পঙ্কজ ত্রিপাঠী। ছবি: সংগৃহীত।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আসছে ‘মির্জাপুর’ সিজ়ন ৩। আগামী ৫ জুলাই থেকে আবার নেটফ্লিক্সে এই ‘শো’-টি দেখতে পাওয়া যাবে। মুম্বইয়ের পাঁচতারা হোটেলে ‘মির্জাপুর’-এর ‘কালিন ভাইয়া’ ওরফে পঙ্কজ ত্রিপাঠীর মুখোমুখি হল আনন্দবাজার অনলাইন।
প্রশ্ন: প্রথম যখন ‘কালিন ভাইয়া’ চরিত্রের জন্য ডাক পেয়েছিলেন, তখন কি ভেবেছিলেন এতটা জনপ্রিয় হবেন?
পঙ্কজ: এ সব কথা মাথায়ই আসেনি, ‘কালিন ভাইয়া’র জনপ্রিয়তার পিছনে যাবতীয় কৃতিত্ব আমি দেব ওর সৃষ্টিকর্তাদের। কারণ তাঁরাই ‘কালিন ভাইয়া’র চরিত্রকে এতটা মৌলিক ভাবে কল্পনা করেছেন। আমরা সচরাচর হিন্দি ছবিতে যে ধরনের ‘ভিলেন’-এর চরিত্র দেখতে পাই, তার সঙ্গে ‘কালিন ভাইয়া’র কোনও মিল নেই। সম্প্রতি আপনি এমন কোনও খলনায়ক দেখেছেন যে মৃদুভাষী, ব্যক্তিত্বে ব্যঙ্গের একটু আভাসও আছে? ‘মির্জাপুর’ দুনিয়ার সবাইকে পছন্দ করার পিছনে প্রধান কারণ হল চরিত্রগুলো খুব আলাদা, দর্শক আগে এ রকম চরিত্র দেখেননি।
প্রশ্ন: ‘কালিন ভাইয়া’র নেতিবাচক দিকগুলো আমরা জানি, কিন্তু পঙ্কজ ত্রিপাঠীর নেতিবাচক দিকগুলো ঠিক কী কী?
পঙ্কজ: মানুষ মাত্রেই দোষে-গুণে ভরা, আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আমি কিন্তু বেশ অলস আর অসামাজিক, ফিল্মি পার্টি বা ‘ইভেন্টে’ আমাকে বিশেষ দেখা যায় না। নিজের চুলচেরা বিশ্লেষণ আমি খুব একটা করি না, কারণ আমি জানি আমি নিখুঁত নই।
প্রশ্ন: যখন কাজ শুরু করেছিলেন সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত নিজের চোখে নিজের মধ্যে কী কী পরিবর্তন দেখতে পান?
পঙ্কজ: সত্যি যদি বলি, তা হলে বলব আমি এ সব নিয়ে চিন্তাভাবনা করি না। যা অর্জন করেছি, ভালবাসা বলুন বা প্রশংসা, তাতে শুধুই কৃতজ্ঞতায় মাথা ঝুঁকে যায়।
প্রশ্ন: ‘কালিন ভাইয়া’র চরিত্রে সবচেয়ে কঠিন দিক কোনটা ছিল?
পঙ্কজ: শুটিংয়ের প্রথম দিন থেকেই ‘কালিন ভাইয়া’ হয়ে উঠতে আমার বেশ সময় লেগেছিল। পরিচালক গুরু বলেন যে, আমাকে ঠিক ‘কালিন ভাইয়া’ বলে মনে হচ্ছে না। ‘স্ত্রী ২’ ছবির সময়ও এমনই ঘটনা ঘটেছিল। ‘অটল’ ছবির শুটিং শেষ করে রাতে ট্রেন ধরে ললিতপুরে গিয়েছিলাম। আর সকাল ন’টায় সোজা ‘স্ত্রী ২’ ছবির সেটে। প্রথম বার টেক দেওয়ার পর অমর কৌশিক (‘স্ত্রী ২’ ছবির পরিচালক) আমার কানের কাছে এসে বলেন যে আমাকে দেখে ‘অটলজি’ মনে হচ্ছে। সেই সময় হোটেলে পৌঁছে কিছু দিন বিশ্রাম নিয়ে তার পর কাজ শুরু করেছিলাম। আমার ব্যক্তিগত অভিমত, অভিনেতা হিসাবে একটা চরিত্রে কাজ করার পর অন্তত ১৫-২০ দিনের ছুটি প্রয়োজন।
প্রশ্ন: চরিত্র নির্বাচনে আপনার শর্ত কী থাকে ?
পঙ্কজ: প্ৰথম শর্ত হল ছবির গল্পটা যেন আমাকে রোমাঞ্চিত করে। চরিত্রটি করার সময় আমি যেন সেই অভিজ্ঞতাটা উপভোগ করতে পারি। ‘অটলজি’র ক্ষেত্রে আমি এটা অনুভব করেছিলাম। কর্মজীবনের প্রথম দিকে ২০ দিনের শুটিং করতে পারলেই মনে শান্তি পেতাম। এখনও কিন্তু অর্থ বা জৈবিক কোনও কিছুই আমায় টানে না। যে চিত্রনাট্য বা চরিত্র আমাকে উৎকণ্ঠায় সারা রাত জাগিয়ে রাখে, সেটাই আমার নির্বাচনের প্রধান শর্ত হয়।
প্রশ্ন: আপনার অভিনয়ের অনুরাগী অনেকেই; এমন কি কেউ আছেন যিনি আপনার অভিনয়ের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেন?
পঙ্কজ: নিজের বাড়িতেই আমি সমালোচক রেখে দিয়েছি, আমার স্ত্রী রয়েছেন। আর আমি নিজেও নিজের বড় সমালোচক। আমি খুব অল্পেই খুশি হয়ে যাই না, তেমনই আমি তাড়াতাড়ি আবার দুঃখও পাই না। নিজের কাজের মূল্যায়ন ক্রমাগত করতে থাকি। আর নিজের কাজে ভুলত্রুটিগুলি খুঁজে বার করি। একজন অভিনেতা হলেও, আমি নিজের অভিনীত ছবি দেখি না, তবে এ বার ভাবছি ছবি দেখা শুরু করব।
প্রশ্ন: ‘মনিটরে’ নিজের অভিনয় দেখেন?
পঙ্কজ: না, আমি এখনও পর্যন্ত কোনও কাজেই ‘মনিটর’ দেখিনি। কোনও শট দেওয়ার পর পরিচালক যখন ‘ওকে’ বলেন, তা-ই আমার জন্য যথেষ্ট। পরিচালকের চোখই আমার কাছে ‘মনিটর’। আমার রূপটান শিল্পী সুরেশ মহান্তি আমার আয়না। ‘মনিটর’ বা আয়না কোনও কিছুই আমি দেখি না।
প্রশ্ন: অভিনয় জীবনের দু’দশক পার করে ফেলেছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি কখনও পরিচালনার কথা কি ভেবেছেন?
পঙ্কজ: না, সে ভাবে কখনও ভাবিনি। তবে নাটক করার সময় আমি পরিচালনা করেছি। পরে হয়তো বা পরিচালনা করতেও পারি। আমার অভিনয়ের ‘দোকান’ এখন ভালই চলছে। এই দোকানে যখন মন্দা দেখব, তখন হয়তো পরিচালনার কথা ভাবতে পারি। ছবিতে একজন পরিচালকই তাঁর কল্পনার দুনিয়া বানান, কিন্তু তাঁর সঙ্গে পরিচালককে মাথায় অনেক বোঝা নিয়ে চলতে হয়। একজন অভিনেতা হিসেবে নিজের কাজটা করে যখন রাতে হোটেলে ফিরি, তখন আমি শান্তিতে ঘুমোই। কিন্তু একজন পরিচালকের মাথায় অনেক চিন্তা থাকে।
প্রশ্ন: আপনি সকলের পছন্দের অভিনেতা। আপনার পছন্দের অভিনেতা কে?
পঙ্কজ: আমাদের সময়সাময়িক অভিনেতাদের মধ্যে ইরফান খান আমার পছন্দের ছিলেন। ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় পড়ার সময় ওঁর অভিনয় দেখেছিলাম। এ ছাড়া আমার পছন্দের তালিকায় আছেন বলরাজ সাহনি, সঞ্জীব কুমার, ওম পুরী, পঙ্কজ কপূর।
প্রশ্ন: আপনি প্রতিযোগিতায় কতটা বিশ্বাসী?
পঙ্কজ: নম্বরের দিকে আমি কোনও দিন ঝুঁকিনি, কারণ আমি জানি যে আসল নায়ক লেখকই। একজন ব্যক্তির স্বাধীনতা এবং আনন্দের প্রয়োজন। আমার কাছে সবচেয়ে জরুরি হল শান্তি। এই মুহূর্তে আমি ছুটিতে রয়েছি, আর তাই খুব ভাল ভাবেই বুঝতে পারছি আমার জীবন কতটা গতিময় জীবন ছিল। কাজের মাঝে বিরতি নেওয়াটা খুব জরুরি, আমার বাড়ি আমার শান্তির জায়গা।
প্রশ্ন: কেরিয়ারের এই পর্যায়ে এসে আপনার কাছে কোনও বিষয় কি কঠিন মনে হয়?
পঙ্কজ: নবাগত হয়ে যখন কাজ শুরু করেছিলাম, তখন কাউকে আঘাত দিতাম না। কিন্তু এখন একটা ভাল কাজ পেলে অনেকেই আঘাত পেতে পারেন। একজন মানুষ সফল হলে, বা তিনি ভাল কাজ পেতে শুরু করলে, দুঃখী মানুষের সংখ্যা বেড়ে যেতে থাকে (হেসে)।
প্রশ্ন: আপনি নিজেকে কী মনে করেন, এক জন তারকা না এক জন অভিনেতা?
পঙ্কজ: আমি অভিনেতা, না তারকা সেটা আমার দর্শকই বলবেন।
প্রশ্ন: কখনও কোনও চরিত্রের জন্য প্রত্যাখ্যাত হলে সেটার মোকাবিলা কী করে করেছেন?
পঙ্কজ: হতাশ হওয়া বা বিষণ্ণ হওয়াকে আমি কোনও দিন প্রশ্রয় দিইনি, সেই রকম কিছু ঘটলে মনকে পরিবর্তন করে ফেলি, তবে হ্যাঁ, আমি এখন ৫০ ছুঁয়েছি, তাই কিছু প্রিয়জনের চলে যাওয়ায় মনখারাপ হয়।