এই ছবিটা যেন সব বয়সের, সব ধরনের প্রেমের নিদর্শন
দৃশ্যটা ছিল স্বাতীদির চুল আঁচড়ে দেবেন সৌমিত্রদা এই দৃশ্যর শ্যুটিং করা হবে। ঘরে লাইট করা হয়েছে। এই ছবির চিত্রগ্রাহক শুভঙ্কর ভর খুব সুন্দর করে ঘরে আলো তৈরি করেছেন। জানলা দিয়ে সূর্যের আলো এসে পড়েছে, বিকেলের পরিমণ্ডল, বাইরে থেকে জানলা দিয়ে একটু একটু সোনাঝুরিও দেখা যাচ্ছে। স্বাতীদি এসে বসেছেন সৌমিত্রদা হাতে চিরুনি নিয়ে ভীষণ অস্বস্তিতে, সৌমিত্রদা বুঝতে পারছেন না চুলটা কি করে আঁচড়াবেন। নন্দিতাদি সৌমিত্রদাকে জিজ্ঞাসা করলেন কোনও সমস্যা? সৌমিত্রবাবু খুব সলজ্জিত ভাবে বললেন – “নন্দিতা, আমি তো কোনওদিন কারও চুল আঁচড়াইনি মানে আমি দীপারও কোনওদিন চুল আঁচড়ে দিইনি”।
সারা ইউনিটের সবাই হেসে উঠল সৌমিত্রদা বললেন, “আমার আসলে একটু ভয় লাগছে”। নন্দিতাদি বললেন “কোনও ভয় নেই সৌমিত্রদা, আপনি বসুন”। সৌমিত্রদা বসলেন। স্বাতীদি সৌমিত্রদার দিকে পিঠ করে বসা। স্বাতীদির চুলটা হাতে নিয়ে নন্দিতাদি দেখিয়ে দিলেন কেমন করে চুল আঁচড়ানোর শটটা উনি নিতে চাইছেন। সৌমিত্রদা চিরুনিটা নিয়ে চুলটা আচঁড়াতে শুরু করলেন, এত নরম এত পেলব, এত সোহাগ করে কোনও পুরুষ কোনও মহিলার চুল আঁচড়াচ্ছে, আমি তো কোনওদিন দেখিনি। চিত্রনাট্য অনুযায়ী স্বাতীদি চুল আঁচড়ানোর সময় 'আহ' করে একটা আওয়াজ করেন। সৌমিত্রদা স্বাতীদির দিকে তাকিয়ে বলেন, “লাগছে?” স্বাতীদি শটের শেষে বললেন, “এত সুন্দর করে কেউ আমার চুল আঁচড়ে দেয়নি কোনওদিন।”
সৌমিত্রদা বললেন, “আমার হাত থেকে চিরুনিটা থরথর করে কাঁপছিল।” এরকমই বেশ কিছু মুহূর্ত আমাদের সিনেমাতে ছিল সৌমিত্র এবং স্বাতীলেখার। এই চুল আঁচড়ানোর দৃশ্যটা ছবিতে এত সুন্দর আসে এবং যখন ফটোগ্রাফার ছবি তোলেন তখন আমাদের মনে হয় এটাই পোস্টার হওয়া উচিত। এই ছবিটা যেন সব বয়সের, সব ধরনের প্রেমের নিদর্শন, সত্যিই সোহাগে আদরে এই চুল আঁচড়ানোর দৃশ্যটি। আমার বন্ধু স্বনামধন্য ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটর রাজকুমার দামানি আমায় বলেছিল দাদা “ও যো পোস্টার হেয় না চুল আঁচড়ানোর বাস! ওহি রাখিয়ে ওর কুছ নাহি চাহিয়ে ও সুপারহিট হ্যাঁয়”। রাজকুমার ওরফে বাবলুদা দামানি বলেছিল আমার বৌ এই পোস্টারের একটা কপি চেয়েছে , ওটা কিন্তু আমি নেব। সৌমিত্র-স্বাতীলেখার জুটি ‘বেলাশুরু’র কথা আবার যেন বাঙালি ও অবাঙালি সবার মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে এই আমরা চাইব। ২০শে মে শেষবারের জন্য সৌমিত্র-স্বাতীলেখা বড় পর্দায় সবার জন্য আসবেন।