(বাঁ দিক থেকে) পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, এ আর রহমান, হৈমন্তী শুক্ল। ছবি: সংগৃহীত।
নজরুলগীতি বিকৃত করার অভিযোগ উঠেছে সুরকার এ আর রহমানের বিরুদ্ধে। সমাজমাধ্যমে বাঙালিরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত স্বয়ং রহমান এই বিষয়ে মুখ খোলেননি। বাংলার সঙ্গীত জগতেও সুরকারের এই ‘কীর্তি’ আঘাত হেনেছে। রহমানের এই সৃষ্টি দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী এবং হৈমন্তী শুক্লা। আনন্দবাজার অনলাইনকে কী বললেন তাঁরা?
পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর নজরেও বিষয়টি এসেছে। তিনি গানটার কিছু অংশ শুনেছেন। বললেন, ‘‘আমার ভাল লাগেনি। ওঁর মতো অত্যন্ত সুপরিচিত সুরকারের কাছে আমরা এটা আশা করি না।’’ একই সঙ্গে শিল্পী মনে করিয়ে দিতে চাইলেন, যে এ রকম কোনও ঘটনা ঘটলে কিছু দিনের জন্য তার উত্তাপ থাকে। কিন্তু তার পর মানুষ ভুলে যায়। শিল্পী বললেন, ‘‘সরকারি পদক্ষেপ প্রয়োজন। লিখিত ভাবে প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানানো উচিত।’’ অজয় চক্রবর্তী মনে করেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তুলনায় কাজী নজরুল ইসলামের পরিচিতি কম হয়ে থাকার নেপথ্যে দায় বাঙালি জাতির। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ওঁর সম্পর্কে ততটা জানি না। কিন্তু সঙ্গীতের বহু ক্ষেত্রে কিন্তু রবীন্দ্রনাথের তুলনায় নজরুল ইসলামের অবদান বেশি।’’
রহমানের সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয় রয়েছে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর। তিনি বললেন, ‘‘ওঁর কাছে নিশ্চয়ই তথ্য ছিল বলেই ও সাহস পেয়েছে। আসলে আমাদেরও প্রচুর ত্রুটি রয়েছে।’’ এই গানের সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামের যোগসূত্রের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বললেন, ‘‘এই ধরনের গান বাঙালিদের মনে একটা অন্য অর্থ বহন করে। সেখানে নাড়া দিলে তো ভাল লাগবে না। ওঁর আরও গবেষণা করে কাজটায় হাত দেওয়া উচিত ছিল।’’
অন্য দিকে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় শুক্রবার এ আর রহমানকে উদ্দেশ্য করে সমাজমাধ্যমের পাতায় লিখেছেন, ‘‘রহমান কাজী নজরুল ইসলামের লেখা দেশাত্মবোধক ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটিকে খুন করেছেন। সেই সময় গানটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। নজরুল কারারুদ্ধ হন। রহমানের রিমেকের থেকে দূরে থেকে নিজের কাজে মন দেওয়া উচিত।’’
AR Rahaman killed the patriotic song Karar oi Louhakapat remaking in PIPPA,written and composed by poet Kazi Nazrul Islam in 1921. The song was banned by British Govt., Nazrul was imprisoned. Rahaman better concentrates on his own hysterics than remaking. https://t.co/cwjuSdBbpx
— Sukhendu Sekhar Ray (@Sukhendusekhar) November 10, 2023
রহমানের করা সুরে গানটি নিয়ে যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে, সে সম্পর্কে অবগত বর্ষীয়ান সঙ্গীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লা। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বললেন, ‘‘বাংলার সঙ্গীত নিয়ে যে ওঁর কোনও ধারণা নেই, সেটাই বুঝতে পারলাম। বাঙালি সংস্কৃতিকে এরা ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে।’’ কথা প্রসঙ্গেই অরিজিৎ সিংহের প্রসঙ্গ তুললেন বর্ষীয়ান শিল্পী। বললেন, ‘‘অরিজিৎ যখন ‘মন রে কৃষিকাজ জানো না’ গাইল, তখন দেখলাম সমালোচনার ঝড় উঠল। কিন্তু ও তো ভাল গেয়েছে।’’
হৈমন্তীর মতে, যে কাজ ভাল তার প্রশংসা করতেই হয়। একই ভাবে কোনও খারাপ কাজের সমালোচনাও করা উচিত। বললেন, ‘‘রহমানের ‘জয় হো’ গানটিও আমার পছন্দ নয়। এই নিয়ে এক বার মান্নাদা-র (সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে) সঙ্গেও আমার কথা হয়েছিল। উনিও তখন সমালোচনা করেছিলেন। রহমান কী ভাবে এই সাহস অর্জন করলেন, তা ভেবে অবাক হয়ে গিয়েছি।’’ তবে যাঁরা এই গানটি গেয়েছেন তাঁদের কোনও রকম দোষারোপ করতে নারাজ শিল্পী। হৈমন্তী বললেন, ‘‘ছোট ছোট ছেলেমেয়ের কাছে রহমানের সুরে গান গাওয়ার সুযোগটাই বড়। কিন্তু তাঁরা প্রতিবাদ কেন করলেন না, সেটা বুঝলাম না।’’