নাতনি মেখলা বসুর সঙ্গে দাদু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
দাদুর জন্মদিন। উইকিপিডিয়া বলছে, দাদু আজ ৯০! চার বছর হয়ে গেল ওঁকে ছাড়াই জন্মদিন পালন করছি আমরা। আমাদের মতো করে। গত চার বছর ১৯ জানুয়ারি যেন দাদু বেশি করে জীবন্ত হয়ে ওঠেন। ওঁর অনুপস্থিতিতেও। দাদু যখন ছিলেন তখনকার উদ্যাপন এক রকম ছিল। খাওয়ার সময় গোটা পরিবার এক টেবিলে। সকাল থেকে আড্ডা। ঘুরেফিরে দাদুর পছন্দের ভালমন্দ খাওয়া। ওঁর সঙ্গে অনেকে দেখা করতে আসতেন। সেই তালিকায় থাকতেন বন্ধুরা, থাকতেন আত্মীয়েরা। বিনোদন দুনিয়ার মানুষেরাও থাকতেন। ওই একটা দিন দেখতাম, দাদু বেশ আড্ডার মেজাজে থাকতেন।
এখনও দিনটি আছে। প্রতি বছর ফিরেও আসে। দাদুকে ছাড়াই এখন দাদুর জন্মদিন পালন হয়। আজ কেবল দাদুকে মনে করার দিন। ওঁর সঙ্গে কাটানো স্মৃতি ফিরে দেখার দিন। যেমন, এ বছর মা পৌলমী বসু চারুকলা অ্যাকাডেমিতে বিশেষ উদ্যাপনের আয়োজন করেছেন। সেখানে উপস্থিত থাকার খুবই ইচ্ছে। আরও একটা ইচ্ছে করছে খুব। দাদু থাকলে আজ ওঁকে নিয়ে কবিতা লিখে উপহার দিতাম। দাদু নিজেও লিখতেন। ওঁর কবিতা পড়ার ভঙ্গিও চমৎকার। নিশ্চয়ই আমার লেখা ও ভাবেই পড়তেন।
এক জন নারীর কাছে বাবার পরেই দাদুর স্থান। আমার দাদুর মতো সুপুরুষ হলে কথাই নেই। ওই জন্যই বোধহয় সব নায়িকার সঙ্গে পর্দায় ওঁর রসায়ন সুন্দর ফুটে উঠত। কী শর্মিলা ঠাকুর, কী অপর্ণা সেন, কী ওয়াহিদা রহমান। আমি দাদুর বেশির ভাগ ছবি দেখেছি। সবচেয়ে পছন্দের ছবি ‘কোনি’। আমার কাছে সর্বকালের সেরা।
পর্দায় যিনি এত সুন্দর, বাস্তবেও তাঁর জীবন কি এতটাই সুন্দর ছিল? বড় হয়েছি তো। ইদানীং, এই প্রশ্ন অনেকেই করছেন। আনন্দবাজার অনলাইন থেকেই যেমন জানতে চাওয়া হয়েছে, টলিউড বলে, সৌমিত্রবাবুর পারিবারিক জীবন খুবই বেদনার। তাঁকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। সত্যি?
আমার উপলব্ধি, প্রত্যেক মানুষের জীবনেই সংগ্রাম থাকে। অনেক ত্যাগস্বীকার করতে হয়। আমার দাদুকেও করতে হয়েছে। সে সব অত্যন্ত নিপুণ হাতে সামলেছেন তিনি। ফলে, সব নিয়ে আমার দাদু চূড়ান্ত সফল। দাদুকে দেখে, ওঁর সঙ্গে কথা বলে একটি জিনিস শিখেছি। খ্যাতনামী হবে পরে, আগে দয়ালু, ভাল মানুষ হতে হবে। দাদুর থেকে পাওয়া এই শিক্ষা আমার আজীবনের সঙ্গী। দাদুকে মনে রেখে ভবিষ্যতে আমার বেশ কিছু পরিকল্পনাও রয়েছে। কিন্তু সেটা আপাতত চমক হিসেবেই থাক।