সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে কলম ধরলেন মানসী মুখোপাধ্যায়।
অদ্ভুত দুই ভাল মানুষ। শ্যামল গুপ্ত আর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ওঁদের মেয়ে ঝিনুক আমার বন্ধু। একসঙ্গে বেড়ে উঠেছি। এত স্নেহ ওঁদের থেকে পেয়েছি, বলার নয়। সবাই জানত, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। আমিও তা-ই দেখে এসেছি। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন এলেই সন্ধ্যা কাকিমা থালায় ফল, মিষ্টি, পোশাক সাজিয়ে বাবাকে দিতে আসতেন। শ্যামল কাকু আর বাবা গলায় গলায় বন্ধু।
এই বন্ধুত্বের সূত্রেই এক জনের প্রেমপত্র গান হয়ে বেজেছে অন্যের কণ্ঠে। তখন লোকমুখে ফিরত কাকু-কাকিমার প্রেম। দেখা করতে পারতেন না। কাকুকে নিয়ে কাকিমার বাড়িতে ঘোর আপত্তি। চিঠির মাধ্যমে কথা হত তাঁদের। সে রকমই একটি প্রেমপত্র ‘আমি এত যে তোমায় ভালবেসেছি।’ শ্যামল কাকু কাকিমাকে উদ্দেশ্য করেই লিখেছিলেন ওই গান। কিন্তু তাঁর গলায় সুর ছিল না। তাই সবচেয়ে কাছের বন্ধু মানবেন্দ্রকেই ধরেছিলেন, ‘‘তুই গাইবি আমার হয়ে?’’ বাবা গার্স্টিন প্লেসের ভূতুড়ে আকাশবাণী ভবনে বসে সুর দিয়েছিলেন। তাই অনেকে বলেন এবং বাবা নিজেও বলতেন, গানটা শুনলে গা-টা কেমন যেন শিরশিরিয়ে ওঠে! সেই গান কালজয়ী লেখা-সুর-গায়কির মেলবন্ধনে।
দরকারে-অদরকারে যখনই ছুটে গিয়েছি, কখনও বিমুখ করেননি কাকু-কাকিমা। কখনও গান তুলিয়ে দেওয়া। কখনও নিছকই আড্ডা। কখনও ঝিনুকের সঙ্গে খেলাধুলো। ও বাড়ির দরজা আমার জন্য সব সময়ে খোলা থাকত। সন্ধ্যা কাকিমা নেই। পরিবারের এক জন যেন চলে গেলেন। এই ফাঁকগুলো আর কোনও দিন ভরাট হবে না।