Entertainment News

শোনার অভ্যেস ৯০ সেকেন্ড! শাস্ত্রীয় সঙ্গীত প্রাসঙ্গিক কতটা, জানালেন বাংলা গানের দিকপালরা

৯০ সেকেন্ডের গণ্ডিতে বেঁধে দেওয়া গান শুনতে অভ্যস্ত প্রজন্ম কি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বা রাত জেগে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারে?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:১৭
Tejendra Narayan Majumdar, Bikram Ghosh and Srikanta Acharya talk about Indian classical music

শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শোনার অভ্যেস নিয়ে কথা বললেন তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার, বিক্রম ঘোষ ও শ্রীকান্ত আচার্য। ছবি: সংগৃহীত।

সাত সুরের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে সমগ্র সঙ্গীত জগৎ। এই সাত সুরেই বোনা অসংখ্য রাগ-রাগিনী। রাগপ্রধান তো বটেই। অন্য সমস্ত গানেও এই রাগ-রাগিনীর স্পর্শ খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু ইনস্টাগ্রাম ও রিল-এর প্রজন্মে কি সে গান এত মন দিয়ে কেউ শোনে? এই প্রশ্ন বার বার ওঠে। ৯০ সেকেন্ডের গণ্ডিতে বেঁধে দেওয়া গান শুনতে অভ্যস্ত প্রজন্ম কি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বা রাত জেগে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠান দেখতে পারে?

Advertisement

কিছু দিন আগেই মুম্বই শহরে অনুষ্ঠান করে গেলেন আমেরিকার পপ তারকা ডুয়া লিপা। ডুয়ার অজস্র গানের মধ্যে সেই অনুষ্ঠানেও জয়জয়কার ইনস্টাগ্রাম-খ্যাত একটি ‘ক্রসওভার’ গানের, যাকে বলা যায় দুই গানের মেলবন্ধন। তা হলে কি ক্রমশ ধৈর্য্য ধরে গোটা গান শোনার অভ্যেস কমছে?

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার বলেন, “আমাদের মনে হয়, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এখন কেউ শুনতে আসেন না। কিন্তু সারা পৃথিবীতে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের কদর পাই আমরা। নতুন প্রজন্মের মানুষও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শুনতে আসছেন। তাঁরা কিন্তু পুরো অনুষ্ঠান শুনে তার পরেই বেরোচ্ছেন।”

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠান যাতে যুগপোযোগী হয়, সেই দিকে খেয়াল রাখা দরকার বলে মনে করেন শিল্পী। তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি না, মানুষের ধৈর্য কমছে। কিছু দিন আগেই তার প্রমাণ পেয়েছি। আমার আর বিক্রমের (বিক্রম ঘোষ) অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানের সমস্ত টিকিটই কিন্তু বিক্রি হয়েছিল। টানা তিন ঘণ্টা মানুষ শুনেছেন।”

তাই আসন্ন স্বরসম্রাট উৎসব নিয়েও ইতিবাচক তিনি। উস্তাদ আলি আকবর খাঁকে উৎসর্গ করা হচ্ছে এই অনুষ্ঠান। আগামী ১৪, ১৫ ডিসেম্বর নজরুল মঞ্চে আয়োজিত হয়েছে এই অনুষ্ঠান। দীর্ঘ ৪০ বছর পরে একসঙ্গে উস্তাদ আমজাদ আলি খাঁ ও পণ্ডিত স্বপন চৌধুরীকে এই অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে দেখা যাবে। পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ বলেন, “শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠানের টিকিট কিন্তু নিমেষে বিক্রি হয়ে যায়। তাও কিছু মানুষের প্রশ্ন, এখন কি আর শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শোনেন? অনুষ্ঠানগুলো কিন্তু প্রতি নিয়ত হাউসফুল হয়। চলচ্চিত্র কি রোজ হাউসফুল হচ্ছে? হয়তো এই অনুষ্ঠানগুলোর প্রচার কম হয়। সেটা আরও ভাল করলে সব দিক থেকেই ভাল হবে। কারণ সঙ্গীতের জন্য আমাদের গর্বিত হওয়া উচিত।”

বিক্রম আরও বলেন, “সঙ্গীত শিল্পী তেজেন্দ্রদা আর আমি এই রিলের জমানায় টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা অনুষ্ঠান করেছি। আর কোনও বাদ্যযন্ত্র ছিল না। সব টিকিট বিক্রি হয়। অনেককে টিকিট দিতেও পারিনি। মানুষ তো এখনও মন খারাপ হলে অন্ধকার ঘরে গান শোনে। আবার আনন্দে গানের সঙ্গেই নাচে।”

সঙ্গীতশিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য যদিও মনে করেন, নতুন প্রজন্মের ইনস্টাগ্রাম রিল-নির্ভর হয়ে পড়ার অভ্যেস মোটেই ঠিক নয়। তাঁর কথায়, “গানকে তাৎক্ষণিক বিনোদন ভাবার বিষয়টা আমি সমর্থন করি না। এই ধরনের অভ্যেস কখনওই ভাল শ্রোতা তৈরি করতে পারে না। মানুষের মনযোগ ক্রমশ কমে আসছে। এক মিনিটেই যদি গান শুনে বিচার করা যায়, সেটি ভাল নাকি খারাপ, তা হলে তার গুণগত মান ভাল হয় না।” কিন্তু এর বিপরীতেই রয়েছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠান ও তার শ্রোতারা। শ্রীকান্তের কথায়, “এই ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য দীর্ঘ ক্ষণ শোনার অভ্যেস প্রয়োজন হয়। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠান বরং মানুষের গান শোনার অভ্যেস তৈরি করতে সাহায্য করে। সব কিছু দ্রুত ও চটজলদি হয় না। তেমন গানও রয়েছে। তবে সব কিছুকে এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন নেই।”

Advertisement
আরও পড়ুন