ভরত কল
দেখতে দেখতে ৫২ বছরে পড়লাম। অনেকেই বলতে শুনেছি, জীবনভর কত কষ্ট করলাম! শুনে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাই, হে সর্বশক্তিমান! আমার মতো কষ্ট যেন কাউকে না করতে হয়। যাঁরা মারণ রোগের মুখোমুখি হয়েছেন তাঁরা জানেন, মৃত্যুর গন্ধ কী ভয়ঙ্কর! অনেকে এও জানতে চান, কী করে এত লড়লাম? জন্মদিনে বরং সেই রহস্য ফাঁস করি। জানেন তো, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সবাই ঘুরে দাঁড়াতে বাধ্য। আমিও সেটাই করেছি। যখন দেখেছি লড়াই ছাড়া গতি নেই, দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গিয়েছি। একেক সময় মনে হয়, এখন বেঁচে থাকাই সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়। অতিমারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দাপটে জীবন তছনছ। কেউ ভাল নেই।
আজ খুব মনে পড়ছে ঐন্দ্রিলা শর্মার কথা। ঐন্দ্রিলা সান বাংলার ‘জিয়ন কাঠি’ ধারাবাহিকে আমার মেয়ে হয়েছিল। ওর লড়াইয়ের মধ্যে আমার বেঁচে থাকার লড়াইয়ের ছায়া দেখতে পাই। দিল্লিতে চিকিৎসা করাতে গিয়েও আমার নিয়মিত খবর নিত, ‘তুমি ভাল আছ তো’? আমি ওকে পাল্টা বলতাম, আগে তুমি ভাল থাক। এখন তোমায় আগে ভাল থাকতে হবে। আমি ঠিক আছি।
জন্মদিন উপলক্ষে কাজ থেকে ছুটি নিয়েছি। শ্যুট নেই। বদলে প্রযোজক বন্ধু নিসপাল সিংহ রানের সঙ্গে দেখা করলাম। সুশান্ত দাসের ‘দীপ জ্বেলে যাই’-এর হিন্দি রিমেক ‘রিস্তো কা মঞ্ঝা’-র কাজ শুরু হবে ২৯ জুলাই থেকে। বাংলায় মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী, নবনীতা দাস। হিন্দিতে দেখা যাবে ক্রুশল আহুজা-আঁচল গোস্বামীকে। আঁচল বলিউডের একাধিক ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। আমি ওঁর বাবার ভূমিকায় অভিনয় করব। এ ছাড়াও যে কোনও সময় শুরু হয়ে যাবে দেবালয় ভট্টাচার্যের হিন্দি ওয়েব সিরিজ। সেখানেও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে আমায়। অতিমারির কারণে বারে বারে এর শ্যুটিং পিছিয়েছে। পারিবারিক গল্প নিয়ে তৈরি দেবালয়ের এই সিরিজ দেখানো হবে অ্যামাজন প্রাইমে।
আমার মা আর স্ত্রী জয়শ্রী মুখোপাধ্যায় মিলে জমিয়ে রান্নাবান্না করছেন। মা নিজের হাতে রাঁধছেন কাশ্মীরি রোগন জোস, আলুর দম। জয়শ্রী রাঁধছে বাঙালি মতে পাঁচ রকম ভাজা, ডাল, তরকারি ইত্যাদি। আমি সত্যিই ভাগ্যবান। ক’জনের দুই রীতি মেনে এ ভাবে জন্মদিন পালন হয়? আজ ইশ্বরের কাছে ‘রিটার্ন গিফট’ হিসেবে একটা চাওয়া আছে। কী সেটা? ঈশ্বরের কাছে আন্তরিক প্রার্থনা, অন্তত আরও ১৮ বছর যেন বেঁচে থাকি। তত দিনে মেয়ের পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে। আশা, নিজের পায়ে দাঁড়িয়েও যাবে। তখন ছুটি নেব। আমার বাবা আমার লড়াইয়ের নেপথ্য শক্তি ছিলেন। আমার মেয়ে মা-ঘেঁষা। কিন্তু সমস্যা পড়লেই আমার কাছে ছুটে আসে।
আমি চলে গেলে ওকে সমস্যা থেকে টেনে তুলে লড়াইয়ে ফেরাবে কে?