Raj and Parambrata on Jyotipriyo Mallik’s arrest

বালুর গ্রেফতারে ‘প্রলয়’ ও বরুণ বিশ্বাসকে কেন টেনে আনা হচ্ছে! বুঝতে পারছেন না রাজ এবং পরমব্রত

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতার উস্কে দিচ্ছে বরুণ বিশ্বাসের স্মৃতি। যা ঘিরে রাজ চক্রবর্তীর ‘প্রলয়’ তৈরি হয়েছিল। সেই স্মৃতি নিয়ে কী বলছেন পরিচালক রাজ এবং সেই ছবির মুখ্য অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ২০:৪৮
Proloy Director Raj Chakraborty and actor Parambrata Chatterjee speak about Barun Biswas in context of Jyotipriyo Mallik’s arrest

(বাঁ দিক থেকে) রাজ চক্রবর্তী, বরুণ বিশ্বাস, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

ঘটনাপ্রবাহে প্রথম জন খানিক হতাশ। কিন্তু তাঁর আদর্শে তিনি অটুট। ভবিষ্যতে সুটিয়ার প্রতিবাদী শিক্ষক বরুণ বিশ্বাসের মতো চরিত্র পেলে আবার ছবি বানাবেন। তবে এটাও দেখবেন যে, তাতে দলের যেন কোনও ক্ষতি না হয়।

Advertisement

দ্বিতীয় জন বিস্মিত, দশ বছর পরে কেন আবার বিষয়টা উঠে আসছে! তবে তিনি কোনও ‘রাজনৈতিক’ প্রশ্নের জবাব দিতে নারাজ।

প্রথম জন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। যিনি এখন তৃণমূলের বিধায়ক। দ্বিতীয় জন অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।

গত ২৭ অক্টোবর রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ার পর ‘প্রাসঙ্গিক’ হয়ে উঠেছে সুটিয়ার প্রতিবাদী শিক্ষক বরুণের হত্যাকাণ্ড। ২০১২ সালের জুলাই মাসে খুন হন বরুণ। তার প্রায় এক বছর পর ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘প্রলয়’ ছবিটি তৈরি করেছিলেন পরিচালক রাজ। বাণিজ্যসফল সেই ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্র বরুণের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন পরমব্রত।

বরুণ হত্যার পর তাঁর পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল, ওই খুনের জন্য জ্যোতিপ্রিয়ই দায়ী। এখনও বরুণের পরিবার সুবিচারের পথ চেয়ে বসে রয়েছে। রেশন দুর্নীতিতে জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতার হওয়ার পরে আবার বরুণের হত্যাকাণ্ড ‘প্রাসঙ্গিক’ হয়ে উঠেছে। যেমন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে ‘প্রলয়’ ছবিটিও। বরুণের দিদি প্রমীলা রায়ের অবশ্য বক্তব্য, ওই ছবিতে তাঁর ভাইকে নাকি ঠিক ভাবে দেখানো হয়নি। কিন্তু সেই ছবি তৈরির নেপথ্যে কী ভাবনা ছিল রাজের? পরিচালকের জবাব, ‘‘ওঁর লড়াইটা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। আমি নিজেও বরুণ বিশ্বাস হতে চাই! এক জন পরিচালক হিসাবে আমি নিজেও ওঁর মতো লড়াই করতে চাই। সেই ভাবনা থেকেই ছবিটা তৈরির সিদ্ধান্ত নিই। অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল না।’’

‘প্রলয়’ তৈরির সময় রাজ সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। কিন্তু এখন তিনি শাসক দলের নির্বাচিত বিধায়ক। সম্প্রতি ভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজ পরিচালিত ‘আবার প্রলয়’ ওয়েব সিরিজ় মুক্তি পেয়েছে। যে আদর্শ থেকে ‘প্রলয়’ তৈরি করেছিলেন, তা কি এখনও অটুট? ভবিষ্যতে বরুণের মতো কোনও চরিত্র নিয়ে সুযোগ পেলে আবার ছবি তৈরি করবেন? ব্যারাকপুরের বিধায়ক বললেন, ‘‘অবশ্যই! এক জন পরিচালক হিসাবে আমার মধ্যে আগামী দিনে ছবির বিষয়বস্তু নির্বাচনে কোনও পক্ষপাত কাজ করবে না। কিন্তু একই সঙ্গে আমার দলের যেন কোনও ক্ষতি না হয়, সেটাও আমাকে দেখতে হবে। একটা মতাদর্শে বিশ্বাস করি বলে অন্য মতাদর্শকে তো ছোট করতে পারি না।’’ রাজের দাবি, একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে তিনি পিছপা নন। তিনি বিশ্বাস করেন পরিচালক এবং রাজনীতিক— এই দুই সত্তার মধ্যে একটি দেওয়াল রয়েছে। রাজের কথায়, ‘‘আমার দল তো কখনও আমাকে আমার ছবিতে দলের প্রচার করতে বলেনি। দলের প্রয়োজনমতো কোনও মঞ্চে বা সভায় অবশ্যই দলের হয়ে প্রচার করেছি। দুই সত্তাকে গুলিয়ে ফেললে মুশকিল!’’

 Parambrata Chatterjee in Proloy

‘প্রলয়’-ছবিতে বরুণের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন পরমব্রত। ছবি: সংগৃহীত।

বরুণের পরিবার ‘সুবিচার’ পাবে বলেই আশা রাজের। কারণ, দেশের আইন এবং আদালতের উপর তাঁর পূর্ণ আস্থা রয়েছে। কিন্তু জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেফতার নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে দশ বছর আগে তৈরি একটি ছবির সঙ্গে এখন অহেতুক রাজনীতি জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে দেখে একটু হলেও ‘হতাশ’ রাজ।

‘প্রলয়’-এ বরুণের চরিত্রে অভিনয় করে নজর কেড়েছিলেন পরমব্রত। সাম্প্রতিক ঘটনা কি তাঁকে নাড়া দিচ্ছে? ওই ছবি নিয়ে কোনও রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ছবিটা করার সময় শুধু বরুণ বিশ্বাসের ইতিহাসটা জানতাম। কিন্তু এর সঙ্গে কারা যুক্ত বা কারা দায়ী, তা নিয়ে আমার কোনও ধারণা ছিল না। দশ বছর পর কেন এই বিষয়টা নতুন করে উঠে আসছে, এই মুহূর্তে আমি সেটাও জানি না।’’‘প্রলয়’-এ বরুণের চরিত্রে অভিনয় করে নজর কেড়েছিলেন পরমব্রত।

বস্তুত, পরমব্রত বিশ্বাস করেন মানুষ তার কাজের মধ্যে দিয়েই সমাজের মধ্যে রয়ে যায়। বরুণের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সেই মানুষটা তখন যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রশংসা দাবি করে। ছবিটাও সে জন্যই তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এর পিছনে কোন দল বা কারা দায়ী ছিলেন, সেটা হয়তো ভবিষ্যতেও জানার সুযোগ হবে না। আমার মনে হয় না, প্রকৃত সত্য কোনও দিন বাইরে আসবে। আমি যে খুব জানতে চাই সেটাও নয়। কারণ, সেই মানুষটা তো এখন আর আমাদের মধ্যে নেই। তাঁকে মনে রাখতে হবে তাঁর কাজের মধ্যে দিয়ে।’’

Movie Poster of Proloy

‘প্রলয়’ ছবির পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত।

ওই ছবিতে বরুণের চরিত্রায়ণ নিয়েও আবার শুরু হয়েছে আলোচনা। পরিবারের তরফে বলা হয়েছে, বরুণের কোনও প্রেমিকা ছিলেন না। ছবিতে পরমব্রতের সঙ্গে মিমি চক্রবর্তী অভিনীত ‘দুর্গা’ চরিত্রটির সখ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তবে পরিচালক রাজের বক্তব্য, ‘‘আমি তো কোনও তথ্যচিত্র তৈরি করিনি। একটা ছবি তৈরি করেছি। সেখানে পরিচালক হিসাবে শৈল্পিক স্বাধীনতা তো নিতেই হবে।’’ একই সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘ছবিতেও কিন্তু বরুণের কোনও প্রেমিকাকে দেখানো হয়নি। ওঁর দলের এক জন সদস্যকে মহিলা দেখানো হয়েছে। মাস্টারমশাই, পুলিশ অফিসার বা দুর্গা— এরা প্রত্যেকেই কিন্তু বরুণের ‘অল্টার ইগো’। তারা প্রত্যেকেই বরুণকে ভালবাসে। বরুণের অনুপস্থিতিতে তারা এই লড়াইকে নিজেদের মতো করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।’’

রাজের বক্তব্য, ‘প্রলয়’ ছবিতে বরুণকে একটি ‘আদর্শ’ হিসাবেই তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘কেউ বলতে পারবেন না, আমি ওঁকে অসম্মান করতে চেয়েছি। এমন এক জন মানুষকে যে কারও ভাল লাগতে পারে।’’ রাজ মনে করছেন, এখন সকলে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে তাঁর ছবির নামটা টেনে আনছেন। রাজের কথায়, ‘‘আসলে ঘোলা জলে মাছ ধরতে সকলেই ভালবাসে! এক জন বৈগ্রহিক মানুষের অসংখ্য অনুরাগী থাকতে পারে। সমাজমাধ্যমে কে কী লিখছেন, তা নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না।’’ ওই ছবিতে লাল রং বা ‘হ্যাজাক’ চিহ্ন নিয়েও বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। রাজ বললেন, ‘‘আমি শুনেছি। কোনও নির্দিষ্ট রং তো কারও সম্পত্তি নয়। কেউ সেটা গায়ে মাখতে চাইলে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়।’’ অতীত উদাহরণ দিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘২০১০ সালে ‘লে ছক্কা’ ছবিতেও তো পাড়ার দুটো দলের দুটো আলাদা রঙের পতাকা দেখিয়েছিলাম। কোনও নির্দিষ্ট রং তো কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে না!’’

Advertisement
আরও পড়ুন