Bhediya Movie Review

কমেডির মোড়কে নেকড়ে-মানুষের ভয়, কেমন হল বরুণ-কৃতির ‘ভেড়িয়া’? জানাল আনন্দবাজার অনলাইন

বলিউডে হরর-কমেডি ঘরানার ছবিকে জনপ্রিয় করেছিল ‘স্ত্রী’। এবারে ‘ভেড়িয়া’র বাজি বরুণ ধওয়ান ও কৃতি শ্যানন।

Advertisement
অভিনন্দন দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২২ ১৭:০৩
ইউরোপ-আমেরিকার লোকবিশ্বাসে ‘ওয়্যারউলফ’ বা নেকড়ে-মানুষের কথা বহুল প্রচলিত।

ইউরোপ-আমেরিকার লোকবিশ্বাসে ‘ওয়্যারউলফ’ বা নেকড়ে-মানুষের কথা বহুল প্রচলিত। ছবি: সংগৃহীত।

শ্রীদেবীর হাত ধরেই হোক বা হালের হিন্দি ছোট পর্দার চটুল ধারাবাহিকের প্রেক্ষাপট— ‘ইচ্ছাধারী নাগিন’-এর সঙ্গে ভারতীয় দর্শকের পরিচয় আগেই ঘটেছে। কিন্তু ‘ইচ্ছাধারী ভেড়িয়া’? ইউরোপ, আমেরিকার লোকবিশ্বাসে ‘ওয়্যারউলফ’ বা নেকড়ে-মানুষের কথা বহুল প্রচলিত। কিন্তু ভারতীয় পরিসরে নেকড়ে-মানুষের চল তেমন নেই। পরিচালক অমর কৌশিক এমনই এক বিচিত্র জীবের সঙ্গে দর্শককে পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর সাম্প্রতিক ছবি ‘ভেড়িয়া’য়। উত্তর-পূর্ব ভারতের লোকবিশ্বাস থেকে কিছু উপাদান সংগ্রহ করেই বোনা হয়েছে ছবির চিত্রনাট্য।

Advertisement
ছবির একটি দৃশ্যে বরুণ ও কৃতি।

ছবির একটি দৃশ্যে বরুণ ও কৃতি। ছবি: সংগৃহীত।

শুরু থেকেই এই ছবিকে ‘হরর কমেডি’ বলেই প্রচার করা হয়েছে। কারণ, এর আগে পরিচালকের হাত দিয়ে বেরিয়েছিল ‘স্ত্রী’ ছবিটি। তবে ‘ভেড়িয়া’ শুরু থেকেই ভয় কম, কমেডি বেশি নীতি মেনে এগিয়েছে। দিল্লি থেকে রোড কনট্রাক্টর ভাস্কর শর্মা (বরুণ ধওয়ান) তুতো ভাই জনার্দনকে (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে নিয়ে হাজির হয় অরুণাচল প্রদেশের জিরো শহরে। উদ্দেশ্য, জঙ্গল কেটে রাস্তা তৈরি, প্রান্তিক মানুষকে কেন্দ্রের সঙ্গে সংযুক্ত করা। স্বাভাবিক ভাবেই এই কাজ করতে গিয়ে গ্রামের মানুষের বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয় তাদের। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে ভাস্কর সঙ্গে পায় সেই এলাকার দু’জন বাসিন্দাকে— পান্ডা (দীপক দোব্রিয়াল) এবং জো (পালিন কাবাক)। পূর্ণিমার রাতে জঙ্গলে নেকড়ের কামড় খায় ভাস্কর। তার পর সে নতুন ভাবে নিজেকে আবিষ্কার করে। রাত হলেই তার মধ্যে শুরু হয় মানুষ ও পশুর মনস্তাত্ত্বিক লড়াই।

ছবিতে কৃতি শ্যাননের উপস্থিতি একটু কম।

ছবিতে কৃতি শ্যাননের উপস্থিতি একটু কম। ছবি: সংগৃহীত।

মানুষ সময়ান্তরে জন্তুর রূপ ধারণ করছে— এ রকম একটা চরিত্রে অভিনয় করা সহজ নয়। বরুণকে সেখানে বেশ মানিয়েছে। এই ছবির জন্য তিনি পেশিবহুল শরীর তৈরি করেছেন। রেখেছেন একগাল দাড়ি। তবে ছবিতে মূল হাসির খোরাক জুগিয়েছেন অভিষেক এবং নবাগত অভিনেতা পালিন। দীপককে নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। এই ধরনের চরিত্র তাঁর হাতের মুঠোয়। স্বল্প পরিসরে সৌরভ শুক্লা মন্দ নন। ছোট ছোট চরিত্রে স্থানীয় অভিনেতারাও মানানসই। তবে পশু চিকিৎসক হিসাবে ছবিতে কৃতি শ্যাননের উপস্থিতি একটু কম।

‘ভেড়িয়া’র পরতে পরতে রয়েছে কমেডি। কিন্তু তার সঙ্গেই নীরেন ভট্টের চিত্রনাট্যে পরিবেশ তথা বন সংরক্ষণ নিয়ে বার্তা দেওয়া হয়েছে। তবে উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষ জাতিবৈষম্যের শিকার বোঝাতে ব্যবহৃত সংলাপগুলি বড্ড ক্লিশে। ছবির ভিএফএক্স বেশ ভাল। বিশেষ করে গ্রাফিক্সের সাহায্যে তৈরি নেকড়ের চালচলন পর্দায় বেশ বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। জিষ্ণু ভট্টাচার্যের ক্যামেরা উত্তর-পূর্ব ভারতের দৃশ্যপটকে খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছে। তবে ছবির ক্লাইম্যাক্সের দৃশ্যগুলোতে আর একটু কাঁচি চালাতে পারতেন সম্পাদক। ছবির গানগুলো চাকচিক্য বাড়িয়েছে মাত্র।

শেষে কয়েকটি সূত্র দেওয়া যাক। আগেই জানা গিয়েছিল, অমর কৌশিকের হাত ধরে প্রযোজক দিনেশ ভিজান একটা ট্রিলজির পরিকল্পনা করেছেন। তাই এই ছবির গানের ভিডিয়োতে শ্রদ্ধা কপূরকে দেখে অনেকেই ‘স্ত্রী’র সঙ্গে ‘ভেড়িয়া’র সংযোগ স্থাপনে নানা তত্ত্বের উপস্থাপনা করছিলেন। যোগসূত্র তো আছেই, কিন্তু সেই চমক ছবির শেষে। এই ঘরানার পরবর্তী ছবিও যে আসছে, তার ইঙ্গিতও মিলেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement