বিনা পারিশ্রমিকে অবতারকৃষ্ণ কলের ছবিতে কাজ করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন রাখি। ছবি: সংগৃহীত।
‘আপনি কেন লেডিজ়ে ওঠেন না?’
‘আরে ওখানে তো এর থেকেও বেশি ভিড়।’...
পঞ্চাশ বছর আগে এমনই সংলাপে বাঁধা পড়েছিল শালিনী আর সঞ্জয়। তখনও মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনে ভিড় ছিল, তখনও জীবনে প্রেম ছিল। পঞ্চাশ বছর পর আবার কি দেখা হবে সঞ্জয়-শালিনীর, রেলগাড়ির কামরায়?
না, পর্দায় পঞ্চাশ বছর অপেক্ষা করতে হয়নি টিকিট পরীক্ষক সঞ্জয়কে। প্রায় রোজই তাদের দেখা হত, দেখা থেকে ভাল লাগা, প্রেম। কিন্তু বাবার পছন্দে বিয়ে করে ফেলার পর হারিয়ে যায় অনেক কিছু। হারিয়ে যাওয়া নায়িকা শালিনীর সঙ্গে তার ফের দেখা হয়ে যায়। ‘২৭ ডাউন’ মুম্বই-বারাণসী এক্সপ্রেসের দুলুনি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল সেই অতীতে। সেই সব সাদাকালো ছবি ক্যামেরায় বন্দি করে এক নতুন ধরনের চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছিলেন অবতারকৃষ্ণ কল, সময় ১৯৭৪ সাল। রমেশ বক্সীর হিন্দি উপন্যাস ‘আঠারহ সুরজ কে পৌধে’ অবলম্বনে এই ছবি তৈরি। বলিউডে যে সময় রঙিন ছবির বান ডেকেছে, সেই সময় অবতারকৃষ্ণ মাধ্যম হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন সাদাকালো ছবি।
পঞ্চাশ বছর পর মুম্বই থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে গোয়ার বসে সেই ছবি আরও একবার দেখলেন ‘শালিনী’ রাখি গুলজ়ার। ৮২ বছরের প্রবীণ অভিনেত্রী যেন নিমেষে ফিরে গেলেন তাঁর ৩২ বছরের দিনগুলিতে। মুম্বই শহরতলির এক লড়াকু মেয়ের চরিত্র তাঁকে দেওয়া হয়েছিল ‘২৭ ডাউন’ ছবিটিতে। সেই সময় রাখি বলিউডে পরিচিত নাম, তত দিনে মুক্তি পেয়ে গিয়েছে ‘শর্মিলি’, ‘রেশমা ও শেরা’, ‘লাল পাত্থর’ থেকে ‘হিরাপান্না’ বা ‘বনারসি বাবু’। তবু, তাঁর ডাক এল নবাগত এক পরিচালকের কাছ থেকে। আর অবতারকৃষ্ণর ছবিতে কাজ করতে রাজিও হয়ে গেলেন রাখি। একেবারে বিনা পারিশ্রমিকে। রাখি গোয়ায় বসে আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “ছবির গল্প আমার দারুণ পছন্দ হয়েছিল। তাই আর দ্বিতীয় বার ভাবিনি। রাজি হয়ে যাই ছবিটি করতে। অন্য ছবির শুটিংয়ের মধ্যেই এই ছবিটি করতে হয়েছিল। নিজেই সময় বার করে চলে আসতাম এই ছবি করতে।”
১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় ‘২৭ ডাউন’ ছবিটি। কিন্তু মুক্তির তারিখ এখন আর জানা যায় না। ছবিমুক্তির পঞ্চাশ বছর উপলক্ষেই বিশেষ প্রদর্শনের ব্যবস্থা হয়েছে গোয়ায়। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, এ ছবির হাত ধরেই বলিউডে এসেছিল নতুনত্বের সুবাতাস। এই সময়ই একে একে বলিউডে কাজ করতে আসেন শ্যাম বেনেগল, এমএস সত্যু। তৈরি হয় ‘অঙ্কুর’, ‘গরম হাওয়া’র মতো ছবি।
কিন্তু মাত্র ৩৪ বছর বয়সে রহস্যমৃত্যু হয় নবীন পরিচালক অবতারকৃষ্ণের। এমনকি সেরা সিনেমাটোগ্রাফির জন্য জাতীয় সম্মান হাতে ওঠার কথা জানতেও পারেননি তিনি। ছবিটিও তলিয়ে যায় কালের গর্ভে।
মঙ্গলবার গোয়ায় বড় পর্দায় ছবিটি দেখে রাখি বলেন, “আমার খুব ভাল লেগেছিল এই ছবিটি করতে। সে সময় আমি বাণিজ্যিক ছবি করি। তা-ও আমাকে অন্য ধারার এই ছবিতে কাজের জন্য ডাকা হয়েছিল।” রাখি ১৯৭৩ সালে বিয়ে করেন গুলজ়ারকে। কিন্তু তার আগেই শুরু হয়েছিল এ ছবির কাজ। তাই আজও ছবির শেষে তাঁর নাম দেখানো হয় ‘রাখি’। বিষয়টি ছুঁয়ে গিয়েছে বর্ষীয়ান অভিনেত্রীকে। তিনি বলেন, “আমি তখনও শুধুই রাখি। ভাল লাগল পুরনো দিনে ফিরে যেতে।”