‘দৃশ্যম ফিল্মস’-এর কর্ণধার মণীশ মুন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত
থাকতেন ঝাড়খণ্ডের গ্রামে। শৈশব কেটেছে অভাবে। কিন্তু স্বপ্ন দেখতেন বড় পর্দায় অন্য রকম গল্প বলার। এবং সেই স্বপ্ন সত্যি করে দেখিয়েছেন ‘দৃশ্যম ফিল্মস’-এর কর্ণধার মণীশ মুন্দ্র। যে প্রযোজনা সংস্থা থেকে ‘মসান’, ‘নিউটন’, ‘রামপ্রসাদ কি তেরভি’র মতো স্মরণীয় কিছু ছবি উপহার দিয়েছে দর্শককে, সেই প্রযোজনা সংস্থার কর্ণধার এ বার পরিচালনায় হাতেখড়ি করলেন। শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে তাঁর প্রথম ছবি ‘সিয়া’। একটি গ্রামের মেয়ের ধর্ষণ এবং দোষীদের বিচার পাওয়ার জন্য কঠিন লড়াই নিয়ে গল্প বুনেছিলেন পরিচালক। কিন্তু এত দিন অপেক্ষা করে পরিচালকের আসনে বসলেন কেন মণীশ? কলকাতায় ছবির প্রচারে এসে আনন্দবাজার অনলাইনকে উত্তর দিলেন, ‘‘এত দিন ঠিক প্রস্তুত ছিলাম না। সব কিছুরই তো একটা সময় থাকে। এখন মনে হল, এই গল্পটা বলার সঠিক সময় এখনই। তাই সাহস করে বানিয়েই ফেললাম।’’
প্রথম ছবিতে সে ভাবে কোনও বড় মুখ নেই। রয়েছেন নবাগতা পূজা পাণ্ডে এবং পরিচিত মুখ বলতে বিনীত কুমার সিংহ। এমন একটা গল্প যা নিয়ে কেউ হয়তো ছবি করার কথা সে ভাবে ভাববেন না। কারণ বক্স অফিসে কতটা সাফল্য পাবে, তার কোনও ঠিক নেই। তবে ‘দৃশ্যম ফিল্মস’ কোনও দিনই বক্স অফিসের কথা ভেবে কোনও ছবি বানায়নি। ‘মসান’-এ সে সময় মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন রিচা চড্ডা, ভিকি কৌশল এবং শ্বেতা ত্রিপাঠি। রিচা সে সময় পরিচিত মুখ হলেও ভিকি এবং শ্বেতা তখন ছিলেন একদম নতুন। এখন ভিকি বলিউডের প্রথম সারির সদস্য। শ্বেতাও অনেকটা এগিয়ে গিয়েছেন নিজের পথে। কিন্তু মণীশ কখনও বক্স অফিসের কথা চিন্তা করে কোনও ছবির কাস্টিং করেননি।
‘মসান’ মুক্তি পেয়েছিল ২০১৫ সালে। সে সময়ে ওটিটি-র কোনও রমরমা ছিল না। কিন্তু এখন ওটিটি-র আধিক্য কি অন্য ধারার ছবির জন্য সুবিধা করে দিয়েছে? তা একদমই মনে করেন না মণীশ। তিনি বললেন, ‘‘ভারতে ওটিটি-র সবচেয়ে বড় সমস্যা হল তারাও তারকাদের পিছনে ছুটছে। আগে যখন কোনও নতুন পরিচালক স্বাধীন ভাবে ছবি বানাতেন, তখন হলে মুক্তি না পেলেও কোনও ভাবে স্যাটেলাইট সত্ত বিক্রি করতে পারতেন। কিন্তু এখন যে কোনও ওটিটি-র সঙ্গে চুক্তি আগে থেকে করতে হয়। এবং তখনই তাঁরা নাচ-গান ঢোকাতে বলেন বা কোনও তারকাকে কাস্ট করতে বলেন। যদি খুঁটিয়ে দেখেন, তা হলে বুঝতে পারবেন ইন্ডিপেনডেন্ট ছবির সংখ্যা এখন অনেক কমে গিয়েছে। বড় কোনও সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া না বাঁধলে কোনও ছবিই কোথাও দেখানো যাচ্ছে না।’’
মণীশ অবশ্য আশাবাদী। তিনি মনে করেন হিন্দি সিনেমাও অনেক রকম বদলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অনেক বড় বাজেটের ছবি ফ্লপ করলেও এই সময়ে কিছু ছোটখাটো প্রযোজনা সংস্থা স্বাধীন ভাবে নিজের মতো কাজ করছেন। তিনি আশা করেন, নবীন পরিচালকেরা পর্দায় এমন গল্প বলবেন যা কোনও সামাজিক বার্তা পৌঁছে দেবে দর্শকের কাছে।
তিনি নিজে এর পর কী করবেন? মণীশ বললেন, ‘‘রামপ্রসাদ কি তেরভি’তে পরমব্রতর (চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে কাজ করেছিলাম। ও দারুণ অভিনেতা। আমাদের বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। ও শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত না হলে আমি নিশ্চয়ই এ বারও দেখা করতাম। তবে আমার টেবিলে এই মুহূর্তে একটা চিত্রনাট্য তৈরি রয়েছে। বাংলায় একটা ছবি করতে চাই খুব তাড়াতা়ড়ি।’’