সত্যজিতের রায়ের সঙ্গে ভীষ্ম গুহঠাকুরতা।
পরিবারের এক জন চলে গেলেন। কী ভাবে শোক প্রকাশ করব, জানি না। বুঝতে পারছি না। এই করোনা অতিমারিতে কত মানুষকে চলে যেতে দেখছি। এ বার ভীষ্মদাও আমাদের ছেড়ে গেলেন।
এই মানুষটাকে কত রকম ভাবে দেখেছি। বাবার সঙ্গে ছবিতে কাজ করেছেন। আমার প্রথম ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন তিনি। শুধু অভিনয় কেন! কী অসাধারণ গান গাইতেন ভীষ্মদা। ততটাই সুন্দর পিয়ানো বাজাতেন। মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুধু শুনতাম আমরা। এই মানুষটাই আবার পারদর্শিতার সঙ্গে ক্রিকেটও খেলতেন। ওঁকে যত দেখতাম, অবাক হতাম। অদ্ভুত মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিতে পারতেন। শেষ দিকে ছবি আঁকা শুরু করেছিলেন। আমি দেখেছিলাম। কী অসাধারণ হাতের কাজ!
তাঁর শিল্পী সত্তার যতই প্রশংসা করা হোক, তা কম। মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন অতুলনীয়। ভীষ্মদার মতো পরোপকারী মানুষ আমি খুব বেশি দেখিনি। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতেন সব সময়ে। কারও কিছু দরকার হলে, তাঁকে নানা ভাবে সাহায্য করতেন তিনি। মনে আছে, শ্যুটিংয়ের জন্য আমাদের বাড়ির প্রয়োজন ছিল। ভীষ্মদার শান্তিনিকেতনের বাড়িটা ছবির কাজের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেখানে বাবা শ্যুটিং করেছেন। পরবর্তীতে আমিও করেছি। এ রকম প্রচুর সাহায্য পেয়েছি ওঁর থেকে। ভীষ্মদার কাছে আমরা নানা ভাবে ঋণী।
ভীষ্মদা এমনই ছিলেন। সকলের কথা ভাবতে ভালবাসতেন। কত জনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সাহায্য করেছেন। কিন্তু সবটাই করেছেন নিঃশব্দে। প্রচারের আলো থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন আগাগোড়াই। এমন গুণ ক’জনেরই বা থাকে!
আমার বাবা ওঁকে খুবই স্নেহ করতেন। ওঁদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কও বহু দিনের। ভীষ্মদার সঙ্গেও আমার যোগাযোগ বজায় ছিল। মাঝেমধ্যেই কথা হত। কত ইয়ার্কি-ঠাট্টা করতাম। সেই স্মৃতিগুলো আজ ছবির মতো চোখের সামনে ভাসছে। সব ছেড়ে ভীষ্মদা চলে গেলেন। আমাদের জীবনে তৈরি হল এক অদ্ভুত শূন্যতা। কিন্তু শিল্পীর তো মৃত্যু হয় না। আমার বিশ্বাস, ভীষ্মদা বেঁচে থাকবেন তাঁর সৃষ্টিতে। তাঁর শিক্ষার আলোয় আলোকিত হব আমরা।