Rocky Aur Rani Kii Prem Kahaani Review

কুছ কুছ হল কই! ‘রকি অওর রানি কি প্রেম কহানি’ দেখে প্রশ্ন আনন্দবাজার অনলাইনের

সাত বছর পর ছবি পরিচালনা করলেন কর্ণ জোহর। চেষ্টা করেছেন পারিবারিক ছবি বানানোর। সঙ্গে আছে মিষ্টি প্রেমও। কিন্তু সামাজিক বার্তা দিতে গিয়েও তার কাটল।

Advertisement
পৃথা বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৩ ২০:৫৫
Review of Karan Johar directed Rocky Aur Rani ki Prem kahani starring Alia Bhatt and Ranveer Singh

‘রকি অউর রানি কি প্রেম কহানি’ ছবিতে রণবীর সিংহ ও আলিয়া ভট্ট। ছবি: সংগৃহীত।

হম এক বার জিতে হ্যায়, এক বার মরতে হ্যায়, শাদি ভি এক বার হোতি হ্যায়, অওর... কর্ণ জোহর ভি এক হি বার ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ বনাতা হ্যায়!

নব্বইয়ের দশকে যাঁরা বড় হয়েছেন, তাঁদের কাছে শাহরুখ খান, কাজল, প্রেম আর বলিউড প্রায় সমার্থক। এবং সেই ধারণায় কর্ণ জোহরের বড়সড় অবদান রয়েছে বইকি। ১৯৯৮ সালে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ দিয়ে তিনি পরিচালনা শুরু করেছেন। তার পর পেরিয়ে গিয়েছে ২৫ বছর। পরিচালনার পাশাপাশি প্রযোজনাতেও হাত পাকিয়েছেন তিনি। এবং ‘ধর্ম প্রডাকশন’ জায়গা করে নিয়েছে বলিউডের প্রথম সারির প্রযোজনা সংস্থার তালিকায়। তাদের ঝুলিতে গত বছর ‘আরআরআর’-এর মতো বড় কাজ ছিল। আবার পাশাপাশি তাঁরা অস্কারজয়ী গুনীত মোঙ্গার সঙ্গেও হাত মিলিয়েছেন অন্য রকম গল্প বলার জন্য। প্রযোজনার কাজ যে কর্ণ ভালই সামলাচ্ছেন, তা স্পষ্ট। কিন্তু পরিচালনা?

Advertisement

ছবির সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন কর্ণ। ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এর সাত বছর পর তৈরি করেছেন ‘রকি অওর রানি কি প্রেম কহানি’। প্রেম, পারিবারিক ড্রামা, জাঁকজমক— ঠিক যে ধরনের গল্প কর্ণ বলতে ভালবাসেন, সে রকমই একটি গল্প বুনেছেন। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। যত দিন নিজের গল্পগুলি নিজের মতো করে বলতেন, তত দিন সে ছবিগুলি দর্শক বার বার বসে দেখতেন। কিন্তু এখন কর্ণ জানেন যে, যে গল্পগুলি বলতে তিনি স্বচ্ছন্দ, সেগুলি কালের নিয়মে হারিয়ে গিয়েছে। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে তাই নিজেকে ভাঙার চেষ্টা করেন কর্ণ। নিজের গল্পের সঙ্গে নানা রকম সামাজিক বার্তা দেওয়ারও চেষ্টা করেন। দু’দিক সামলাতে গিয়ে যে ছবিগুলি হালে তিনি বানান, সেগুলি আগের মতো আর মন ছুঁতে পারে না। আসলে গল্পে নিজেরই বিশ্বাস না থাকলে তা দর্শককেই বা গুছিয়ে বলবেন কী করে! ‘রকি অওর রানি...’-তেও এক সমস্যা হয়েছে।

Review of Karan Johar directed Rocky Aur Rani ki Prem kahani starring Alia Bhatt and Ranveer Singh

বলি তারকাদের পাশাপাশি ‘রকি অওর রানি কি প্রেম কহানি’ ছবিতে অভিনয় করে নজর কেড়েছেন টোটা রায়চৌধুরী এবং চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

কর্ণ কিন্তু চেষ্টা করেছিলেন খুব। ছবিতে রকি (রণবীর সিংহ) পঞ্জাবি, রানি (আলিয়া ভট্ট) বাঙালি। দু’জনের মধ্যে কোনও মিল না থাকলেও তাদের প্রেম হয়ে যায়। ঠিক কী করে হয়, তা বুঝে ওঠার আগেই প্রেমের গল্প পারিবারিক গল্পে পরিণত হয়। ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’-এর কায়দায় রকি বেরিয়ে পড়ে রানির বাড়ির লোকের মন জয় করতে । আর যে হেতু ‘দিলওয়ালে..’র পর অনেকটা সময় পেরিয়ে এসেছি আমরা, তাই রানিও রকির বাড়ি যায়। তবে মন জয় করতে নয়, বলা ভাল, চিন্তাধারা বদলাতে। তার পর গল্পে পুরুষতন্ত্র এবং লিঙ্গ-পরিচয় নিয়ে প্রচলিত ধারণা ভাঙার পাঠ ঢুকে পড়ে। এ সবের চাপে প্রেমকাহিনিটা অনেকটা হারিয়ে যায়।

কর্ণ অবশ্য এ বার অনেক ক্ষেত্রে সৎ চেষ্টা করেছিলেন।বলিউডের বেশ কিছু পুরনো কাজকে শ্রদ্ধার্ঘ্য দিয়েছেন গল্পের মাধ্যমে। পুরনো প্রেমের গান সারা ছবি জুড়ে খুব সুন্দর ভাবে ব্যবহার করেছেন। নিজের অনেক ছবির বৈগ্রহিক সংলাপ বা গোটা সিকোয়েন্স নতুন করে ব্যবহার করেছেন। নিজের সিগনেচার কায়দায় প্রথম সারির কিছু তারকাদের দিয়ে ক্যামিয়ো করিয়েছেন। কিছু কিছু জিনিস মন ছুঁয়ে যাবে নস্ট্যালজিয়ার খাতিরে, আবার কিছু কিছু জিনিস দাগ কাটবে তাঁর পরিচালনার গুণে। যেমন ‘দেবদাস’ ছবির ‘ডোলা রে ডোলা’ গানের ব্যবহার। এই গোটা সিকোয়েন্সটি ছবির অন্যতম সেরা অংশ।

কর্ণের নায়ক-নায়িকা জব্বর। কশ্মীরের বরফ ঢাকা পাহাড়ের কোলে শিফন শাড়ি পর ছিপছিপে আলিয়াকে দেখে কে বলবেন, তিনি ঠিক তার দু’মাস আগে মা হয়েছিলেন! তবে ‘স্টুডেন্ট’ এখন অনেক পরিণত। শুধু পর্দায় দৃষ্টিসুখের জন্য নয়, দর্শক তাঁকে মনে রাখেন অভিনয় গুণের জন্যই। এই ছবিতেও বেশ কিছু লম্বা মনোলগে আলিয়া বেশ সাবলীল। তাঁর অবাঙালি কথা বলার টানে বাংলা শব্দবন্ধ শুনে বাঙালির মন খচখচ করতেই পারে, বাকিদের খুব একটা সমস্যা হবে না। কর্ণের নায়িকারা এখন নারীবাদী হয়। তারা নিজের লড়াই নিজে করে। কিন্তু নায়কের সঙ্গে প্রেম কি আগের মত জমিয়ে করে?রণবীর রকি হিসাবে অনবদ্য। এই ছবির সেরা পাওনা তাঁর অভিনয়। মাচো পঞ্জাবি মুন্ডা হিসাবে তিনি নাচ-গান-কমেডিতে যতটা পটু, আবেগঘন দৃশ্যে কান্নায় ভেঙে পড়ে নিজের নিরাপত্তহীনতার কথা বলতেও ততটাই সাবলীল। চকমকে আঁটসাঁট পোশাকে বলিউড নাচ, আবার আংগারখা পরে কত্থক— এত কিছু রণবীর ছাড়া কর্ণ আর কাকে দিয়েই বা করাতেন? তাঁর অভিনয়ের সামনে ফিকে বাকি সকলেই।

কয়েক জনের কথা আলাদা করে উল্লেখ করা উচিত। শাবানা আজ়মি পর্দায় নজরকাড়া। এবং তাঁর বাংলা উচ্চারণ আলিয়ার চেয়ে অনেকটা ভাল। জয়া বচ্চনের চরিত্রটা যেন ‘কভি খুশি কভি গম’-এর অমিতাভ বচ্চনের চরিত্রের নারী সংস্করণ। পর্দায় তাঁর উপস্থিতি উপেক্ষা করতে পারবেন না। রানির মা-বাবার চরিত্রে ছিলেন চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় এবং টোটা রায়চৌধুরী। এবং দু’টি চরিত্রই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পেয়েছে গল্পে। এমন নয় যে, দু’টি দৃশ্যে মুখ দেখিয়েই হারিয়ে যাবেন। টোটাকে একদম অন্য রকম চরিত্রে দেখতে পাবেন বাঙালি দর্শক। কারণ টলিউডে এই ধরনের চরিত্রে তাঁকে কখনও ভাবা হয়নি। এই ছবিতে তাঁর অভিনয় শুধু বাঙালি নয়, চমকে দেবে বাকি দেশের দর্শককেও।

কর্ণের ছবির গান সব সময়েই সুপারহিট হয়। কেরিয়ারে পরের দিকেও, তাঁর ছবি যেমনই হোক, ছবির গানে মু্গ্ধ হয়েছেন দর্শক। কিন্তু এই ছবিতে অরিজিৎ সিংহের ‘তুম ক্যায়া মিলে’ ছাড়া আর কোনও গানই মনে থাকে না। বরং পুরনো বলিউড গানগুলি অনেক বেশি উপভোগ্য।

কর্ণ জোহরের দুনিয়াটা আলাদা। তা আপনি না-ও চিনতে পারেন। সেখানে নিউজ়রুমে সঞ্চালিকা যা ইচ্ছা বলতে পারে, করতে পারে। তার প্রেমিক যখন তখন অফিসে ঢুকে পড়তে পারে। এই দুনিয়ায় বিয়ে যতটা জাঁকজমকের সঙ্গে হয়, কারও শেষকৃত্যও ততটাই বড় মাপের হয়। সেখানে দারুণ চিকনকারী কারুকাজের শেরওয়ানি পরে মুখাগ্নি করা হয়। সে সব দেখতে মন্দ লাগে না। অনেকে বলেছিলেন, এই ছবিতে রবীন্দ্রনাথকে অপমান করে বাঙালিদের ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে। ছবি দেখে মনে হয় পঞ্জাবিরা আরও চটবেন। তবে সে সব স্টিরিয়োটাইপ পর্দায় দেখতে মন্দ লাগে না। কর্ণ তো বরাবরই এমন অনেক স্টিরিয়োটাইপ বেচেই দর্শকের মন জয় করেছেন। কিন্তু অসুবিধা হয়, গল্পের বুনোট ভাল না হলে। ‘কভি খুশি কভি গম’ও পারিবারিক ছবি ছিল। কিন্তু সেখানে শাহরুখ খান-কাজলের প্রেম এখনও মনে রেখেছে দর্শক। দুর্ভাগ্য, সেই রসায়ন আলিয়া-রণবীরের মধ্যে ফুটে ওটে না। কর্ণের হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও ‘কুছ কুছ’ হল না!

কহে দিয়া না... ব্যস কহে দিয়া!

আরও পড়ুন
Advertisement