বাসমতী চালের জিআই ট্যাগ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে পাকিস্তানের নথি চেয়ে আবেদনের পর এ বার ইউরোপীয় আদালতের দ্বারস্থ হল ভারত।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাসমতী চালের উপর মালিকানা দাবি করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে পাকিস্তান যে নথি জমা দিয়েছিল, তা দেখতে চেয়েছিল ভারত।
কিন্তু ভারতের সেই আবেদন খারিজ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, তাদের ১০৪৯/২০০১ নিয়মাবলি অনুযায়ী তারা ওই তথ্য দিতে বাধ্য নয়।
ওই তথ্য দিলে ইসলামাবাদের সঙ্গে নাকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক খারাপ হতে পারে। সে কথা মাথায় রেখে ভারতের আবেদন খারিজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। আর এর পরেই ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিসের দরজায় কড়া নাড়িয়েছে নয়াদিল্লি।
বাসমতী চাল কার— এই নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব অনেক দিনের। কোনও একটি নির্দিষ্ট এলাকায় কোনও পণ্য পরিচিতি ও খ্যাতি লাভ করলে সেই আঞ্চলিক পণ্যটির জন্য জিআই (জিয়োগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) আবেদন করা যায়।
সে ক্ষেত্রে সেই পণ্যটি ওই নির্দিষ্ট এলাকাতেই যে খ্যাতি লাভ করেছে, তার প্রমাণ দিতে হয়। সেই প্রমাণ খতিয়ে দেখেন কর্মকর্তারা।
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ম অনুসারে, একাধিক দেশ একই স্বত্বাধিকারের জন্য উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ সমেত আবেদন করতে পারে। এমনকি, প্রথমে অন্য দেশ করলে তার পর আর এক দেশও তা করতে পারে।
বাসমতী নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত বছর কয়েক আগে। বাসমতী চালের জিআই ট্যাগ পেতে আবেদন করেছিল ভারত। বাসমতীর উপর পাল্টা মালিকানা দাবি করে পাকিস্তানও।
বিশ্বের বাজারে, বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি বাসমতী চাল রফতানি করে ভারত। যদিও ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার বাসমতীর বাজার পাকিস্তানের দখলে।
ইউরোপের দাবি ছিল, ভারতের বাসমতীতে রাসায়নিকের পরিমাণ বেশি। সে তুলনায় পাকিস্তানি বাসমতী অনেক বেশি প্রাকৃতিক। আর তার পরেই পাকিস্তান থেকে বাসমতী আমদানি করে ইউরোপ।
ইউরোপের বাজারে পাকিস্তানের সেই আধিপত্য শেষ করতেই ভারত মালিকানা দাবি করেছিল। ভারতের পর পাকিস্তানও বাসমতী চালের উপর জিআই ট্যাগ পায় ২০২১ সালে।
বাসমতী যে পাকিস্তানের, তা প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লাগে ইসলামাবাদ। এক কাঠি উপরে গিয়ে বাসমতী চালের ‘প্রটেক্টেড জিয়োগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (পিজিআই)’ পেতে সেই সংক্রান্ত নথিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে জমা দিয়েছিল পাকিস্তান।
অন্য দিকে ভারতের দাবি, যর্জুবেদ থেকে শুরু করে আমাদের বহু প্রাচীন পুঁথিতে বাসমতী চালের উল্লেখ রয়েছে। বিশেষজ্ঞেরাও বাসমতী চাল ভারতের হওয়ার পক্ষেই যুক্তি দিয়েছে। তাই ভারতও পিজিআই তকমা পাওয়ার জন্য লড়াই চালাচ্ছে।
এর মধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বারস্থ হয়েছিল ভারত। গত ২৭ মার্চ ভারতের বাসমতী চালের রফতানির দায়িত্বে থাকা এপিইডিএ-র আইনজীবী পাকিস্তানের নথি দেখার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে আবেদন করেন।
গত ১ জুলাই ভারতের সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। দর্শানো হয় কারণও। তার পরিপ্রেক্ষিতেই এ বার পাকিস্তানের কাগজ দেখতে ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিসের দ্বারস্থ হয়েছে এপিইডিএ।
কিন্তু কেন বাসমতী চালের উপর ‘মালিকানা’ পেতে এত লড়াই করছে ভারত এবং পাকিস্তান? কূটনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, আসলে বাসমতী নিয়ে বিশ্ববাজারে আধিপত্য রয়েছে ভারতের। পিজিআই পেলে সেই আধিপত্য একছত্র হবে।
আর সেই জায়গায় কোনও ভাবেই ইউরোপ আর অস্ট্রেলিয়ার বাজার হারাতে চায় না পাকিস্তান। অর্থনীতি পোক্ত করতে অন্য দেশের বাজারও ধরতে চায় ইসলামাবাদ। আর সেই কারণেই এত আকচাআকচি।
সব ছবি: সংগৃহীত।