Inspiring Story 2025

অভাবী পড়ুয়াদের স্বপ্ন বুনছেন গৃহশিক্ষকেরা, বিনামূল্যেই নেবেন মাধ্যমিকের মক টেস্ট

নিজেদের স্বপ্নপূরণ না হলেও ছাত্রছাত্রীদের কেরিয়ার গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন তাঁরা।

Advertisement
সুচেতনা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৫২
শিক্ষক এবং পড়ুয়ারা।

শিক্ষক এবং পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

কেউ হতে চেয়েছিলেন স্কুল শিক্ষক, কেউ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে প্রাথমিক থেকে কলেজ স্তরে শিক্ষক নিয়োগ অনিয়মের অভিযোগ। ফলে মেধা বা যোগ্যতা থাকলেও বহু প্রার্থীর শিক্ষকতার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে হতাশা গ্রাস করলেও হাল ছাড়েননি একদল মানুষ। বেছে নিয়েছেন গৃহশিক্ষকতাকে। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের পড়ুয়াদের কথা ভেবে তাঁদের বিশেষ উদ্যোগ।

Advertisement

২০১২ সালে রাজ্যে প্রথম বারের জন্য প্রাথমিকে টেট (টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট)-এর আয়োজন করা হয়। সেই পরীক্ষায় বাকিদের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন এই সমস্ত শিক্ষকেরা। হাতে পান শংসাপত্রও। তবে নানা জটিলতায় স্কুলে চাকরির সুযোগ মেলেনি। কিন্তু তার জন্য ছাত্র পড়ানোর নেশা জলাঞ্জলি দিতে নারাজ ছিলেন দমদম ক্যান্টনমেন্টের পশ্চিম রবীন্দ্রনগর এলাকার এই উদ্যমী শিক্ষকেরা। নিজের নেশাকেই পেশা বানিয়ে বেছে নেন গৃহশিক্ষকতাকে। গড়ে তোলেন একটি টিউশন সেন্টার। এর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন সোহম ভট্টাচার্য। তাঁর সঙ্গে সামিল হন আরও ১১ জন শিক্ষক। এঁদের মধ্যে কেউ স্নাতকোত্তর এবং বিএড উত্তীর্ণ, আবার কেউ পিএইচডি যোগ্যতাসম্পন্ন।

মক টেস্ট।

মক টেস্ট। নিজস্ব চিত্র।

সারা বছর শিক্ষার্থীদের পড়ানোর পরে অন্য স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন তাঁরা। নিজেদের স্বপ্নপূরণ না হলেও ছাত্রছাত্রীদের কেরিয়ার গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন তাঁরা। তাই গত বছর থেকে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য চালু করেছেন বিনামূল্যে মক টেস্টের ব্যবস্থা। মূল উদ্যোক্তা সোহম বলেন, “শুধু নিজের প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া নয়, এলাকার সমস্ত সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য কিছু করার ইচ্ছে ছিল। সে জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। যাতে আর্থিক ভাবে সচ্ছলদের পাশাপাশি প্রান্তিক পড়ুয়ারাও জীবনের বড় পরীক্ষার জন্য নিজেদের যথাযথ ভাবে প্রস্তুত করতে পারেন, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”

আগামী ১৪ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত মক টেস্টের আয়োজন করা হবে। পরীক্ষা নেওয়া হবে মাধ্যমিকের বিভিন্ন বিষয়ের উপর। এঁদের মধ্যে আরও এক জন গৃহশিক্ষক জানান, “গত বছরও আমরা এ রকম মক টেস্টের আয়োজন করেছিলাম। যাতে অংশগ্রহণ করে ২০০-এর বেশি পরীক্ষার্থী। এ ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা করে স্থানীয় ক্লাব। ওই ক্লাবেই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়।”

বিনামূল্যে মক টেস্ট আয়োজনের ক্ষেত্রে আরও কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তাঁরা। যেমন বাজার চলতি টেস্ট পেপারের বাইরে সমস্ত বিষয়ের জন্য আলাদা প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে। চলতি বছরের জন্য কোন টপিকগুলো গুরুত্বপূর্ণ, তাও জানানো হবে। এর পরে এক সপ্তাহের মধ্যেই পড়ুয়াদের হাতে উত্তরপত্র তুলে দেওয়া হবে। উত্তরপত্রের ভুলগুলি ধরিয়ে তা সংশোধনের জন্য এর পর আয়োজন করা হবে ‘রেমেডিয়াল ক্লাস’-এরও।

উল্লেখ্য, ১৪-২২ জানুয়ারি দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত পরীক্ষা চলবে। পরীক্ষার্থীদের ওই দিন মূল পরীক্ষার মতোই স্কুল ইউনিফর্ম পরে মক টেস্ট দিতে আসতে হবে। এ ছাড়াও মক টেস্টে অংশগ্রহণকারী সমস্ত পড়ুয়াকে দেওয়া হবে। প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানাধিকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে মেমেন্টো। পুরস্কার বিতরণ করা হবে আগামী ২৮ এবং ৩০ জানুয়ারি।

Advertisement
আরও পড়ুন