‘ভেড়িয়া’ ছবিতে বরুণ ধওয়ানের বিপরীতে রয়েছেন অভিষেক। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
প্রশ্ন: আপনি কি এখন মুম্বইতে?
অভিষেক: না-না। আমি এখন জয়সলমীরে একটা ছবির শুটিংয়ে।
প্রশ্ন: ‘ভেড়িয়া’র ট্রেলারে আপনার সংলাপগুলো তো ভাইরাল হয়ে গিয়েছে।
অভিষেক: (হেসে) ভালই লাগছে। অভিনয়ের সঙ্গে ‘ভাইরাল’ শব্দটা জুড়ে গেলে তখন একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়। বিষয়টা অনেকটা ওই ভাল পরীক্ষা দেওয়ার মতো। পরীক্ষা ভাল হলে তখন নম্বর কত পাব, সেটা নিয়ে মনের মধ্যে একটা উত্তেজনা কাজ করে। সে রকমই এই ছবিটা মুক্তির পর কত নম্বর পাব, সেটা জানতে উদ্গ্রীব হয়ে রয়েছি।
প্রশ্ন: বরুণ ধওয়ানের ‘কলঙ্ক’ ছবিতে কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছিলেন। এবার সেই বরুণের বিপরীতে অভিনয় করলেন। ওঁর সঙ্গে প্রথম আলাপ মনে আছে?
অভিষেক: আপনার প্রশ্ন শুনে অনেক পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল। ‘কলঙ্ক’-এর তখন শুটিং শুরু হয়েছে। ‘ধর্মা’র মতো বড় প্রযোজনা সংস্থা। এত জন তারকা। আমরা বাইরের ছেলে। এক বার মনে হল, গিয়ে দেখি কী চলছে ওখানে! তখন ‘বাকি সব ফার্স্ট ক্লাস’ গানটার শুটিং চলছিল। অনেক দূর থেকে বরুণকে আমি প্রথম দেখি। নাচ করছে। কিন্তু কোনও কথা হয়নি।
প্রশ্ন: কাট টু ‘ভেড়িয়া’র সেট...।
অভিষেক: ছবিতে বরুণ ধওয়ান আছে শুনেই আমি পরিচালককে (অমর কৌশিক) বলেছিলাম, এ তো বড় ‘স্টার’ নিয়ে ছবি! কিন্তু প্রথম বার বরুণের সঙ্গে দেখা করে সেই ধারণাটাই ভেঙে গিয়েছিল। আরও একটা বিষয় বলি। আমাদের দু’জনেরই রাশি এক। এমনকি, আমাদের স্ত্রীদের রাশিও এক। শুটিংয়ের সময় এই বিষয়টা নিয়ে বেশ হাসিঠাট্টা হত। বরুণকে ফ্লোরে দেখে বোঝা মুশকিল যে, ও বলিউডের প্রথম সারির তারকা। ওর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সারল্য দেখে বুঝতে পেরেছি, তারকা হতে গেলে আগে একজন ভাল মানুষ হওয়া প্রয়োজন। ওর সঙ্গে এখন আমার বেশ ভাল বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছে।
প্রশ্ন: কোনও ঘটনা মনে পড়ছে?
অভিষেক: প্রচুর উদাহরণ দেওয়া যায়। তবে আমি বেছে বেছে একটা অভিজ্ঞতা আনন্দবাজার অনলাইনের পাঠকদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। অরুণাচল প্রদেশে আমাদের শুটিং চলছিল। সেটে একজন স্পটবয় হঠাৎ বরুণের গায়ে গরম চা ফেলে দিল! সে তো ভয়ে কাঁটা। বার বার ক্ষমা চাইছে। বরুণ একদম নির্লিপ্ত। শুধু বলল, ‘‘হতেই পারে। চলো, পরের শটে যাওয়া যাক।’’
প্রশ্ন: বরুণ তো সম্প্রতি বলেছেন, তিনি ‘ভেস্টিবিউলার হাইপোফাংশন’-রোগে আক্রান্ত। বিষয়টা জানার পর ওঁর সঙ্গে আপনার কোনও কথা হয়েছিল?
অভিষেক: ছবির গানের শুটিংয়ের সময় বিষয়টা ও আমাকে জানিয়েছিল। তার পরে জানতে পারলাম, এখন আর সমস্যাটা আগের মতো ততটা গুরুতর নয়। অনেকটাই সেরে উঠেছে বরুণ।
প্রশ্ন: আপনি তো খড়্গপুরের ছেলে। লকডাউনে মুম্বইতে আটকে ছিলেন। তার পর কি কলকাতায় আর এসেছিলেন?
অভিষেক: ওই বছরেই ডিসেম্বরে খড়্গপুরে গিয়েছিলাম। মা-বাবার সঙ্গে কয়েক দিন কাটিয়ে আবার মুম্বই। এই বছর ফেব্রুয়ারি নাগাদ মা-বাবা মুম্বইতে আমার কাছে দু’মাস ছিলেন। আসলে কলকাতায় তো বাড়ি নেই। তাই বাংলায় যাওয়া মানে সেই খড়্গপুর।
প্রশ্ন: খড়্গপুরে পা রাখলে এখন ‘হাথোড়া ত্যাগী’কে দেখতে নিশ্চয়ই ভিড় জমে যায়?
অভিষেক: (প্রচণ্ড হেসে) তা একটু-আধটু হয়। বাবা বাড়িতেই পুরো পাড়ার লোকজনদের ডেকে নেন। দেখা করা, সেল্ফি তোলা চলতেই থাকে। আমি আবার এগুলোয় খুব লজ্জা পাই। কারণ, ওখানেই তো বড় হয়েছি। বাবা এক বার বললেন, বাড়িতে পার্টি দেবেন। আমি অনেক কষ্টে সেটা আটকেছিলাম (হাসি)।
প্রশ্ন: বাংলার দুর্গাপুজো নিয়েও তো আপনার প্রচুর স্মৃতি।
অভিষেক: এই বছর উদ্যোগ নিয়ে খড়্গপুরে আমাদের পাড়ায় দুর্গাপুজোয় ভোগের আয়োজন করেছিলাম। বাবার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু নিজে এ বারে কাজের চাপে থাকতে পারিনি। আগামী বছর হাতে সময় পেলে পুজোটা কলকাতায় কাটানোর ইচ্ছা রয়েছে।
প্রশ্ন: মাঝে বাংলা ছবিতে কাজ করবেন ভেবেছিলেন। নতুন কোনও প্রস্তাব আছে নাকি?
অভিষেক: ‘আবার বছর কুড়ি পরে’ ছবিটা তখন লকডাউনের জন্য করতে পারিনি। কিন্তু কলকাতা থেকে সে রকম ভাল চরিত্র এখনও আমার কাছে আসেনি। আর ভাল চরিত্র না এলে বাংলা ছবি করব না। কারণ, বলিউডেও আমি চরিত্র বুঝে তার পর কাজ করতে রাজি হই। আমি বাংলার ছেলে। তাই বাংলায় গিয়ে ভাল কাজ না করলে তো কোনও লাভ নেই। আরও একটা ব্যাপার, বাংলায় কাজ করতে হলে আমাকেও নিজের বাংলা উচ্চারণ নিয়ে পরিশ্রম করতে হবে। অনেক শুদ্ধ বাংলা শব্দ রয়েছে, যার উচ্চারণ আমি ঠিকমতো করতে পারি না।
প্রশ্ন: সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তো আপনার সম্পর্ক ভাল। ওঁর তরফে কোনও প্রস্তাব?
অভিষেক: মিথ্যে বলব না। সৃজিতদা আমাকে একটা হিন্দি প্রজেক্টের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সুমন মুখোপাধ্যায়ও একটা ছবির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু দুটো কাজই ডেটের সমস্যায় করতে পারিনি।
প্রশ্ন: আচ্ছা, খড়্গপুরের একটি ছেলে বলিউডে ‘বালা’ ও ‘ভেড়িয়া’র মতো ছবিতে অভিনয় করেছে। ‘পাতাললোক’, ‘মির্জাপুর’ ওয়েব সিরিজ করেছে। আর তাকে নিয়ে টলিপাড়া চিন্তিত নয়। খারাপ লাগে না?
অভিষেক: (কিছু ক্ষণ চুপ করে থেকে) কারণটা ঠিক আমার জানা নেই। হয়তো এখনও সময় আসেনি। প্রসঙ্গটা তুললেন বলে বলি, সত্যিই কখনও কখনও মনের মধ্যে একটা হতাশা কাজ করে। আমি নিজে কাস্টিং ডিরেক্টর। আমাদের কাজই তো হল কোনও ভাল অভিনেতাকে মাথায় রেখে চিত্রনাট্য তৈরি করা। তা হলে আমি সেই অভিনেতাকে ব্যবহার করতে পারব। সেই ভাবে কোনও বাংলা ছবি তৈরি হলে তো ছবিটা হিন্দিতেও ডাব করা হতে পারে। তখন আরও বড় বাজার খুলে যাবে।
প্রশ্ন: আপনি তো নেটফ্লিক্সের জন্য তেলুগু ওয়েব সিরিজেও কাজ করলেন।
অভিষেক: তা হলে ভাবুন একবার! ওরা যদি ‘রানা নাইডু’র মতো একটা সিরিজে আমার কথা ভাবতে পারে, তা হলে বাংলা কেন ভাবছে না। তামিল ইন্ডাস্ট্রি থেকে প্রচুর প্রস্তাব পেয়েছি। কথাবার্তাও চলছে। বাংলার ক্ষেত্রে কী দোষ করলাম, বুঝতে পারছি না!
প্রশ্ন: শেষ দেখা বাংলা ছবি?
অভিষেক: এই রে! ভাবতে হবে। (খানিক ভাবার পর) সুমনদার (ঘোষ) ‘নোবেলচোর’ দেখেছিলাম। মিঠুনদাকে খুব ভাল লেগেছিল। আরও একটা জিনিস— আমার বন্ধুরা আমাকে যে সব ছবিগুলো দেখতে বলে, তার মধ্যে বাংলা ছবি নেই! দুঃখের বিষয়, একটা সময়ে ভাল বাংলা ছবি এলে বাবা-মা বলতেন। এখন সেটাও বলেন না।
প্রশ্ন: বাংলা ইন্ডাস্ট্রির জন্য কি এটা পরোক্ষে সতর্কবাণী?
অভিষেক: অবশ্যই! এটা একটা ওয়েক আপ অ্যালার্ম। জাতীয় স্তরে বাংলা ছবি নিয়ে আলোচনা কমে গিয়েছে। সে দিন ‘ইফি’র তালিকাতেও দেখলাম বাংলা ছবি কম। অথচ একটা সময় জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে বাঙালির জয়জয়কার ছিল। গল্প লিখে কাস্টিং করলে হবে না। ভাল অভিনেতাদের কথা মাথায় রেখে গল্প লিখতে হবে। ছবি তৈরির পদ্ধতির মধ্যে একটু আধুনিকতার ছাপ আনতে হবে। আমার কথাগুলো পড়ে মনে হতে পারে, খুব বড় বড় কথা বলছি। কিন্তু বাঙালি গোষ্ঠীকে এবার জেগে উঠতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, শিল্পের সবথেকে বড় স্বাধীনতা হল ‘সমালোচনা’। কেউ যদি আলোচনা না করে, সমালোচনা না করে, তা হলেই বুঝতে হবে কোথাও একটা গোলমাল হচ্ছে।