Sirf Ek Bandaa Kaafi Hai Review

কেমন হল মনোজ বাজপেয়ী অভিনীত ‘সির্ফ এক বান্দা কাফি হ্যায়’? জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন

আদালতে মুখোমুখি দুই পক্ষ। এক জন প্রভাবশালী, অন্য জন নিতান্তই সাধারণ মানুষ। অসম লড়াইয়ের দ্রুত গতির গল্প পর্দা থেকে চোখ ফেরাতে দেয় না।

Advertisement
অভিনন্দন দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৩ ১৯:৪৩
Movie review of Sirf Ek Bandaa Kaafi Hai starring Manoj Bajpayee

এই ছবিতে মনোজের অভিনয় প্রমাণ করে কেন তিনি বলিউডে ভিন্ন পথের পথিক। ছবি: সংগৃহীত।

বাস্তব ঘটনার ‘অনুপ্রেরণা’য় ইদানীং বলিউডে একাধিক ছবি তৈরি হচ্ছে। তবে সমাজের এক প্রভাবশালী ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ! সেই আখ্যানকে পর্দায় ফুটিয়ে গিয়ে পান থেকে চুন খসলেই বিপত্তি ঘটতে পারত। কিন্তু মনোজ বাজপেয়ী অভিনীত ‘সির্ফ এক বান্দা কাফি হ্যায়’ ছবিতে পরিচালক অপূর্ব সিংহ কর্কি বিষয়টাকে সাবধানতার সঙ্গে নাড়াচাড়া করেছেন। চলতি সপ্তাহেই ওটিটিতে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি।

ছবি দেখতে বসে অনুমান করা কঠিন নয় যে, পরিচালক তাঁর গল্পের রসদ সংগ্রহ করেছেন ধর্মগুরু আসারাম বাপুর জীবন থেকে। ছবির ট্রেলার প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। তবে ছবির চিত্রনাট্য অনুসরণ করেছে নিগৃহীতার আইনজীবী পি সি সোলাঙ্কিকে। এই চরিত্রেই অভিনয় করেছেন মনোজ বাজপেয়ী। রাজস্থানের জোধপুর গল্পের প্রেক্ষাপট। আসারামের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা তাঁর কারাদণ্ড বহু বার খবরের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছে। তাই সে ঘটনা নিয়ে এখানে আলোচনা নিষ্প্রয়োজন। বরং ‘হাই প্রোফাইল’ মামলায় দুর্বল প্রতিপক্ষ সঠিক পরামর্শ পেলেও যে সত্যের জয় হয়, ছবিটা দেখতে বসে সেই ভাবনাই বেশি করে নাড়া দেয়।

Advertisement
Surya Mohan Kulshreshtha.

ধর্মগুরুর চরিত্রে সূর্য মোহন কুলশ্রেষ্ঠ চরিত্রটির প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যগুলো পর্দায় হাজির করেছেন। ছবি: সংগৃহীত।

নির্যাতিতা নাবালিকার বাবা-মায়ের মামলা চালানোর সামর্থ্য নেই। বিনা পারিশ্রমিকেই সোলাঙ্কি মামলা লড়তে রাজি হয়। একে একে সাক্ষীদের হত্যা করা হচ্ছে। আসে অর্থের প্রলোভন। সোলাঙ্কির উপরেও প্রাণঘাতী আক্রমণ আসছে। বিরোধী পক্ষে দেশের আইন জগতের ‘সেলিব্রিটি’ আইনজীবীদের দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও মনোবল অটুট রেখে সত্যের পথে হাঁটলে যে জয় লাভ করা সম্ভব, সোলাঙ্কির গল্প সেটাই প্রমাণ করে।

Adrija Sinha.

ওড়নার আড়ালে অদ্রিজার অসহায় দৃষ্টিশক্তি দর্শকের সহানুভূতি আদায় করে নেয়। ছবি: সংগৃহীত।

সোলাঙ্কি ছাড়া চিত্রনাট্যে বাকি চরিত্রদের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ছবির সিংহভাগ দখল করেছে আদালত চত্বর। তাঁর কেন্দ্রে রয়েছেন মনোজ। তিনি সেই সুযোগের যথার্থই সদ্ববহার করেছেন। এক দিকে সওয়াল জবাবে বিরোধীকে একচুল জমি ছাড়তে নারাজ। আবার বিরোধী পক্ষের তারকা আইনজীবীর সঙ্গে ছবি তোলার সময় অবলীলায় বলে ওঠেন, ‘‘স্যর, আমি আপনার খুব বড় ভক্ত।’’ মা এবং ছেলেকে নিয়ে ছোট্ট সংসার সোলাঙ্কির। আদালত চত্বরের বাইরেও মানুষটা একটু ভিতু প্রকৃতির। চরিত্রের এই দুই মেরুকে অনায়াস দক্ষতা ফুটিয়ে তুলেছেন মনোজ। বিশেষ করে ছবির শেষে মামলার ক্লোজ়িং স্টেটমেন্টে মনোজের অভিনয় আরও এক বার প্রমাণ করে, কেন তিনি তাঁর সমসাময়িক অভিনেতাদের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন পথের পথিক। বিরোধী আইনজীবীর চরিত্রে বিপিন শর্মা মনোজকে ভালই টক্কর দিয়েছেন। ধর্মগুরুর চরিত্রে সূর্য মোহন কুলশ্রেষ্ঠের খুব বেশি সংলাপ না থাকলেও চরিত্রটি প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যগুলো তিনি পর্দায় হাজির করেছেন। আলাদা করে নজর কেড়েছেন নিগৃহীতা অর্থাৎ নু-এর চরিত্রে অদ্রিজা। ওড়নার আড়ালে তাঁর অসহায় দৃষ্টিশক্তি দর্শকের সহানুভূতি আদায় করে নেয়। তবে চরিত্রটি সম্পর্কে আরও জানার আগ্রহ রয়ে যায়। নু-এর বাবা এবং মায়ের চরিত্রে যথাক্রমে জয়হিন্দ কুমার এবং দুর্গা শর্মার অভিনয় বাস্তবসম্মত।

ছবির সম্পাদনা মন্দ নয়। মামলার সময়কাল ৫ বছর। এই ধরনের সংবেদনশীল ঘটনার ক্ষেত্রে আদালতে সওয়াল-জবাব পর্বকে আরও ডিটেইলে দেখালে দর্শকের আগ্রহ তৈরি হতো। ছবির ক্যামেরাও বেশকিছু ভাল মুহূর্তে উপহার দিয়েছে। যেমন রাতে ছাদে মায়ের সঙ্গে সোলাঙ্কির কবিতা পাঠ বা ছবির শেষে নু-এর কান্নায় ভেঙে পড়ার দৃশ্যটি মনে দাগ কাটে। দীপক কিংগ্রনির সংলাপ এই ধরনের মামলা বাস্তবে আদালতে কী ভাবে লড়া হয়, তার উপর অনেকটাই আলোকপাত করেছে।

হিন্দি ছবিতে কোর্টরুম ড্রামার বিবর্তনকে অনুসরণ করলে অনেকেরই রাজকুমার সন্তোষীর ‘দামিনী’র কথা মনে পড়বে। সময়ের সঙ্গে পর্দায় আদালত আরও বাস্তবের কাছে পৌঁছতে চেয়েছে। সেখানে ‘পিঙ্ক’ থেকে শুরু করে ‘সেকশন ৩৭৫’ তালিকা বেশ দীর্ঘ। ‘সির্ফ এক বান্দা কাফি হ্যায়’ সেই তালিকায় নতুন সংযোজন।

আরও পড়ুন
Advertisement