ডিকশনারি।
পুজোর পরে এই প্রথম বড় পর্দায় একসঙ্গে মুক্তি পেয়েছে তিনটি বাংলা ছবি। তা-ও ভ্যালেন্টাইনস ডে এবং সরস্বতী পুজো উপলক্ষে। গত শুক্রবার মুক্তি পাওয়ার পরে কেমন চলছে ছবি তিনটি? দর্শকই বা ভয় কাটিয়ে কতটা হলমুখী হচ্ছেন?
হলমালিক এবং ডিস্ট্রিবিউটরদের সকলেই একটি ব্যাপারে একমত যে, মঙ্গলবার অর্থাৎ সরস্বতী পুজোর দিন ভাল ব্যবসা করেছে প্রায় সব সিনেমা হল। সিঙ্গল স্ক্রিন ও মাল্টিপ্লেক্সে নির্বিশেষে চলেছে ‘ম্যাজিক’, ‘প্রেম টেম’ ও ‘ডিকশনারি’। তিনটি ছবির জ়ঁর আলাদা, মেজাজও ভিন্ন। কমবয়সিরা যেমন ‘প্রেম টেম’ আর ‘ম্যাজিক’ দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন, আবার ‘ডিকশনারি’ দেখছেন সব বয়সিরাই। পিভিআর-এর এক সিনিয়র এগজ়িকিউটিভ (প্রোগ্রামিং) উজ্জ্বল বিশ্বাস জানালেন, তিনটি ছবির মধ্যে ‘ম্যাজিক’ আর ‘প্রেম টেম’-এ কালেকশন তুলনায় একটু বেশি। ‘‘শুক্র-শনিবার তেমন ভাল না চললেও রবিবারের ভালই ভিড় হয়েছিল হলে। সোমবার আবার খানিকটা ভাটা পড়ে। তবে মঙ্গলবার, সরস্বতী পুজোর দিন আশাতীত ব্যবসা করেছে তিনটে ছবিই,’’ বললেন তিনি।
প্রেক্ষাগৃহে ১০০ শতাংশ আসনের অনুমতির পরেও সে ভাবে হলমুখী হননি দর্শক, যার প্রধান কারণ তেমন বড় মাপের কোনও ছবি মুক্তি পায়নি এর মধ্যে। অক্ষয়কুমার অভিনীত ‘সূর্যবংশী’ মুক্তি পাওয়ার কথা আগামী এপ্রিলে, তার আগে অন্য কোনও বিগ বাজেট হিন্দি ছবি মুক্তির সম্ভাবনা নেই। যশ রাজ ফিল্মসের বড় বাজেটের ছবি ‘বান্টি অওর বাবলি টু’ আসছে এপ্রিলে। মার্চের শেষে আসছে ‘গডজ়িলা ভার্সাস কং’, যা মাল্টিপ্লেক্সগুলিতে কিছুটা হলেও দর্শক টানবে, মনে করা হচ্ছে।
অতিমারির আতঙ্ক কাটিয়ে অনেক কিছুই যেমন ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে, তেমনই সিনেমা হলেও দর্শক ফেরার আশা রাখছেন হলমালিকরা। নবীনাতে যেমন শুধু ‘প্রেম টেম’ মুক্তি পেয়েছে। মালিক নবীন চৌখানির কথায়, ‘‘ছবি ভাল হলে, তা চলবেই। প্রথম সপ্তাহের পরে ‘ওয়র্ড অব মাউথ’ প্রচার শুরু হয়। তার উপরেই নির্ভর করে, কত দিন হলে থাকবে ছবিটা। এ সপ্তাহে যেমন ‘প্রেম টেম’-এর পাশাপাশি ‘চিনি’ও দেখেছেন লোকে।’’ মঙ্গলবার নন্দনের বাইরে ‘হাউসফুল’ বোর্ড ঝুলতে দেখা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন পরে। প্রায় ৯৫০ আসনযুক্ত এই সরকারি হলে ‘ডিকশনারি’র শো হাউসফুল গিয়েছে, যা সদর্থক ভাবে দেখছেন ডিস্ট্রিবিউটররা। রাজ্যের অন্যান্য জেলার কিছু হলে হাউসফুল গিয়েছে ‘ম্যাজিক’ও। এ প্রসঙ্গে ডিস্ট্রিবিউটর শতদীপ সাহা বললেন, ‘‘সরস্বতী পুজোয় যে ব্যবসাটা হয়েছে, অনেক দিন পরে এ রকম কালেকশন দেখা গেল। তবে ভাল সিনেমা সাহস করে রিলিজ় না করলে আমাদের কিছু করার নেই।’’ পিভিআর-এর তরফে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুক্র ও শনিবার ১০-১৫ শতাংশ, রবিবার ২৫ শতাংশ এবং মঙ্গলবার প্রায় ৭৫ শতাংশ অকুপেন্সি ছিল এই মাল্টিপ্লেক্স চেনের হলগুলিতে। আইনক্সের চিফ প্রোগ্রামিং অফিসার রাজেন্দ্র জ্বালা বললেন, ‘‘প্রযোজকরা যে সাহস করে এই সময়ে ছবিগুলো রিলিজ় করেছেন, তার জন্য তাঁদের ধন্যবাদ প্রাপ্য। পরিস্থিতি যে স্বাভাবিকের দিকে এগোচ্ছে, এটা তারই লক্ষণ।’’ প্রিয়া সিনেমার তরফে অরিজিৎ দত্ত জানালেন, সেখানে অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলার ‘ম্যাজিক’ দেখতে ভিড় করছেন দর্শক। ‘‘দুর্গাপুরের মাল্টিপ্লেক্সেও ‘ম্যাজিক’ আর ‘ডিকশনারি’ ভাল চলছে। হলে আসার ব্যাপারে যে ভয়টা কাজ করছিল মানুষের মনে, সেটা এখন অনেক কেটেছে। তবে এখনও অনেকে ভাবছেন, সিনেমা হল খোলেনি— এটা একটা সমস্যা।’’
তিনটি বাংলা ছবি একসঙ্গে মুক্তি পেলেও সে অর্থে কোনওটিই বড় বাজেটের নয়। ছুটির দিনগুলোয় ব্যবসা করলেও তা দীর্ঘায়িত হবে কি না, নিশ্চয়তা নেই। হিন্দি ব্লকবাস্টার ছাড়া সিনেমা হলের পুরনো চেহারা ফেরানো মুশকিল। সেই অপেক্ষায় আপাতত বুক বাঁধছে বড় পর্দা।