চিত্রনাট্য মাফিক অভিনয় করে এ যাত্রায় উতরে গিয়েছেন অর্জুন কপূর। ছবি: সংগৃহীত।
লোভ, ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসভঙ্গ, মৃত্যু— নেপথ্যে সেই একটাই কারণ, টাকা। আসমান ভরদ্বাজের প্রথম ছবি ‘কুত্তে’র গল্পকে সংক্ষেপে এই এক লাইনে ব্যখ্যা করা যেতে পারে। পরিচালকের অন্য পরিচয়, তিনি বলিউড পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজের পুত্র। প্রথম ছবি বলেই হয়তো কিছুটা চেনা ছকে কাহিনিকে বাঁধতে চেয়েছেন আসমান।
গোপাল (অর্জুন কপূর) এবং পাজি (কুমুদ মিশ্র) দুই অসৎ পুলিশ অফিসারকে নিয়ে গল্পের শুরু। মাদককাণ্ডে ধরা পড়ে চাকরি বাঁচাতে তাদের প্রয়োজন প্রচুর টাকা। অগত্যা এটিএম-এ টাকা ভরার গাড়ি লুটের পরিকল্পনা করে দু’জন। একে একে সেই অভিযানের শরিক হতে শুরু করে ছবির অন্য চরিত্ররা।
সত্যি বলতে, ছবির গল্পের মধ্যে কোনও নতুনত্বের স্বাদ নেই। বলিউডে এ রকম ছবি দর্শক আগেও দেখেছেন। চিত্রনাট্যকে কিছুটা ‘ডার্ক কমেডি’ ঘরানায় বাঁধতে চেয়েছেন পরিচালক। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ছবির প্রথমার্ধ বেশ ধীর গতির। দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা গতি আসে। তবে প্রায় দু’ঘণ্টার ছবি জুড়ে অহেতুক গোলাগুলি বর্ষণের প্রয়োজন ছিল না। মাঝেমধ্যে তা এতটাই ক্লান্তিকর হয়ে পড়ে যে, গল্প শেষমেশ কোথায় পৌঁছবে তা নিয়েই সন্দেহ জাগে। শেষের টুইস্টও অনুমান করা কঠিন নয়। ছবির সঙ্গীত এবং সংলাপ বিশালের। তিনি প্রত্যাশা মতোই কাজ করেছেন। বিশেষ করে কিছু কিছু দৃশ্যের খামতি ঢেকে দিয়েছে ছবির আবহসঙ্গীত।
এই ছবির সব থেকে বড় সম্পদ শক্তিশালী অভিনেতাদের উপস্থিতি। তব্বু, নাসিরুদ্দিন শাহ, কঙ্কণা সেনশর্মা, রাধিকা মদন— রয়েছেন অনেকেই। কিন্তু চিত্রনাট্য তাঁদের চরিত্রগুলির প্রতি সুবিচার করেনি। অনুরাগ কাশ্যপ এবং আশিস বিদ্যার্থীর ক্যামিয়ো ছবিতে না থাকলেও ক্ষতি ছিল না। নাসিরুদ্দিন শাহকেও সেই অর্থে জায়গা দেওয়া হয়নি। কঙ্কণা অভিনীত নকশাল নেত্রীর চরিত্রটিও অসম্পূর্ণ। স্বল্প পরিসরে শার্দুল ভরদ্বাজ যথাযথ।
চিত্রনাট্য মাফিক অভিনয় করে এ যাত্রায় উতরে গিয়েছেন অর্জুন। তবে নতুন কিছু চমক হাজির করতে পারেননি। এই ছবির তুলনায় ঢের ভাল ভাল চরিত্রে কুমুদকে দেখেছেন দর্শক। অন্য দিকে ছবিতে নজর কেড়েছেন তব্বু এবং রাধিকা। দৃঢ়চেতা অথচ অসৎ পুলিস অফিসারের চরিত্রে তব্বু মন্দ নন। তাঁর মুখে ব্যাঙ এবং কাঁকড়া বিছের গল্পটিই চরিত্রকে চিনিয়ে দেয়। ছোট ছোট চরিত্রের হাত ধরে রাধিকা যে বলিউডে লম্বা দৌড়ে অংশ নিয়েছেন, এই ছবি তা আরও একবার প্রমাণ করল।
প্রথম ছবি হিসেবে আসমানের শুরুটা মন্দ নয়। একটা জটিল প্লটকে বাবার সাহচর্যে পর্দায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন তিনি। ২০০৯ সালে বিশাল দর্শককে উপহার দিয়েছিলেন ‘কামিনে’ ছবিটি। দুঃখের বিষয় ‘কুত্তে’ ছবিতে আবহসঙ্গীতে ‘ঢ্যান ট্যা না’ বাজার সঙ্গে যে আশার আলো জ্বলে উঠছিল, তা শেষ পর্যন্ত নিভে যায়।