মাকে নিয়ে লিখলেন কৌশাম্বী চক্রবর্তী। সংগৃহীত চিত্র।
একটা দিন কেটে গেল তোমাকে ছাড়া। এই প্রথম, চাইলেও তোমাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, তুমি কোথাও নেই। অথচ, আগের দিন তুমি আমাকে দেখতে এসেছিলে। আমাদের বাড়িতে এসে কত ক্ষণ থেকে গেলে। হাসিঠাট্টা, গল্পে কী ভাল সময় কাটল! রাতেও মাসির সঙ্গে তুমি অনেক কথা বলেছ। সেই তুমি হঠাৎ করে নেই! তুমি কি কোনও ভাবে টের পেয়েছিলে মা? তাই তোমার প্রিয়জনদের সঙ্গে শেষ বারের মতো দেখা করে গেলে? তুমি জানো, বাবার শরীরে ক্যানসার বাসা বেঁধেছে। তোমার মতো করে বাবাকে এ বার কে আগলে রাখবে? বাবা যে ভীষণ একা হয়ে গেল।
সারা জীবন ঘর সামলেছ, বাইরেও। চাকরি করে আমাকে, বাবাকে, দাদাকে সামলেছ। প্রথমে দাদার, তার পর আমার বিয়ে দিলে। এত কিছু করতে গিয়ে নিজের খেয়াল রাখলে না! এখন মনে হচ্ছে, তোমার আরও একটু যত্নের প্রয়োজন ছিল। যেটা তুমি একেবারেই নাওনি। তা হলে বোধ হয় এত তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যেতে না। যখনই এই কথাটা মনে হচ্ছে আফসোস বাড়ছে। তুমি তো জানো, আমি কতটা নির্ভরশীল তোমার উপরে। তোমার সঙ্গে ভালমন্দ ভাগ করে নিতাম। ছোট ঘটনাও তোমাকে না জানিয়ে শান্তি পেতাম না। এ বার সে সব কার কাছে বলব? কার থেকে পরামর্শ নেব? তোমারও তো কত পরিকল্পনা ছিল। চাকরি থেকে অবসর নিয়েই বললে, আবার আগের মতো চুলে রং করাবে। আবৃত্তি শেখানোর ক্লাস শুরু করবে। কত কিছু কেনাকাটা করলে। তোমার স্বপ্নগুলোও যে পূরণ হল না!
মেয়েদের নিয়ম অনুযায়ী রবিবার আমার কাজ। সন্তানের কাছে এই দায়িত্ব যে কতটা মর্মান্তিক, সেটা একমাত্র মা-হারা সন্তান বোঝে। আপাতত শুটিং থেকে কয়েক দিনের ছুটি নিয়েছি। ‘ফুলকি’ ধারাবাহিকের সকলে আমার পাশে রয়েছেন। পরিচালক রাজেন্দ্র প্রসাদ দাস এবং চ্যানেল কর্তৃপক্ষ নিজেকে সামলে ওঠার জন্য সময় দিয়েছেন। জানি, তোমাকে যেমন আমরা ভুলতে পারব না তেমনি তুমিও আমাদের ছেড়ে থাকতে পারবে না। যত দূরেই যাও, সময়ে-অসময়ে ঠিক আমাদের আগলে রাখবে। এটুকুই আমার ভরসা।