতা হয়নি ‘কী করে বলব তোমায়’-এর মুখ্য চরিত্র ‘রাধিকা’ ওরফে স্বস্তিকা দত্তেরও। অকপটে জানালেন, ৬টি দৃশ্য শ্যুট করে পাঠাতে হচ্ছে প্রতি দিন। ‘‘নিজেই কিউ দিচ্ছি। সংলাপ বলছি। ক্যামেরা সামলাচ্ছি। অভিনয়ও করছি। বাড়িতে কখনও জোরালো আলোর ব্যবস্থা থাকে? সে দিকটাও সামাল দিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে সত্যিই আমি ল্যাজেগোবরে,’’ জবাব অভিনেত্রীর। আগামী দিনে এই ব্যবস্থাই যদি চালু হয়ে যায়? স্বস্তিকার সাফ জবাব, এই ক’দিনেই তিনি তিতিবিরক্ত। এই চাপ আর নিতে পারবেন না।
‘খড়কুটো’র সৌজন্য ওরফে কৌশিক রায় কিন্তু স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘‘এ ভাবে কাজে আমরা কেউই অভ্যস্ত নই। ফলে, সবারই কিছু না কিছু সমস্যা হবে। আমারও হচ্ছে। এ গুলো মানিয়ে নিয়েই কাজ করছি সবাই। কারণ, ধারাবাহিক চললে কারোর উপার্জন বন্ধ হবে না। কেউ অন্নাভাবেও থাকবেন না। এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’’ পাশাপাশি তিনি এটাও জানেন, লকডাউন উঠলে আবার সবাই এক সঙ্গে কাজ করবেন। তখন সব সমস্যা মিটে যাবে।
এই আশাতেই আপাতত দিন-রাত এক করে প্রচণ্ড পরিশ্রম করে চলেছেন অভিনেতারা। আর অপেক্ষা করছেন লকডাউন ওঠার। তা হলেই আবার এক ছাদের নীচে সবাই। আড্ডাও দেবেন আগের মতো। প্রত্যেক অভিনেতা আপাতত এই ‘জমজমাট আড্ডা’টাই বড্ড মিস করছেন।