সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে করিনা দাবি করেছেন, তাঁদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা যেন রক্ষা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকদের পাশাপাশি এ বার সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুললেন করিনা কপূর খান। গত বৃহস্পতিবার থেকে শরীরে ছ’টি ছুরির আঘাত নিয়ে মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলিউড অভিনেতা সইফ আলি খান। আপাতত তিনি স্থিতিশীল। শনিবার দুই সন্দেহভাজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ।
জানা যায়, বুধবার রাত আড়াইটা নাগাদ বান্দ্রার ‘সৎগুরু শরণ’ আবাসনের দ্বাদশ তলে সইফ-করিনার ফ্ল্যাটে ঢোকে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। তারকা দম্পতির ছোট ছেলের ঘরের সামনে ওই ব্যক্তিকে আবিষ্কার করেন জেহ্র দেখভালের দায়িত্বে থাকা এক মহিলাকর্মী। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ দাবি করেছিল, নিতান্ত চুরির উদ্দেশ্য নিয়েই এক বা একাধিক দুষ্কৃতী ঢুকেছিল তারকা-আবাসে। এর সঙ্গে কোনও বড় গ্যাং-এর কোনও যোগ নেই।
ঘটনার পর থেকেই সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে নানা ধরনের খবর। দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে যে ঘরে ছিলেন তারকা দম্পতি, সেখানে আক্রমণ হওয়ায় সারা দেশের নজর ছিল তাঁদের দিকে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সমাজমাধ্যমে করিনা একটি পোস্ট করেন এবং জানান, কেউ যেন কোনও মনগড়া কাহিনি না লেখেন বা ছড়ান। তাঁদের ব্যক্তিগত পরিসরে যেন অযাচিত প্রবেশ না করেন কেউ, কারণ তাঁরা বিধ্বস্ত।
শনিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েও প্রায় একই ভাবে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে করিনা দাবি করেছেন, তাঁদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা যাতে রক্ষা করা যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু ঠিক কী ঘটেছিল সে রাতে, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। এমনকি ঘটনার দু’দিন পরও মুম্বই পুলিশ নাগাল পায়নি দুষ্কৃতীর। অথচ, বৃহস্পতিবার সকালেই সইফের বা়ড়ির কাছে দেখা গিয়েছিল এনকাউন্টার বিশেষজ্ঞ দয়া নায়েককে। জানান হয়েছে, মোট ত্রিশটি দল আক্রমণকারীর খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে।
এরই মধ্যে উঠতে শুরু করেছে আরও নানা রকমের প্রশ্ন। পুলিশ কর্মীদের কেউ কেউ ঘনিষ্ঠ মহলে নাকি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, কেন সইফ-করিনার মতো তারকার বাড়ির প্রবেশ পথে কোনও সিসি ক্যামেরা নেই!
এরই পাশাপাশি, প্রশ্ন উঠছে সইফের অটোরিকশায় হাসপাতাল যাওয়া নিয়ে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বার বার বলা হয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রায় পিঠ টান টান করেই রক্তাক্ত সইফ প্রবেশ করেছিলেন হাসপাতালে। স্ট্রেচার বা হুইলচেয়ারে নয়, হেঁটেই ঢুকেছিলেন তিনি। হাতে ধরা আট বছরের ছেলে তৈমুরের হাত। সঙ্গে ছিলেন তাঁর এক কর্মী। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে,
১) সত্যিই যদি সইফ জখম অবস্থাতেও এতখানি শক্ত থেকে থাকেন, তা হলে কেন নিজেই গাড়ি চালাতে পারলেন না? সাধারণত সইফকে গাড়ি চালাতে দেখা যায়। বাড়ি মাত্র ২ কিলোমিটার দূরেই তো লীলাবতী হাসপাতাল!
২) কেন তৈমুরের মতো আট বছরের এক বালককে যেতে হল হাসপাতালে? আর কেউ কি ছিলেন না অত বড় বাড়িতে?
৩) সে সময় বাড়িতে করিনা যদি থেকে থাকেন, তা হলে কেন তিনি তৈমুরকে বাড়ি থেকে বেরতে দিলেন? যে সময় দুষ্কৃতী পালিয়ে যায়, সে সময় তো নিশ্চিত করা যায়নি বাইরে তার কোনও দলবল রয়েছে কি না!
৪) শোনা গিয়েছে, ঘটনার পরই করিনা এবং জেহ্কে নিজের বাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছিলেন করিশ্মা কপূর। সে সময় তৈমুর কোথায় ছিলেন?
৫) প্রাথমিক ভাবে কেন রটে গেল, বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন বড় ছেলে ইব্রাহিম আলি খান?
এ ছাড়াও জানা গিয়েছে, ‘সৎগুরু শরণ’ আবাসনের নবম থেকে দ্বাদশ তলের পুরোটাই সইফের সম্পত্তি। সে রাতে তাঁরা সকলে দ্বাদশ তলে ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছিল, দুই ছেলে-সহ দম্পতির সঙ্গে ছিলেন তাঁদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা জনা চারেক মহিলা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, চারটি তল নিয়ে যাঁদের বাড়ি, তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্বে কি মাত্র চারজন মহিলা কর্মী থাকেন রাতে? ঘটনার সময় কোথায় ছিলেন অন্য কর্মীরা? কেন তাঁরা কেউ হাসপাতালে গেলেন না?
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল, পুলিশ তিন কর্মীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। পুলিশ প্রথমেই দাবি করেছিল, বাইরে থেকে রাতে কেউ ঢোকেনি ভিতরে। বরং আগের দিন দুপুরে ঢুকে থাকতে পারে। পরে কেন সে বিষয়ে আর কোনও তথ্য প্রকাশ করল না পুলিশ?