Durga Puja 2024

নবপত্রিকা কী ভাবে গণেশের কলাবৌ? কেন সপ্তমীতে স্নানে কেবল এয়ো স্ত্রীদের ডাক পড়ে?

নবপত্রিকা ন'টি গাছের সমাহার। এই ন'টি গাছ দেবী দুর্গার প্রতীক। তাই সব গাছ একত্রে স্নান করিয়ে শাড়ি পরিয়ে দেবীর রূপ দেওয়া হয়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪ ১২:০৯
(বাঁ দিকে) নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি। নন্দিনী ভৌমিক (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি। নন্দিনী ভৌমিক (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

দেখতে দেখতে পুজোর দ্বিতীয় দিন। সপ্তমীর সকাল মানেই নবপত্রিকা স্নান। কথ্য ভাষায় যাকে ‘কলাবৌ স্নান’ বলা হয়। সপ্তমীর সকালে কেন এই বিশেষ আচার পালন করা হয়? কী কারণে নবপত্রিকা ‘কলাবৌ’-এ রূপান্তরিত হল? কেনই বা সে গণপতি বা গণেশের বৌ হিসাবে পরিচিত?

Advertisement

সবিস্তার জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির সঙ্গে। তাঁর কথায়, “স্মার্ত রঘুনন্দন বলেছেন, ‘পূর্বাহ্নে পত্রী প্রবিশ’। পত্রী মানে যার পাতা আছে, অর্থাৎ বৃক্ষ। যার পাতা আছে। একেই শাড়ি পরিয়ে ‘কলাবৌ’ সাজানো হয়। যদিও এই নয় বৃক্ষের সমাহার কোনও ভাবেই গণেশের বৌ নয়।”

সপ্তমীর সকালে নবপত্রিকা স্নানে কী কী গাছ থাকে? শাস্ত্র মতে, কলাগাছ, কচু, হলুদ, জয়ন্তী, ডালিম, মানকচু, বেল, অশোক, ধান। এই ন’টি গাছ আদতে নয় দেবীর প্রতীক। কলা গাছ ব্রহ্মাণী, কচু গাছ কালিকা, হলুদ গাছ দুর্গা, জয়ন্তী গাছ কার্তিকী, বেল গাছ শিবা, ডালিম গাছ রক্তদন্তিকা, মানকচু গাছ চামুণ্ডা, অশোক গাছ শোকরহিতা, ধান গাছ লক্ষ্মীর প্রতীক। এদের প্রত্যেককে আলাদা স্নান করিয়ে কলাগাছের সঙ্গে বেঁধে শাড়ি পরানো হয়। কলাগাছের পাতা ঘোমটার ফাঁকে দুলতে থাকে। যা দেখে মনে হয়, যেন কোনও বৌ ঘোমটা টেনে রয়েছে। তাই পুজোর শেষ মন্ত্রে বলা হয়, ‘নব দুর্গায়ৈ নমঃ’।

এ বার প্রশ্ন, নবপত্রিকা কী ভাবে গণেশের বৌ? নৃসিংহপ্রসাদবাবুর মতে, “প্রতিমার ডান পাশে নবপত্রিকা থাকার কথা। আগে গ্রামেগঞ্জে সে ভাবেই রাখা হত। কিন্তু শহুরে মণ্ডপে সেটি দৃষ্টিনন্দন না হওয়ায় নিয়ম মেনে দুর্গার ডান দিকে এবং গণেশের বাম দিকে রাখা হল। নবপত্রিকা স্ত্রী রূপে পূজিতা, তাই পুরুষের বাম দিকে থাকায় সে বামা। অর্থাৎ, স্ত্রী। এই জায়গা থেকে কলাবৌ গণেশের বৌ।”

হিন্দু শাস্ত্রে পুজোর অনেক বিধি। তার মধ্যে অতি পরিচিত নিয়ম, যে কোনও শুভকাজে এয়োস্ত্রীর উপস্থিতি। নবপত্রিকা স্নানেও তাই। বিধবা বা কুমারী কন্যা এই আচারে যোগ দিতে পারেন না। কেন? জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল মহিলা পুরোহিত নন্দিনী ভৌমিকের সঙ্গে। তিনি অনুযোগ জানিয়েছেন সমাজের কিছু নিয়মের বিরুদ্ধে। নন্দিনীর কথায়, “আগে নারী সঠিক শিক্ষার অভাবে উপার্জনে অক্ষম ছিলেন। বিধবা হয়ে বাবার কাছে ফিরলে পরিবারের গলগ্রহ হতেন। তাঁর সব শখ নানা নিয়ম দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হত। যাতে তাঁর পিছনে বেশি অর্থব্যয় না হয়।” তাঁর দাবি, এই জায়গা থেকেই একজন সধবা সব কিছু করতে পারেন। তিনি শুভ। যিনি বিধবা তিনি ঠিক উল্টো। তাই তিনি কোনও শুভকাজে নেই।

এখানেই আপত্তি নন্দিনীর। তাঁর প্রশ্ন, “নারীশক্তির আবাহনে কেন নারীকেই এ ভাবে নিচু করা হবে?” তিনি সব শ্রেণীর নারীর পুজোর সব আচারে যুক্ত থাকার পক্ষে। দাবি, “শহরের ঘুম ভেঙেছে। এখনকার মেয়েরা এই রীতি মানতে চাইছেন না। গ্রামাঞ্চল এখনও পিছিয়ে।” তাঁর আশা, খুব তাড়াতাড়ি এই পরিস্থিতি বদলাবে।

আরও পড়ুন
Advertisement