ফ্রিজ়ারের ভিতরে আটক থাকার সময়ে জাহ্নবীর মেকআপ ছবির নাটকীয়তাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে। ছবি: সংগৃহীত।
দেহরাদুন শহরে রাত ক্রমশ গভীর হচ্ছে। শপিং মলের লাইটগুলো একে একে নিভতে শুরু করেছে। আর মলের এক ফাস্ট ফুড বিপণির ফ্রিজারের তাপমাত্রা ক্রমশ হিমাঙ্কের নীচে নামছে। সবার অগোচরে সেই ফ্রিজ়ারের মধ্যে আটকে পড়েছে ২৪ বছর বয়সি এক মহিলাকর্মী— মিলি! সকাল পর্যন্ত টিকে থাকতে কী করবে মিলি? মথুকুট্টি জ়েভিয়ার পরিচালিত ‘মিলি’ মুক্তি পেল। ছবির নামভূমিকায় জাহ্নবী কপূর। ২০১৯ সালে মুক্তি প্রাপ্ত ‘হেলেন’ ছবির হিন্দি রিমেক ‘মিলি’। দুটো ছবিই পরিচালনা করেছেন জ়েভিয়ার। আদ্যোপান্ত সার্ভাইভাল থ্রিলার। কিন্তু ‘মিলি’র মধ্যে সেই শিহরন দেখা গেল কই!
নার্সিং-এ স্নাতক মিলি চাকরি নিয়ে কানাডায় যেতে চায়। কাজ করে শপিং মলের ফাস্টফুড বিপণিতে। মিলির বাবা (মনোজ পাহওয়া) আছে। আর আছে প্রেমিক সমীর (সানি কৌশল)। ছোট শহরের মানুষগুলোর স্বপ্নগুলোকে চিত্রনাট্যে বুনে দিয়েছেন পরিচালক। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে ছবির আসল ক্রাইসিসকে নিয়ে আসতে তিনি অনেক দেরি করে ফেললেন।
‘গুঞ্জন সাক্সেনা: দ্য কার্গিল গার্ল’ বা ‘গুডলাক জেরি’ পেরিয়ে, কেরিয়ারের শুরুর দিকে এই ছবি নির্বাচন অবশ্যই জাহ্নবীর সাহসী পদক্ষেপ। কিন্তু তাঁর চরিত্রটির যেন আরও কিছু দেওয়া বাকি থেকে গেল। ফ্রিজ়ারের ভিতরে আটক থাকার সময়ে জাহ্নবীর মেকআপ ছবির নাটকীয়তাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে। জাহ্নবীর অভিনয় আগের চেয়ে আরও পোক্ত হয়েছে। সম্ভবত এখনও পর্যন্ত এটাই তাঁর সেরা অভিনয়। কিন্তু এই ধরনের ছবিতে দর্শককে সিটে আটকে রাখতে যে ধরনের ছোট ছোট মুহূর্ত প্রয়োজন, তা এই ছবিতে অনুপস্থিত। আসলে টিকে থাকার লড়াইতে চরিত্রটির মনের মধ্যে চলতে থাকা দোলাচল দর্শককেও তার জার্নিতে শামিল করে নেয়। যেটা রাজকুমার রাও অভিনীত ‘ট্র্যাপড’ বা ড্যানি বয়েল পরিচালিত ‘ওয়ান টোয়েন্টি সেভেন আওয়ার্স’-এ রয়েছে। এই ছবিতে কিন্তু তা ঘটেনি।
মিলির বাবার চরিত্রে মনোজ পাহওয়া নিজের সেরাটা দিয়েছেন। মেয়ের সন্ধানে পাগলের মতো ঘুরতে থাকা চরিত্রটির মাধ্যমে তিনি পর্দায় বেশ কিছু ভাল মুহূর্ত তৈরি করতে পেরেছেন। সমীরের চরিত্রে সানি মানানসই। তবে স্বল্প পরিসরে সিনিয়র ইনস্পেক্টর রবি প্রসাদের চরিত্রে আরও এক বার নিজের জাত চিনিয়েছেন সঞ্জয় সুরি। ক্যামিয়ো চরিত্রে জ্যাকি শ্রফের মতো অভিনেতা রয়েছেন একটি মাত্র দৃশ্যে! চিত্রনাট্যের কোথাও কোথাও নারীবিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গি বা সংলাপ হয়তো গল্পের প্রয়োজনে। তবে তা বড্ড গ্যাদগেদে। এই ধরনের ছবির গতির উপর অনেকাংশে নির্ভর করে তার সাফল্য। সেখানে গল্প প্রতিষ্ঠা করতেই পরিচালক অনেকটা সময় নিয়েছেন। গান এবং আবহ সঙ্গীত মনে ধরে। সৌজন্যে এ আর রহমান।
সবশেষে সেই ‘কটু’ কথাটি আরও এক বার না মনে করিয়ে দিলেই নয়— ‘মিলি’ কিন্তু রিমেক। হেলেন হিসেবে অভিনেত্রী অ্যানা বেন ভাল না কি মিলির বেশে জাহ্নবী, সেই তুলনার প্রয়োজন নেই। কারণ কাঠামো এক হলেও দুটো ছবি তাদের সংস্কৃতিগত প্রেক্ষাপটের দিক থেকে আলাদা। কিন্তু তার পরেও প্রশ্ন রয়ে গেল। যাঁরা মূল ছবিটি দেখেননি, তাঁরা সুরক্ষিত। আর যাঁরা ইতিমধ্যেই ওটিটিতে ‘হেলেন’ দেখে ফেলেছেন, ‘মিলি’ তাঁদের খুব বেশি কিছু দিতে পারবে বলে মনে হয় না।