অ্যাকশন হিরো আবীর চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
আবীর চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই সিনেমাতে আমার প্রথম একসঙ্গে কাজ করা। প্রযোজক হিসাবে এর আগে আবীরের সঙ্গে উইন্ডোজ়ের জন্য কাজ করেছি, কিন্তু পরিচালক হিসাবে এই প্রথম। আমি শুনেছিলাম, আবীর ভীষণ নিয়ম মানে। ঠিক সময় সেটে আসে। এমনকি, সেটে আগে পৌঁছয়। চিত্রনাট্যের প্রত্যেকটা লাইন, শব্দ, কমা, ডট, সেমিকোলন সব মুখস্থ রাখে এবং সবচেয়ে বড় যেটা, সেটা হল কন্টিনিউটি করে মনে রাখে।যা সিনেমার জন্য খুব দরকারি। সেটা নাকি আবীর সাংঘাতিক মনে রাখতে পারে। এই সিনেমাতে চাক্ষুষ করলাম। এক জন ফিল্ম অ্যাক্টরের কাছে টেকনিক্যাল অ্যাক্টিংটা খুব দরকারি জিনিস। তুমি ক্যামেরার সামনে কোথায় দাঁড়াচ্ছ, কোথায় তাকাচ্ছ। মাস্টার শটে যেটা তুমি দিলে ক্লোজ়ে সেই কন্টিনিউটি মনে রাখা।
সিনেমা অ্যাক্টিংয়ের অন্যতম মূল শর্তই বোধ হয় এটা। আবীর সেটা এত সুন্দর ভাবে করে যে পরিচালক হিসাবে তার সঙ্গে কাজ করাটা ভীষণই সহজ। কিন্তু যেটা জানতাম না সেটা হল, আবীর এতটা ফিট। আবীর এত ভাল স্টান্ট করে। ১২০০ মানুষের সামনে আবীর ছুটে এসে একটা ৬ ফুটের উপর বাঁশের বেড়া টপকে শূন্যে উড়ে যাচ্ছে। এ দৃশ্য কেউ বললে আমি বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু চোখের সামনে তা দেখলাম। আর সেটা এক বার নয়, বার বার করেছে। আবীর শূন্যে উড়ছে। ১২০০ লোকের সেটে সবাই হাততালি দিচ্ছে। দর্শক মোহিত হয়ে যাচ্ছে।
কখনও আবীর টিনের চালের উপর লাফাচ্ছে, আবার টিনের চালের উপর দৌড়চ্ছে। দৌড়ে আবার রেলিং টপকাচ্ছে, যা কিনা ৫ ফুটের উপর। ২৪ ঘণ্টা শুটিং করছে টানা, ২০ ঘণ্টা ধরে স্টান্ট। এ অবিশ্বাস্য। ‘রক্তবীজ’ ছবিতে আমাদের অ্যাকশনের দায়িত্ব নিয়েছেন মনোহর বর্মা, যিনি এর আগে ‘মাদ্রাস ক্যাফে’, ‘মর্দানি’, ‘এয়ারলিফ্ট’, ‘মির্জ়াপুর’-এর মতো অসংখ্য ছবি এবং ওয়েব সিরিজ় করেছেন। মনোহরজি পর্যন্ত আবীরের এই দক্ষতা দেখে মুগ্ধ। স্টান্ট দৃশ্যে বডি ডবলের একটা ব্যাপার থাকে। অ্যাকশন ডিরেক্টর আমাকে বলেছিলেন, আবীরকে একটা চলন্ত নাগরদোলায় উঠতে হবে। আমার মনে হয়, ওই স্টান্টটা করবার জন্য বডি ডবল নিলে সুবিধা হবে। আমি আবীরকে জিজ্ঞাস করেছিলাম। আবীর বলেছিল, ‘‘না।’’ ও নিজেই করবে। চলন্ত নাগরদোলা। আবীর দৌড়ে এসে সেখানে উঠছে। আবারও বলছি, এই দৃশ্য নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। আবীরের ফিটনেস, আবীরের স্ট্যামিনা শুধু ইনস্টাগ্রামের জন্য নয়, বাস্তবের জন্য। এই আবীর সত্যিই উড়ছে। এই উড়ন্ত আবীরকে আমি চাইব আপনাদের সামনে নিয়ে আসতে। যেমন আমি উপভোগ করেছি, তেমন আপনারাও উপভোগ করবেন।