theatre

বন্দি শঙ্কর, খলনায়ক ঋদ্ধি নন! সিনেমা-থিয়েটারের দ্বন্দ্ব নিয়ে সুমনের ‘আজকের সাজাহান’

উৎপল দত্তের লেখা নাটকই নতুন করে সাজিয়েছেন সুমন। পুরনো সময় বদলে দিয়ে চরিত্রের গভীরে ফুটিয়ে তুলছেন সমসাময়িক বাস্তব। ‘মুখোমুখি’-র নাট্যোৎসবে আসছে, ‘আজকের সাজাহান’।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৩ ১০:২৭
Suman Mukherjee\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s directorial play Ajker Sajahan, starring Shankar Chakraborty and Riddhi Sen

সুমন মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘আজকের সাজাহান’ নাটকে প্রধান দুই চরিত্রে শঙ্কর চক্রবর্তী এবং ঋদ্ধি সেন। গ্রাফিক্স—শৌভিক দেবনাথ

সময় তাকে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে। থিয়েটারের স্মৃতিতেই বন্দি হয়ে বাঁচে নাট্যকার কুঞ্জবিহারী। সঞ্চয় শেষ, পেট চলে না। তবু সে অঙ্গে তুলে নেয় সাজ, কস্টিউম। ঘরবন্দি কুঞ্জবিহারী একাই মহড়া দিয়ে চলে ‘চন্দ্রগুপ্ত’ থেকে ‘ওথেলো’-র মতো পুরনো নাটকের। এমন আত্মবিস্মৃত চরিত্রকে নিয়েই সুমন মুখোপাধ্যায়ের নতুন নাটক ‘আজকের সাজাহান’।

উৎপল দত্তের লেখা নাটকই নতুন করে সাজিয়েছেন সুমন। পুরনো সময়কে বদলে দিয়ে চরিত্রের গভীরেই ফুটিয়ে তুলছেন সমসাময়িক বাস্তব। যে বাস্তব নির্মম। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির মাঝেই সুমন আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘শাহজাহানের যে গতি হয়েছিল জীবনের শেষে, তারই সমান্তরালে অন্য আখ্যান উঠে আসে এই নাটকে। শাহজাহান পুত্রের হাতে বন্দি ছিলেন কারাগারে। এখানে কুঞ্জবিহারীর বন্দিত্ব মানসিক।’’ সেই বন্দিদশা ঘুচবে কি?

Advertisement

এক সময়ে থিয়েটারের বিখ্যাত অভিনেতা ছিল কুঞ্জবিহারী। সেরা সময় পেরিয়ে এসে এখন সে অতীত নিয়ে বাঁচে। আর্থিক অস্বচ্ছলতার মধ্যেই তার বেঁচে থাকা। স্মৃতিনির্ভর একলার জগতের অধীশ্বর ‘আজকের সাজাহান’, কুঞ্জবিহারী।

Riddhi Sen and Shankar Chakraborty

কুঞ্জবিহারীকে একটি রংচঙে ক্লাউনের চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব দেয় সুব্রত, এর পরই প্রকট হয় প্রবীণ আর নবীনের দ্বন্দ্ব। ছবি-ফেসবুক

এই চরিত্রে অভিনয় করছেন শঙ্কর চক্রবর্তী। সিরিয়াল নিয়েই তিনি ব্যস্ত থেকেছেন গত প্রায় ১৭ বছর। সুমনের অনুরোধে সাজাহান হয়ে মঞ্চে ফিরছেন তিনি। তার উপর, উৎপল দত্তের নাটক! সেই উচ্ছ্বাস ধরা পড়ল তাঁর কণ্ঠে। শঙ্কর বললেন, ‘‘উৎপল দত্তের সঙ্গে আমিও কাজ করতাম পিএলটি-তে। ১৯৮৫ সালে যখন পিএলটি-তে ‘আজকের সাজাহান’ মঞ্চস্থ হত, মূল চরিত্রটি করতেন উৎপল দত্ত নিজেই। আমি অবশ্য অভিনয় করিনি তখন, কাজ করতাম ব্যাকস্টেজে।’’

কিন্তু দীর্ঘ দিন রিহার্সাল দেখেছেন। সব মুখস্থ। স্মৃতি হাতড়ে বললেন ‘‘উৎপলদা চিরকুট পাঠাতেন বাড়িতে। এক দিন রিহার্সাল করে পরের দিন শো করে দিয়েছি এমনও হয়েছে। ‘চৈতালি রাতের স্বপ্ন’ নাটকে রমাপ্রসাদ বণিকের জায়গায় দুটো শো করেছি এক দিনের নোটিসে। কেউ অনুপস্থিত হলে উৎপলদা হঠাৎ হঠাৎ বলতেন, ‘করে দাও। আমাকে কেন জানি না ভরসা করতেন।’’

শঙ্কর জানালেন, সেই নাটকের সহকারী পরিচালক ছিলেন সুমন মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘লালও (সুমন) যে এই ভরসাটা আমার উপরে রেখেছে, এ জন্য আমি ওর কাছে কৃতজ্ঞ। ডিজ়াইনটাও অসাধারণ করেছে। কিছু সমসাময়িক প্রসঙ্গ এবং প্রযুক্তি এর মধ্যে ঢুকিয়েছে।’’

ঘরবন্দি, স্মৃতিবন্দি নাট্যব্যক্তিত্ব কুঞ্জবিহারীর সামনে হঠাৎ এক দিন নতুন দিগন্ত খুলে যায়। একটি ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে নবীন চলচ্চিত্র পরিচালক সুব্রত। সেই চরিত্রে অভিনয় করছেন ঋদ্ধি সেন। তাঁর মতে, ‘আজকের সাজাহান’-এর সুর বাঁধা আছে একই শিল্পমাধ্যমের প্রতি দু’জন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির তফাতে।

কুঞ্জবিহারীকে একটি রংচঙে ক্লাউনের চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব দেয় সুব্রত। সেই প্রস্তাবে শুরুতেই রাজি হয় না প্রবীণ কুঞ্জবিহারী। নাছোড় সুব্রতর জেদের কাছে শেষমেশ অবশ্য হার মেনে নেয় সে। এর পরই প্রকট হয় প্রবীণ আর নবীনের দ্বন্দ্ব।

Suman Mukherjee and Riddhi Sen

ঋদ্ধি জানালেন,পর্দা আর মঞ্চের ব্যবহারের চমৎকার মিশ্রণ আছে এই নাটকে। বাংলা নাটকে এমনটা আগে হয়েছে বলে তাঁর জানা নেই। ছবি-ফেসবুক

শুটিংয়ের সময় অভিনয়ের নতুন এবং পুরনো ধারা নিয়ে বিরোধ বাধে দুই প্রজন্মের। সিনেমা আর থিয়েটারের অভিনয়ের পদ্ধতি নিয়ে বচসার ফাঁকে ফুটে ওঠে দুই প্রজন্মের বোধের তফাত। পরিচালক সুব্রত সিনেমার প্রতিটি দৃশ্য বাস্তব করে তুলতে চায়। যে বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না অভিনেতা কুঞ্জবিহারীর ভাবনা। সিনেমার তাগিদে কোথাও নিষ্ঠুরতার পর্যায়েও পৌঁছে যায় বাস্তবতার নির্মাণ। শুটিংয়ের এক দৃশ্যে পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়তে হয় কুঞ্জবিহারীকে। তার পরই ভয়াবহ কাণ্ড! নতুন মোড় নেয় গল্প।

তবু ঋদ্ধি তাঁর অভিনীত চরিত্রটিকে ‘ভিলেন’ বলছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘এই চরিত্রটা খলনায়কের চরিত্র নয়। দু’জন মানুষেরই নিজেদের মতো করে যুক্তি আছে। সেটা হলেই একটা নাটক জমে ওঠে।’’

ঋদ্ধি জানালেন, পর্দা আর মঞ্চের ব্যবহারের চমৎকার মিশ্রণ আছে এই নাটকে। বাংলা নাটকে একইসঙ্গে এ ভাবে স্ক্রিন আর স্টেজের ব্যবহার এর আগে হয়েছে বলে তাঁর জানা নেই। ক্যামেরার কাজের দায়িত্ব সামলেছেন অভীক মুখোপাধ্যায়। সব মিলিয়ে নাট্যমোদী দর্শককে এ বার অন্য রকম অভিজ্ঞতা দিতে চলেছে ‘আজকের সাজাহান’।

আগামী ১৫ এপ্রিল, নববর্ষে ‘মুখোমুখি’ নাট্যোৎসবে মঞ্চস্থ হবে ‘আজকের সাজাহান’। টান টান নাটকটি দেখতে হলে চলে আসতে হবে রবীন্দ্রসদনে। একই দিনে দুটি শো, দুপুর ২.৩০ এবং সন্ধ্যা ৬.৩০।

আরও পড়ুন
Advertisement