রণিতা দাস ও সৌপ্তিক চক্রবর্তী
শীত ঘুম ভাঙছে ‘ইষ্টিকুটুম’ ধারাবাহিকের ‘বাহামণি’-র। পরপর দুটো ছবি, একটি ওয়েব সিরিজ। বেজায় ব্যস্ত রণিতা দাস। ওটিটি-তে আসছেন প্রেমিক সৌপ্তিক চক্রবর্তীর হাত ধরে। স্বজনপোষণ? নাকি নিজেকে প্রমাণ করেই ‘খেলা শুরু’ সিরিজে নায়িকার ভূমিকায়? অভিনেত্রী অকপট আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে
প্রশ্ন: রাজর্ষি দে-র ‘আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা’-র পর ‘মায়া’-তেও আপনি। সিরিজ ‘খেলা শুরু’ দিয়ে ওয়েব দুনিয়ায় পা রাখছেন। রণিতা এমন প্রত্যাবর্তন চেয়েছিলেন?
রণিতা: একেবারেই তাই। হয়তো তার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। অনেকটা সময় অভিনয় থেকে, ইন্ডাস্ট্রি থেকে দূরে থেকেছি। বদলে বড় পর্দা আর ওয়েব সিরিজে সুযোগ পেলাম। আমি খুশি।
প্রশ্ন: ‘বাহামণি’-কে মুছতে অনেকটা সময় লাগল?
রণিতা: ‘বাহামণি’-কে এড়ানো বা ভোলা কোনওটাই সম্ভব নয়। ‘ইষ্টিকুটুম’-এর ওই চরিত্র ছোট পর্দায় ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। তবে একটি চরিত্রে আটকে থাকা কোনও অভিনেতারই কাম্য নয়। আমারও ছিল না। তাই একটু বেশিই সময় হয়তো নিয়েছি।
প্রশ্ন: দীর্ঘ দিন পরে ক্যামেরার মুখোমুখি হতে ভয় করেছিল?
রণিতা: ক্যামেরা থেকে দূরে থেকেছি মানে অভিনয় ভুলে গিয়েছি, তা নয় কিন্তু। তা ছাড়া, নতুন কাজের ক্ষেত্রে অল্পবিস্তর চিন্তা থাকে। বুক ঢিপঢিপও করে। আবার কাজ করতে করতে সব স্বাভাবিক হয়ে যায়।
প্রশ্ন: প্রেমিক সৌপ্তিক চক্রবর্তীর পরিচালনায় সিরিজে আপনি ইন্দ্রাশিস রায়ের ‘সহবাস সঙ্গী’। সৌপ্তিক বিপরীতে থাকলে বেশি ভাল হত?
রণিতা: অনেকেই সিরিজে জুটি হিসেবে চেয়েছিলেন আমাদের। বলেছিলেন, বাস্তবের রয়াসন পর্দায় প্রতিফলিত হলে বেশি ভাল হবে। অভিনেতা রণিতা যদিও এই মনোভাবকে একেবারেই প্রশ্রয় দেয়নি। ‘খেলা শুরু’ সিরিজ দিয়ে পরিচালনায় হাতেখড়ি সৌপ্তিকের। ফলে, দুটো এক সঙ্গে সামলানোটাও ওর পক্ষে চাপের হয়ে উঠত। তাই যা হয়েছে ঠিকই হয়েছে। বরং ইন্দ্রাশিসের বিপরীতে কাজ করে নিজেকে আরও ঘষে মেজে তৈরি করে নেওয়ার সুযোগ পেলাম।
প্রশ্ন: প্রেমিক পরিচালক মানেই প্রেমিকা নায়িকা হবেন....নিন্দুকেরা কিন্তু স্বজনপোষণের গন্ধ পেয়েছেন!
রণিতা: সেটাই স্বাভাবিক। তবে আমি বলব, চরিত্রের সঙ্গে আমি নিখুঁত ভাবে মেলার পরেই কিন্তু সৌপ্তিক সবুজ সংকেত দিয়েছে। নিজেকে প্রমাণ করে এই সিরিজে জায়গা পেয়েছি।
প্রশ্ন: ‘ব্যক্তি’ সৌপ্তিক আর ‘পরিচালক’ সৌপ্তিকের মধ্যে অনেক পার্থক্য?
রণিতা: (হেসে ফেলে) ‘ব্যক্তি’ সৌপ্তিক যতটা কোমল, ‘পরিচালক’ সৌপ্তিক ততটাই কড়া। প্রত্যেকটা শট বুঝে নিয়েছে। খুশি না হওয়া পর্যন্ত ছাড়েনি। খুঁতখুঁতেমি আর শাসনের চোটে আমায় কাঁদিয়ে ছেড়েছে। যা ব্যক্তিগত জীবনে কখনও হয়নি।
প্রশ্ন: সিরিজের নাম ‘খেলা শুরু’। বিধান সভা নির্বাচনে শাসকদলের শ্লোগান ছিল ‘খেলা হবে’...
রণিতা: মেলানোর চেষ্টা করবেন না। এখানে কোনও রাজনীতির গন্ধ নেই। এই প্রজন্মের চাহিদা মেনে টানটান ভৌতিক-রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ। আর্ট কলেজ থেকে পাশ করেও ‘অভিষেক’ ওরফে ইন্দ্রাশিস জনপ্রিয় শিল্পী হতে পারেনি। রং-তুলির বদলে তার নেশা জুয়া? ছবি নিলাম তার উপার্জনের মাধ্যম। এ ভাবেই ছবি বিক্রি করতে গিয়ে তার আর তার সহবাস সঙ্গী ‘শ্রেষ্ঠা’ ওরফে আমার হাতে আসে একটি অলৌকিক ছবি। সেই ছবির দৌলতে প্রচুর অর্থের মালিক হয়ে উঠি আমরা। তার জন্য একটি খেলা খেলতে হয় আমাদের। কী সেই ‘গেম’? উত্তর রয়েছে ৯ পর্বের এই ভৌতিক-রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজে।
প্রশ্ন: রাজনীতির কী হবে? নির্বাচনের আগে প্রত্যক্ষ ভাবে আপনি আর সৌপ্তিক শাসকদলে যোগ দিয়েছিলেন...
রণিতা: সব করব। কিচ্ছু বাদ দেব না। দল থেকে কাজের যা নির্দেশ দেওয়া হবে সেটা পালন করব। পাশাপাশি, অভিনয়টাও চালিয়ে যাব। অসুবিধে হবে না।
প্রশ্ন: তিন মাধ্যমে কাজ করলেন। অভিজ্ঞতাও নিশ্চয়ই তিন রকম?
রণিতা: তিন মাধ্যম তিন রকমের। ছোট পর্দা একটু যেন দীর্ঘ।। মানে একটি দৃশ্য নিয়ে বা ঘটনা নিয়ে ভেঙে ভেঙে অনেকটা চলা যায়। অন্য দিকে, বড় পর্দায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যা দেখানোর দেখাতে হবে। সেটা আরেক ধরনের চ্যালেঞ্জ। ওয়েব সিরিজ যেন এই দুইয়ের মধ্যবর্তী। বেশি ঝকঝকে, স্মার্ট। একটু বেশি সাহসীও। যদিও আমাদের সিরিজে তেমন কিছু নেই।
প্রশ্ন: রাজর্ষির আগামী ছবিতে রাফিয়াত রশিদ মিথিলাও আছেন। কেমন লাগছে তাঁকে?
রণিতা: (উত্তেজিত হয়ে) এক সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা খুব ভাল। ভীষণ ভাল মানুষ। মাটির কাছাকাছি। কোনও অহঙ্কার নেই। শ্যুটের অবসরে আমরা বাংলাদেশ আর এ দেশের অভিনয় ধারা নিয়ে আলোচনা করেছি। বাংলাদেশের মেয়ে তো! মিথিলা তাই দারুণ রাঁধতে পারেন। ইদে নিজের হাতে ভাল-মন্দ অনেক কিছু রেঁধে আমাদের খাইয়েছেন।
প্রশ্ন: সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে কাজ নিয়ে কিছু কথা হল?
রণিতা: মিথিলা আমার সঙ্গে সহ-অভিনেতা হিসেবে মিশেছেন। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী হিসেবে নয়। তাই নিজেদের কাজ নিয়ে কথা বলেছি। আমার কাজ নিয়ে আলাদা কোনও কথা হয়নি।
প্রশ্ন: টলিউডে এখন ভাঙন কাল। বিয়ের পরেও স্বামী-স্ত্রী ‘সহবাস সঙ্গী’! সেই ভয়েই সাতপাক ঘুরছেন না?
রণিতা: করোনা থেকে ভুগে ওঠার পর আমার জীবন দর্শনটাই বদলে গিয়েছে। আগের থেকে অনেক শান্ত হয়েছি। ধৈর্য ধরতে শিখেছি। জীবন ফিরে পেয়ে তাকে নতুন করে ভালবাসতে শিখেছি। উপভোগ করতে শিখেছি আমার চার পাশ। বহু কাল বেড়াতে যাইনি। ‘আবার কাঞ্জনজঙ্ঘা’ ছবির দৌলতে দার্জিলিং ঘোরা হল। এখনও গোটা বিশ্ব ঘোরা বাকি। পাশাপাশি, অতিমারি কমুক। মুখে মাস্ক পরা বন্ধ হোক। তবে না সেজেগুজে ছাদনাতলায় যাব! সবাই এসে আনন্দ করবেন। বিয়ের দিন পালিয়ে যাচ্ছে না!