সৌরভ দাস, রাজা চন্দ এবং মানসী সেনগুপ্ত
বড় পর্দায় ‘ম্যাজিক’ দেখানোর পর ওয়েব সিরিজে জাদু দেখাতে চলেছেন রাজা চন্দ। এ বার তাঁর হাতেখড়ি ওয়েব সিরিজ পরিচালনায়। আনন্দবাজার অনলাইনকে রাজা জানিয়েছেন, সোমবার শ্যুট শুরু করেছেন তাঁর প্রথম সিরিজ ‘কাটাকুটি’-র। নিবেদনে রাজা চন্দ ফিল্মস। সিরিজের কাহিনি-চিত্রনাট্যকার অর্ণব ভৌমিক। একা রাজাই নন, ‘কাটাকুটি’-র হাত ধরে ছোট পর্দা থেকে ওয়েব সিরিজে প্রথম পা রাখতে চলেছেন ‘কী করে বলব তোমায়’ ধারাবাহিকের জনপ্রিয় খলনায়িকা ‘পায়েল সেন’ ওরফে মানসী সেনগুপ্ত। তাঁর বিপরীতে দেখা যাবে সৌরভ দাসকে। ছয় পর্বের এই সিরিজ দেখা যাবে ক্লিক ওটিটি প্ল্যাটফর্মে।
আর কী কী নতুন থাকছে ‘কাটাকুটি’তে? রাজার দাবি, সিরিজের গল্প থ্রিলার ঘরানার হলেও সৌরভ দাস ওরফে ‘আদিত্য’কে একেবারে নতুন ভূমিকায় দেখতে পাবেন দর্শকরা। পরিচালকের কথায়, ‘মন্টু পাইলট’ বা ‘চরিত্রহীন’ সিরিজে সৌরভ হয়তো অনেকটাই সাহসী। ‘কাটাকুটি’তে সেই সৌরভ মিতভাষী। খুব লাজুক। নিজেকে ঠিক ভাবে সবার সামনে প্রকাশ করতে স্বচ্ছ্বন্দ নয়।
সৌরভের ঠিক বিপরীত চরিত্র মানসী ওরফে ‘কৌশানী’-র। সে স্পষ্ট কথা বলতে জানে। এমন বিপরীত মেরুর আদিত্য-কৌশানী স্বাভাবিক ভাবেই পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। সাত পাক ঘোরার পরিকল্পনাও করে। কিন্তু বিয়ের আগেই খুন হয়ে যায় আদিত্যের হবু স্ত্রী। কে বা কারা, কী ভাবে খুন করল? এই নিয়েই গল্প এগোবে।
দীর্ঘ সময় বড় পর্দায় ছবি পরিচালনায় অভ্যস্ত রাজা। ওয়েব সিরিজ পরিচালনা করতে গিয়ে কোনও পার্থক্য দেখছেন? পরিচালকের দাবি, ‘‘কাজে নামার আগে ওয়েব সিরিজ সম্বন্ধে পড়াশোনা করে নিয়েছিলাম। হ্যাঁ, কিছু পার্থক্য তো আছেই। সিরিজ অনেক বেশি ঝকঝকে। কোথাও কোথাও সাহসীও। অতিমারিতে জনপ্রিয় হয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। যদিও এখনও সাধারণ দর্শক সিরিজ বলতে বোঝেন নেটফ্লিক্স বা অ্যামাজন। আমাকে তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে হবে। এটা মাথায় রেখেই কাজে নেমেছি।’’
সৌরভ মানেই বিতর্ক। একই সঙ্গে হইচই করা আদ্যন্ত মজার মানুষ তিনি। ‘আদিত্য’ চরিত্রটি এক দম উল্টো। চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কী ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করছেন? অভিনেতার বক্তব্য, ‘আদিত্য’ চরিত্রে অনেক গুলো স্তর আছে। এমনিতে মানুষটা তাঁর মতোই মজার। লোকজন পছন্দ করে। কিন্তু মেয়ে দেখলেই গুটিয়ে যায়। বিয়ের আগের রাতে হঠাৎই খুন হয়ে যায় তার হবু স্ত্রী। তখনই চেনা মানুষের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসে অচেনা এক ঠান্ডা মাথার খুনি। এমন চরিত্রকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে সৌরভ ইতিমধ্যেই দুটো ওয়র্কশপ সেরে ফেলেছেন পরিচালকের সঙ্গে। বললেন, ‘‘এই ধরনের চরিত্র ফুটিয়ে তোলা খুব কঠিন। একটুও চড়া অভিনয় করা যাবে না, এটা বুঝতে পেরেছি। রাজাদা খুবই সাহায্য করছেন। পাশাপাশি পরিশ্রম করতে হবে আমাকেও।’’ তাঁর মতে, এত দিন যত সিরিজ করেছেন তাতে এত অ্যাকশন ছিল না। ‘মন্টু পাইলট’-এ সামান্য অ্যাকশন থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেটি শেষ হয় রোমান্স দিয়েই। ‘কাটাকুটি’-তে টানটান থ্রিলার, অ্যাকশন। তাই কাজ করতেও ভাল লাগছে।
‘কী করে বলব তোমায়’ ধারাবাহিকে ‘রাধিকা’ বনাম ‘পায়েল’-এর দ্বন্দ্ব দেখে অভ্যস্ত দর্শক। সেখানে সাধারণত জিতে যায় ‘রাধিকা’। বাস্তবে ‘পায়েল’ ওরফে মানসী এগিয়ে গেলেন। কী বলবেন? অভিনেত্রী যদিও বিষয়টি এ ভাবে দেখতে রাজি নন। তাঁর কথায়, ‘‘ধারাবাহিকের প্রযোজক শশী-সুমিত সব সময়েই আমাদের স্বাধীনতা দেন। তাই রাজাদা-র কাছ থেকে ডাক পেতেই রাজি হয়ে যাই। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনও ব্যাপার নেই। পাশাপাশি, ক্লিক-এর থেকেও সব রকমের সাহায্য পাচ্ছি।’’ দিন-রাত শ্যুটিং করে দুই ধরনের চরিত্র এবং মাধ্যমে কাজ করতে চলেছেন মানসী? ‘‘তেমনটা নয়’’, দাবি অভিনেত্রীর। তাঁর কথায়, মঙ্গলবার সকালে সিরিজের শ্যুটিং সেরে দুপুরের দিক থেকে তিনি স্টুডিয়ো পৌঁছে যাবেন। বাকি সময় তিনি ব্যস্ত থাকবেন ধারাবাহিকের জন্য। এ ভাবেই আপাতত সামলাবেন সবটা।
সৌরভ এবং রাজা দু'জনের সঙ্গেই কাজ করতে পেরে দারুণ খুশি মানসী। জানালেন, সৌরভের সঙ্গে আগে কাজ করলেও কখনও তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেননি। পরিচালক রাজা সেই সুযোগ করে দেওয়ায় তিনি কৃতজ্ঞ। খুশি রাজাও। তাঁর মত, দর্শকেরা যাতে সিরিজ জুড়ে নতুনত্বের স্বাদ পা্ন তাই সৌরভকে নতুন ধরনের চরিত্র দেওয়ার পাশাপাশি ‘নতুন মুখ’ হিসেবে অনেকের মধ্যে থেকে মানসীকে বেছেছেন। এঁরা ছাড়াও সিরিজে থাকবেন পিয়ান সরকার, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, রানা গুহ, দেবতনু, সুরজিৎ, নাট্যব্যক্তিত্ব বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। সব ঠিক থাকলে চলতি মাসের শেষেই শ্যুট শেষ হয়ে যাবে সিরিজের।