‘মেড ইন হেভেন’ সিজ়ন ২-এর পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত।
‘সব ভাল, যার শেষ ভাল’। এই প্রবাদ বাঙালির অজানা নয়। সময়ে-অসময়ে এই প্রবাদ ব্যবহারেও ঘনঘটাও কম নয়। হিন্দিতে ‘অন্ত ভলা তো সব ভলা’ বলার মধ্যেও একটা অদ্ভুত আশাব্যঞ্জক মনোভাব আছে। ভাবটা এমন যেন, ভাল ভাবে কোনও কিছু শেষ না হলে, সেই ‘শেষ’ নিয়েই একটা প্রশ্ন থেকে যায়। জ়োয়া আখতার ও রীমা কাগতির ওয়েব সিরিজ় ‘মেড ইন হেভেন’ নিয়েও এত দিন দর্শকের মনোভাব কিছুটা তেমনই ছিল। ২০১৯-এর মুক্তি পেয়েছিল ‘মেড ইন হেভেন’-এর প্রথম সিজ়ন। বিয়ের মতো এক হই-হুল্লোড়ে ভরা সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বৈষম্যে ভরা দিল্লির সামাজিক চিত্র তুলে ধরেছিলেন জ়োয়া ও রীমা। উচ্চবিত্ত পরিবারে পণপ্রথার পরম্পরা, যৌন হেনস্থার ঘটনা থেকে শুরু করে বিয়ের আচার-অনুষ্ঠানের কুসংস্কারের অস্তিত্বর মতো বিষয়কে সহজবোধ্য কিছু গল্পের মোড়কে পরিবেশন করেছিল ‘মেড ইন হেভেন’-এর প্রথম সিজ়ন। তবে ‘সব ভাল, যার শেষ ভাল’-র সুরে ইতি টানেনি জ়োয়া ও রীমার সিরিজ়ের প্রথম সিজ়ন। ফলত, গত চার বছর ধরে দ্বিতীয় সিজ়নের জন্য মুখিয়ে ছিলেন দর্শক ও অনুরাগীরা। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে ‘মেড ইন হেভেন’-এর দ্বিতীয় সিজ়ন। দ্বিতীয় সিজ়নের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও প্রচার ঝলক মুক্তি পাওয়ার সময়েই সিরিজ়ের নির্মাতারা দাবি করেছিলেন, এই বার বিয়ের হই-হুল্লোড় নাকি আরও বাড়বে। তার সঙ্গে নাকি পাল্লা দিয়ে চড়বে ‘ড্রামা’র গ্রাফও। সেই প্রতিশ্রুতি কতটা পূরণ করতে পারল ‘মেড ইন হেভেন’-এর দ্বিতীয় সিজ়ন?
‘মেড ইন হেভেন’ প্রথম সিজ়নে ইতি টেনেছিল তারা খন্না (শোভিতা ধুলিপালা) ও কর্ণ মেহরা (অর্জুন মাথুর)-এর ভাঙাচোরা ব্যক্তিগত জীবনের ঝলক দেখিয়ে। এক দিকে ব্যবসায়ী আদিল খন্নার (জিম সর্ভ) সঙ্গে বিয়ে ভাঙছে তারার। অন্য দিকে, নিজের যৌন অভিরুচি ও পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে জর্জরিত কর্ণ। পাশাপাশি, তাদের পেশাগত জীবনও প্রায় টালমাটাল। কর্ণের সমকামিতা ও তার সামাজিক অবস্থানের মাশুল দিতে হয়েছে তাদের সাধের ‘মেড ইন হেভেন’-এর অফিসকে। সুসজ্জিত সেই অফিসে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ভাঙাচোরা স্বপ্ন নিয়ে আবার কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াবে তারা ও কর্ণ? সেই প্রশ্নের উত্তর দিতেই দ্বিতীয় সিজ়নের অবতারণা। চিত্রনাট্য অনুযায়ী, দামি অফিসে ভাঙচুরের ঘটনার মাস ছয়েক পরে পুরনো দিল্লির এক গলির অফিসে কাজে ফিরেছে তারা ও কর্ণ। এই নতুন অফিস আদপে জহুরি (বিজয় রাজ)-এর পুরনো বাড়ি। সে এখন ‘মেড ইন হেভেন’ কোম্পানির সক্রিয় অংশীদার। সংস্থাকে ফের নিজের পায়ে খাড়া করতে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ ছাড়াই নিজের পুরনো বাড়ি অফিসের কাজে ব্যবহার করার জন্য দিয়েছে জহুরি। পাশাপাশি, অফিসে যোগ দিয়েছে সংস্থার নতুন অডিটর বুলবুল জহুরি (মোনা সিংহ)। মনে আছে, প্রথম সিজ়নেই আদিলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় জহুরি তাকে জানিয়েছিল যে, আদিলের কোম্পানিতে শেয়ার আছে তার স্ত্রীরও? কাট টু, বুলবুল জহুরি! তুখোড় ব্যবসায়ী, টাকাপয়সার হিসাব নিয়ে আরও কড়া মনোভাব তার। শূন্য থেকে শুরু করে আবার পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে বিয়ের মরসুমে ‘বড় মাছ’ ধরার লক্ষ্য নিয়ে এগোয় তারা ও কর্ণ। সঙ্গে ভিডিয়োগ্রাফার কবীর বসরাই (শশাঙ্ক অরোরা), জসপ্রীত কৌর ওরফে জ্যাজ় (শিবানী রঘুবংশী) ও নতুন প্রোডাকশন হেড মেহের (ত্রিনেত্রা হালদার)। প্রাথমিক ভাবে হোঁচট খেলেও জহুরির শাসন, বুলবুলের ব্যবসায়িক বুদ্ধির জোরে জমি খুঁজে পায় ‘মেড ইন হেভেন’। তবে অন্য দিকে, তারা ও কর্ণের ব্যক্তিগত জীবনে ঝড়। প্রিয় বন্ধু ফয়জ়ার (কল্কি কেঁকলা) সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছে তারার স্বামী আদিল। সব জেনে বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। বিবাহবিচ্ছেদের খোরপোশ নিয়ে তেমন দর কষাকষিও করার ইচ্ছা নেই তার। সম্পর্ক যতই ঠুনকো হোক না কেন, আদিলের প্রতি তারা যে যথেষ্ট দুর্বল, তা স্পষ্ট তার চোখমুখের অভিব্যক্তিতে। এর মধ্যেই প্রয়াত হয়েছে আদিলের বাবা কিশোর খন্না (দলীপ তাহিল)। শ্বশুরের শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে তারা বুঝতে পারে, ফয়জ়া সন্তানসম্ভবা। ফয়জ়ার সন্তানের বাবা আদিল। সেই খবর জানতে পেরেই আদিলের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের সময় খোরপোশ হিসাবে যেনতেন প্রকারেণ নিজের পাওনাগণ্ডা বুঝে নেওয়ার পথে হাঁটে সে। অন্য দিকে, ক্যানসার ধরা পড়েছে কর্ণের মায়ের। মারণ রোগে আক্রান্ত হয়েও ছেলের যৌন অভিরুচিকে মেনে না নেওয়ার ক্ষেত্রে নাছোড়বান্দা সে। মায়ের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনে নেশা ও জুয়ার বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকে কর্ণ। প্রেমের হাতছানিতে সাড়া দিয়েও কোনও সম্পর্কেও থিতু হতে পারে না সে। প্রায় একই তিমিরে জ্যাজ় ও কবীরের সমীকরণও। জ্যাজ়কে পছন্দ করলেও সম্পর্ক নিয়ে কোনও প্রতিশ্রুতির পথে হাঁটতে চায় না কবীর। ব্যক্তিগত জীবনের এই সব জটিলতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে ‘মেড ইন হেভেন’-এর বিয়ের ব্যবসা। সেই বিয়েতে বৈষম্যের ভাগ যতটা, আনন্দের ভাগ সেই তুলনায় অনেক কম। গায়ের রঙের কারণে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় শ্যামলা কনেকে। দলিত সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ার জেরে প্রশ্নের মুখে দাঁড়াতে হয় আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকাকেও। এবং যৌন অভিরুচির ভিত্তিতে একঘরে করে রাখা হয় এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর দুই পাত্রীকে। শুধু তাই-ই নয়, ‘মেড ইন হেভেন’-এর দ্বিতীয় সিজ়নে উঠে এসেছে বহুগামিতা ও গার্হস্থ্য হিংসার মতো সংবেদনশীল বিষয়ও। নারী মাত্রেই ধৈর্য ও সহানুভূতিশীলতার মূর্ত প্রতীক, ক্ষমাশীল হওয়া তার সহজাত ধর্ম... এমন কিছু বদ্ধমূল ধারণার প্রেক্ষিতেও জোর গলায় মত রেখেছে জ়োয়া ও রীমার এই সিরিজ়। প্রথম সিজ়নের মতো দ্বিতীয় সিজ়নেও ভিডিয়োগ্রাফার কবীরের তরফে উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ ‘সোশ্যাল কমেন্ট্রি’। যে যুগে সম্পর্কের ভিত এতটাই নড়বড়ে, সেই যুগে দাঁড়িয়ে বিয়ের মতো সামাজিক প্রতিষ্ঠান কতটা ভরসাযোগ্য? আজকের দিনে দাঁড়িয়ে প্রেম থেকে বিয়ের উত্তরণ কি আদৌ ‘মেড ইন হেভেন’? প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টার সিরিজ়়ে এই প্রশ্নই উঠে আসে বার বার।
যে হেতু ‘মেড ইন হেভেন’-এর দ্বিতীয় সিজ়ন এটি, প্রথম সিজ়নের সঙ্গে তুলনার উদ্রেক হওয়া তাই এক প্রকার প্রত্যাশিতই বটে। সেই দিক থেকে বিচার করলে প্রথম সিজ়নের তুলনায় দ্বিতীয় সিজ়ন কিছুটা স্লথ। প্রতিটি পর্বের দৈর্ঘ্য গত সিজ়নের পর্বের তুলনায় কিছুটা বেশি। চিত্রনাট্যের বাঁধন টানটান হলেও গুরু-গম্ভীর ‘জ্ঞান’-এর ভিড়ে কিছু কিছু জায়গায় তা বেশ স্থবির হয়ে পড়ে। তবে সেই জ্ঞানই কিন্তু ‘মেড ইন হেভেন’ দ্বিতীয় সিজ়নের মূল নির্যাস। দিল্লির আপাত উচ্চবিত্তের সামাজিকতায় মোড়কে বাড়তে থাকা পচনের মুখোশ খোলে জ়োয়া, রীমা ও অলংকৃতার এই সৃষ্টি। আয়নার সামনে দাঁড়ালে কী চোখে পড়ে সামাজিক আচার ও রীতির ভারে চাপা পড়ে যাওয়া নারীদের? গায়ের রং, দগদগে ক্ষত না নিজের হারিয়ে যাওয়া মর্যাদাবোধ ও আত্মবিশ্বাস? সত্যিই কি ভালবাসার জোরে সঙ্গীর সাত খুন মাফ করে দিতে পারে তারা? না কি দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ঘুরে দাঁড়ায় নরম মনের স্ত্রীরাও? নির্দিষ্ট উত্তর দিতে না পারলেও গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নের অবতারণা করে ‘মেড ইন হেভেন’।
চিত্রনাট্যের পাশাপাশি ‘মেড ইন হেভেন’-এর অন্যতম বড় জোরের জায়গা অভিনয়। প্রথম সিজ়নের তুলনায় তারা খন্নার চরিত্রে দ্বিতীয় সিজ়নে তুলনামূলক ভাবে একরৈখিক হলেও নিজের তরফে কোনও খামতি রাখেননি শোভিতা ধুলিপালা। ভালবাসা ও অধিকার নিয়ে যে দ্বন্দ্বের সঙ্গে নিত্য দিন যুঝেছে তারা, তা আরও স্পষ্ট হয়েছে শোভিতার অভিনয়ে। কর্ণের চরিত্রে অর্জুন মাথুর অদ্বিতীয়। শরীরের প্রতিটি পেশির মাধ্যমে কর্ণের চরিত্রের অসহায়তা ও কমনীয়তা ব্যক্ত করেছেন অর্জুন। আদিলের চরিত্রে জিম সর্ভ পরিমিত। দ্বিতীয় সিজ়নে খুব একটা বেশি সুযোগ পাননি কল্কি কেঁকলা। তবে আদিলের সঙ্গে সম্পর্কের অনিশ্চয়তা নিয়ে যে মানসিক দোটানার মুখোমুখি হয়েছে ফয়জ়া, তা সুচারু ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কল্কি। কবীরের চরিত্রে শশাঙ্ক অরোরা প্রথম সিজ়নের থেকে আরও কিছুটা বেশি পরিণত। জ্যাজ় হিসাবে শিবানী রঘুবংশীও মনে থেকে যান। তবে অভিনয়ের নিরিখে দ্বিতীয় সিজ়নের সব থেকে বেশি নজরকাড়া মোনা সিংহ। তুখোড় বুদ্ধিমতী ব্যবসায়ীর অন্তরালে যে এক জন সংবেদনশীল ও সহমর্মী নারী নিজের অতীতের সঙ্গে লড়াই করছে প্রতিনিয়ত— মোনার অভিনয়ে জীবন্ত হয়েছে বুলবুল জহুরির চরিত্রের সেই দোটানা। জহুরির চরিত্রে বিজয় রাজ ধারাল এবং ‘টু-দ্য-পয়েন্ট’। চোখ টেনেছেন রূপান্তরিত অভিনেত্রী ত্রিনেত্রা হালদারও। চিকিৎসকের পেশা থেকে অভিনয়ের জগতে পা রেখেছেন ত্রিনেত্রা। সিরিজ়ে তাঁর চরিত্র মেহেরও এক জন রূপান্তরিত নারী। এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রতি আপাত-আধুনিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক কেমন, তা চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয় ‘মেড ইন হেভেন’।
প্রথম সিজ়নের মতো দ্বিতীয় সিজ়নের প্রতিটি বিয়েও বেশ ঘটনাবহুল। এক বিয়েতে ব্রিটিশ এক পরিবার তাদের বাড়ির হবু বৌমার গায়ের রং নিয়ে অস্বস্তিতে ভোগে। এক বিয়েতে হবু স্বামীর স্বভাব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া সত্ত্বেও স্রেফ ভালবাসার দোহাই দিয়ে শরীরে ক্ষত নিয়ে তাকে বিয়ে করে পাত্রী (ম্রুণাল ঠাকুর)। একটি বিয়েতে আবার জাতপাতের জেরে নিজের পছন্দ মতো বিয়ের অনুষ্ঠান নির্বাচন করতে গিয়েও ধাক্কা খায় কনে (রাধিকা আপ্তে)। অন্য একটি বিয়ের গল্পে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের জন্য বাড়িতে সব আয়োজন করে তারই প্রথমা স্ত্রী (দিয়া মির্জ়া)।
‘মেড ইন হেভেন’-এর প্রথম সিজ়নে সমকামিতা ও এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর সদস্যদের সমানাধিকার নিয়ে সরব হয়েছিলেন জ়োয়া ও রীমা। দ্বিতীয় সিজ়নের গোটাটা জুড়েই রয়েছে সেই প্রসঙ্গ। শুধু তাই-ই নয়, নতুন সিজ়নের দুই পাত্রীর ‘কমিটমেন্ট সেরিমনি’-রও সাক্ষী থেকেছে এই সিরিজ়। দ্বিতীয় সিজ়নে গুরুত্ব পেয়েছে জাতিগত বৈষম্যের মতো অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয়ও। নীরজ ঘাওয়ান পরিচালিত ওই পর্ব সম্ভবত ‘মেড ইন হেভেন’-এর দ্বিতীয় সিজ়নের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। ‘মেড ইন হেভেন’-এর এই সিজ়নে যৌন হেনস্থার প্রসঙ্গে দিল্লির ‘বয়েজ় লকার রুম’ কাণ্ডের আভাসও রেখেছেন জ়োয়া ও রীমা। স্কুল স্তরেই ‘সেক্স এডুকেশন’ তথা যৌনশিক্ষার গুরুত্ব যে কতটা, দর্শককে সেই ধারণা দিতে চেয়েছেন সিরিজ়ের স্রষ্টারা।
‘মেড ইন হেভেন’-এর দ্বিতীয় সিজ়নের অন্যতম ইউএসপি তার কেতাদুরস্ত মুডবোর্ড। নামী দামি ডিজ়াইনারের পোশাক থেকে শুরু করে বিলাসবহুল প্রাসাদের বিয়ে... কী নেই সেখানে! তথাকথিত দিল্লির প্রাচুর্য থেকে বিদেশি বিয়ের বিলাসিতা, বিত্ত প্রদর্শনের দিক থেকে কোনও খামতি রাখেননি নির্মাতারা। বিশেষত, স্টাইলিস্ট ভাবনা শর্মার সৌজন্যে শোভিতা ধুলিপালা, কল্কি কেঁকলা, ত্রিনেত্রা হালদার ও মোনা সিংহের উপর থেকে চোখ সরানো দায়। শুধু তাই-ই নয়, ‘মেড ইন হেভেন’-এর দ্বিতীয় সিজ়নের জন্য পোশাকশিল্পী সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও হাত মিলিয়েছেন জ়োয়া, রীমা ও অলংকৃতা। সিরিজ়ের একটি পর্বের অনেকটা জুড়ে রয়েছেন সব্যসাচী ও তাঁর ডিজ়াইন। শুধু যে পোশাক তৈরি নয়, অভিনয় করলেও যে তিনি সহজেই সকলের নজরে আসতে পারতেন, তা কিছু দৃশ্যে তাঁর চাউনি এবং শরীরী ভাষাই প্রমাণ করে দিয়েছে। শুধু সব্যসাচী নন, ‘মেড ইন হেভেন’-এর নতুন সিজ়নে রয়েছে আরও একটি চমক, যা খোলসা করে দিলে ‘স্পয়লার’ ফাঁস করার অভিযোগ উঠতেই পারে!
তবে সবটুকুই কি নিখুঁত ও পরিপাটি? সিরিজ়ের গতি নিয়ে একটা খুঁতখুঁতানি তো আছেই। পাশাপাশি, এক ঘণ্টার বেশি সময়ের পর্ব দেখতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই মনে হয়েছে, সিরিয়াস বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে হিউমরকে ততটা গুরুত্ব দেননি জ়োয়া, রীমা ও অলংকৃতা। যদিও ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরার বিয়ের পর্ব সেই খামতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে দিয়েছে। প্রথম সিজ়নের একেবারে ফ্রন্টফুটে ছিল তারা খন্না ও তার জীবন। দ্বিতীয় সিজ়নে কর্ণের জীবনের জটিলতার উপরে আলো ফেলতে গিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে তারা। আদিল তথা জিম সর্ভের স্ক্রিনটাইম নিয়ে অভিযোগ তেমন নেই বটে। তবে, ফয়জ়া হিসাবে কল্কির চরিত্রকে বেশ উপেক্ষাই করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে এই সিজ়নে। কোনও উত্তর মেলেনি জ্যাজ় ও কবীরের সম্পর্কেরও। তবে কি তৃতীয় সিজ়নের প্রতিশ্রুতি দিতেই কিছু সুতো আলগা রেখে দিয়েছেন জ়োয়া ও রীমা? যত দিন প্রশ্নের উত্তর না মিলছে, তত দিন পরবর্তী সিজ়নের আশাতেই বুক বাঁধবেন সিরিজ়ের অনুরাগীরা।