Gadar 2 Movie Review

লজিক নয়, ম্যাজিক দেখুন! সানি দেওলের ‘গদর ২’ দেখে জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন

মধ্য কলকাতার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সিনেমা হল ‘হাউসফুল’। একটা আসনও খালি নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার কাটিয়ে পর্দায় আলো ফুটতেই হইহই কাণ্ড! কেমন হল ‘গদর ২’? জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement
রুদ্রদেব ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৩ ১৯:১৬
Review of Sunny deol and Ameesha patel starrer Gadar 2

‘গদর ২’ ছবির একটি দৃশ্যে অভিনেতা সানি দেওল। ছবি: সংগৃহীত।

মধ্য কলকাতার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সিনেমা হল ‘হাউসফুল’। একটা আসনও খালি নেই। দর্শকদের (যাঁদের সিংহভাগই মধ্যবয়স্ক এবং প্রৌঢ়) উত্তেজনা মেশানো চাপা গুঞ্জন। ঘুটঘুটে অন্ধকার কাটিয়ে পর্দায় আলো ফুটতেই হইহই কাণ্ড! তারস্বরে চিৎকার করছেন দর্শক। একের পর এক সিটির আওয়াজ। যেন কে কত জোরে সিটি দিতে পারেন, তার লড়াই। সেই উত্তেজনা, উন্মাদনার মধ্যে দিয়েই শুরু হল ‘গদর ২’। ২০০১ সালের সুপারহিট ছবি ‘গদর’-এর দ্বিতীয় পর্ব।

Advertisement

এই ছবির প্রেক্ষাপট ১৯৭১ সাল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়। পূর্ব পাকিস্তানে (অধুনা বাংলাদেশ) তখন ‘জয় বাংলা’ এবং বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের জয়গান। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে ভারতীয় সেনা। যা নিয়ে আবার ভারতকে চোখ রাঙাতে শুরু করেছে পাকিস্তান। সেই সময় কাশ্মীরের এক নিরিবিলি জায়গায় স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে বসবাস করছে তারা সিংহ (সানি দেওল)। সেই তারা সিংহ, যে বছর ২০ আগে স্ত্রী শাকিনাকে (আমিশা পটেল) উদ্ধার করতে পাকিস্তানে যায়। সে সময় পাকিস্তানের প্রশাসনকে পাঁচ গোল দিয়ে এবং অনায়াসে একটি টিউবওয়েল তুলে পাক সেনা পিটিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে বীরদর্পে ভারতে ফিরে আসে। স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে এখন সে নির্ঝঞ্জাট জীবনযাপন করে। তার এখন একটাই লক্ষ্য— পুত্র জিতেকে (উৎকর্ষ শর্মা) পড়াশোনা শিখিয়ে উপযুক্ত মানুষ করে তোলা। তবে তারার সুখের সংসারে ‘রাহু’ হয়ে আসে পাক সেনার মেজর জেনারেল হামিদ ইকবাল (মণীশ ওয়াধওয়া। যিনি সম্প্রতি ‘পাঠান’-এও একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন)। হামিদের জীবনের লক্ষ্য, যেনতেনপ্রকারেণ ভারতের ক্ষতি করা এবং তার সেনাবন্ধুদের মৃত্যুর জন্য দায়ী তারাকে খুঁজে বার করা। এর মধ্যেই বিশেষ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে পাকিস্তানে যেতে হয় তারা-পুত্রকে। বাবার মতো পুত্রও এক পাক তরুণীর প্রেমে পড়ে। তবে শীঘ্রই ধরা পড়ে যায় হামিদের হাতে। চলতে থাকে অকথ্য অত্যাচার। এর পরই গল্প ঘুরে যায় চেনা ছকে। ছেলেকে উদ্ধার করতে পাকিস্তানে যায় তারা। আবার পাক সেনা পিটিয়ে ছেলেকে নিয়ে দেশে ফিরে আসে। এ যেন নতুন বোতলে পুরনো মদ পরিবেশন। স্ত্রীর বদলে পুত্রকে উদ্ধার। পার্থক্য এটাই যে, পেশায় ট্রাকচালক তারা এ বার টিউবয়েলের বদলে ল্যাম্পপোস্ট দিয়ে শত্রুনিধন করেছে। পাশাপাশি, বাপের সঙ্গে পাক সেনা পেটানোয় হাত মিলিয়েছে ছেলেও। মোটের উপর গল্প এই। নব্বই দশকের ছকে বাঁধা দেশাত্মবোধক ছবির চিত্রনাট্য যেমন হত আর কি। সংলাপও সে রকমই রক্ত-গরম করা।

Review of Sunny deol and Ameesha patel starrer Gadar 2

আমিশা এবং উৎকর্ষের অভিনয় বিশেষ নজর কাড়েনি। ছবি: সংগৃহীত।

ছবির ক্যামেরা আর সম্পাদনাও গল্পের স্বাদের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে। ছবির গানগুলি ইতিমধ্যেই অনেকেই শুনেছেন। পুরনো গানগুলির পাশাপাশি নতুন গানগুলিও দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে পারবে। তবে টেকনিক্যাল দিক বাদ দিলে আসে অভিনয়ের কথা। এই ধরনের ছবিতে অভিনয়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রথম ছবিতেও সানি দেওলের সংলাপ, বাচনভঙ্গি— সব বৈগ্রহিক হয়ে উঠেছিল। তবে সেটা বহু বছর আগের কথা। এই ছবিতে তিনি সেই পুরনো ম্যাজিক কি ফিরিয়ে আনতে পারলেন?

সানি এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে সাবলীল। শত্রুপক্ষের উদ্দেশে হুঙ্কার ছেড়ে অভিনয় করার ক্ষেত্রে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তবে আমিশা এবং উৎকর্ষের অভিনয় বিশেষ নজর কাড়েনি। বরং কথায় কথায় অমিশার ঘাড় বেঁকিয়ে কান্না এবং উৎকর্ষের ধর্মেন্দ্রর মতো করে কথা বলার চেষ্টা বিরক্তির উদ্রেক ঘটিয়েছে। মুসকানের চরিত্রে সিমরত কউরের অভিনয় মোটামুটি। তবে অভিনয়ের দিক থেকে মণীশ অনেক এগিয়ে রয়েছেন বাকিদের তুলনায়। খলনায়ক পাক মেজর জেনারেলের চরিত্রে তাঁর অভিনয় অনবদ্য। অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিন্‌হার পুত্র লভ সিন্‌হাকেও এই ছবির একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে। তবে তা আলাদা করে বলার মতো কিছু নয়। ছবিতে বেশ কয়েকটি জায়গায় জোর করে হাসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কেবল, সানি এবং টিউবয়েল ‘জুটি’ দেখে পাক সেনার ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দর্শককে অনাবিল আনন্দ দিয়েছে। প্রথম ছবির বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় দৃশ্য দ্বিতীয় পর্বে ব্যবহারের সিদ্ধান্তও প্রশংসনীয়।

Review of Sunny deol and Ameesha patel starrer Gadar 2

শত্রুপক্ষের উদ্দেশে হুঙ্কার ছেড়ে অভিনয় করার ক্ষেত্রে সানির জুড়ি মেলা ভার। ছবি: সংগৃহীত।

এই ছবিতে চরিত্র কেবল দু’টি— তারা সিংহ এবং পাকিস্তান। এই দুই চরিত্রের সম্পর্কের বুনোট দেখতেই কলকাতার (সম্ভবত দেশের অনেক জায়গায়) বেশির ভাগ হলে উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ছে প্রথম সপ্তাহান্তে। একই সঙ্গে ধরা পড়েছে ছবির বিভিন্ন দৃশ্য এবং সংলাপ নিয়ে দর্শকের উন্মাদনা। ‘হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ’ (যা ‘গদর’-এও ছিল) সংলাপে হল হাততালিতে ফেটে পড়ছে। বাপ-বেটার চরিত্রে সানি এবং উৎকর্ষের কয়েকটি দৃশ্য নজর কেড়েছে।

তবে একটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। দেশপ্রেম সংক্রান্ত ছবি হলেও প্রতিবেশী দেশকে অহেতুক ছোট করে দেখানো হয়নি ‘গদর ২’-এ। পাকিস্তানের শাসকদের একাংশ ধূর্ত এবং ক্ষমতালোভী হলেও সে দেশের আমজনতা যে বিপদে পড়া এক জন ভারতীয়ের দিকে অনায়াসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে, তা দেখানো হয়েছে এই ছবিতে।

তবে ছবির কয়েকটি দৃশ্যে অনেক চেষ্টা করেও যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেমন, অমিশার চোখের মণি নীল রঙের হয়ে গেল কী ভাবে, তার উত্তর পাওয়া যায়নি। উত্তর পাওয়া যায়নি, উৎকর্ষকে পাকিস্তানে প্রবেশের সময় পাক সেনার প্রশ্নপর্বের সম্মুখীন হতে হলেও সানি কী ভাবে গটগট করে সে দেশে ঢুকে গেলেন! তবে এই ছবিতে ‘লজিক’ খুঁজলে হবে না। পুরোটাই ‘ম্যাজিক’। যে ম্যাজিক ২২ বছর আগে দেখানো হয়েছিল। ২০২৩-এ এসে সেই জাদুকর বৃদ্ধ হয়ে গেলেও পুরনো খেলাই নতুন করে দেখিয়ে দিব্যি হাততালি কুড়িয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন।

Review of Sunny deol and Ameesha patel starrer Gadar 2

এই ছবিতে চরিত্র কেবল দু’টি— তারা সিংহ এবং পাকিস্তান। ছবি: সংগৃহীত।

পরিচালক অনিল শর্মার জন্য ‘গদর’-এর দ্বিতীয় পর্ব পরিচালনার সিদ্ধান্ত যথেষ্ট সাহসী ছিল। বিগত কয়েক বছরে সানির একটি ছবিও সাফল্যের মুখ দেখেনি। পাশাপাশি, নতুন ধরনের গল্পের ছড়াছড়িতে দর্শকের স্বাদ বদলেছে। তাই এই সময়ে ‘গদর ২’ কতটা চলবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। উত্তর দিয়েছেন অনিল। মনের মতো না হলেও সেই উত্তর পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। যদিও ‘গদর’ হওয়ার ক্ষমতা নেই ‘গদর ২’-এর। ‘কাল্ট’ হয়ে উঠতে পারবে না এই ছবি। বছরের পর বছর ভারতীয় দর্শকও এই ছবি নিয়ে চর্চা করবেন না। হয়তো উত্তেজনা মাত্র কয়েক দিনের। তবে আয়ের অঙ্কে এই ছবি সাফল্যের মুখ দেখবে বলেই ধরে নেওয়া যায়। অন্তত তেমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে ছবির প্রথম দিনের আয়।

আরও পড়ুন
Advertisement