‘বিউটি সার্কাস’ ছবির একটি দৃশ্যে অভিনেত্রী জয়া আহসান। ছবি : সংগৃহীত।
বিউটি সার্কাসের মালিক বিউটি। সে বাংলাদেশের বানিসান্টা গ্রামে তার সার্কাস তাঁবু ফেলেছে। তার সার্কাস দারুণ জনপ্রিয়। শ’য়ে শ’য়ে গ্রামবাসী এসে সেই সার্কাসের খেলা দেখে। বিউটি নিজে দেখায় সমস্ত রোমহর্ষক খেল। তার সার্কাসে পাগল আমজনতা আর তার প্রেমে পাগল স্থানীয় রাজনীতিবিদ থেকে সমাজবিরোধী। রাজনীতিবিদ যদি আসে গোলাপফুল নিয়ে, তো জমিদারের ছেলে আসে ডালি সাজিয়ে। সবাই চায় বিউটি ‘আমার সঙ্গে চলুক’। কিন্তু ওই গোলাপের মধ্যেই তো কাঁটা! বিউটির অবশ্য এ সবে মন নেই। তার মনকে কুরে কুরে খায় অন্য কিছু। সেখানেই গল্পের বীজ লুকিয়ে আছে।
সেটা মুক্তিযুদ্ধের সময়। বিউটি তখন ছোট্ট এবং বিউটি সার্কাসের মালিক তার বাবা। সে উদার একজন মানুষ। তাকে কাবু করতে পারেনি সেই সময়কার রাজনৈতিক নির্যাতন। রাজাকারদের কাছে মাথা নোয়াবে না বলে, ‘জয় পাকিস্তান’ বলতে নারাজ বলে তাকে ছোট্ট বিউটির সামনেই কোতল করা হয়। এই ঘটনা বিউটির মনে গভীর ছাপ ফেলে।
বড় হয়ে যখন বিউটি তার বাবার সার্কাসের সফল মালিক, তার সামনে এ বার বাধা হয়ে আসে ধর্মীয় মৌলবাদ। মৌলবাদীরা বিধান দেয়, সার্কাসের নামে চলছে নষ্টামি। গ্রামের সবার মাথা খাচ্ছে এই খেল। সুতরাং, অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এই সার্কাস। পুড়িয়ে দেওয়া হয় তার তাঁবু, মেরে ফেলা হয় বিউটির ভ্রাতৃসম এক জোকারকে। বিউটি কি মেনে নেবে এই বিধান? না কি ‘‘আমি শুধু বিউটি সার্কাসের মালিক নই, আমি এক জন শহিদের মেয়ে’’, বলে গর্জে ওঠা বিউটি এর প্রতিশোধ নেবে? এ তো শুধু তার সার্কাসের প্রসঙ্গ নয়, এর সঙ্গে মিশে আছে তার বাবার হত্যার মতো নিষ্ঠুর স্মৃতিও।
কলকাতায় চলতি চতুর্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবের প্রথম দিনেই প্রদর্শিত হয় মাহমুদ দিদার পরিচালিত ‘বিউটি সার্কাস’। পরিচালক সাম্প্রতিক সময়ে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা ধর্মীয় মৌলবাদের বিপরীতে রেখেছেন মুক্তিযুদ্ধের উদার উত্তরাধিকারকে। ছবির আখ্যানে বার বার উঠে এসেছে সেই দ্বন্দ্ব।
বিউটির ভূমিকায় জয়া আহসান। ছবি জুড়েই জয়া। তিনি একাই টেনে নিয়ে গিয়েছেন ছবি। তাঁর সপ্রতিভ অভিনয়ের জন্যেই ছবিটি দেখা যায়। ছবির প্রথমার্ধ অনেকটাই শ্লথ। কিছু কিছু দৃশ্য এতটাই শ্লথ যে, ছবি মাঝপথে ছেড়ে বেরিয়ে আসতে ইচ্ছে করে। ছবির দৃশ্য-বিন্যাস খুবই অপেশাদার। তবে দ্বিতীয়ার্ধ তুলনায় অনেকটা গতিশীল। ক্লাইম্যাক্স চলনসই।
অভিনেতারা ভাল। জয়ার সমাজবিরোধী কিন্তু দরদি প্রেমিক রংলালের ভূমিকায় এবিএম সুমন সুন্দর ছাপ ফেলেন। বহু দিন পর ফিরদৌসকে দেখে ভাল লাগে। কিন্তু জমিদারের ছেলে বখতিয়ারের ভূমিকায় বিউটিকে না পেয়ে ফিরদৌসের চরিত্রটির আকস্মিক আত্মহত্যা অত্যন্ত বালখিল্য বলে মনে হয়। নিষ্ঠুর রাজাকারের ভূমিকায় গাজী রাকায়েতও বেশ ভাল অভিনয় করেছেন।
ছবির সঙ্গীত মন্দ নয়। বিশেষ করে একটি গান— শরমিন সুলতানা সুমির গাওয়া ‘বয়ে যাও নক্ষত্র’, ভাল লাগে শুনতে। পরিস্থিতির সঙ্গেও যায়। কিছু দৃশ্য মনে ধরে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, এ পার বাংলায় জয়া যে সমস্ত কাজ করে ফেলেছেন, সে সবের তুলনায় ‘বিউটি সার্কাস’ নেহাতই দুর্বল।