২৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে জয়া-অমিতাভ। ছবি: পিটিআই।
‘‘আজ হাত ভাঙছে, কাল পা ভাঙছে! কী যে করে বুঝি না। মাথাটা যে ঠিক আছে এই অনেক।’’ কলকাতার ‘জামাই’ প্রসঙ্গে ‘ধন্যি মেয়ে’-র এই উক্তি শুনে হাসিতে ফেটে পড়ল গোটা নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম। মঞ্চে তখন রাজ্যপালের পাশের আসনে অমিতাভ বসে মিটিমিটি হাসছেন। সঙ্গ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন হয়ে গেল বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। একঝাঁক তারকা-সহ মঞ্চ আলো করে উৎসবের সূচনা করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আমন্ত্রিতদের মধ্যে টলিউডের দেব-প্রসেনজিতের মতো তারকা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে উড়ে এসেছিলেন শাহরুখ খান, রানি মুখোপাধ্যায়, কুমার শানু, অরিজিৎ সিংহ, শত্রুঘ্ন সিন্হা, মহেশ ভট্ট এবং অবশ্যই জয়া বচ্চন-সহ অমিতাভ বচ্চন। এর আগেও মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে বহু বার এই চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন দু’জনেই। এক বার অমিতাভ রসিকতা করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদনও জানিয়েছিলেন, তাঁকে আর না ডাকতে। সে সব কথা অবশ্য কানে তোলেননি মুখ্যমন্ত্রী। তাই মাঝের এক-দু’বছর কোভিডের জন্য এই উৎসবের সময়ে খানিক অদলবদল হলেও এ বার শীতকালেই আয়োজন করা হয়েছে এই আট দিন ব্যাপী চলচ্চিত্র উৎসবের। এবং ‘রীতি’ মেনেই উদ্বোধনে হাজির হয়েছেন অমিতাভ-জয়া।
বঙ্গতনয়া জয়ার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর থেকেই অমিতাভকে অনেকেই ‘কলকাতার জামাই’ বলে সম্বোধন করেন। অমিতাভও বার বার কলকাতার প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন। এ বারও তাঁর অন্যথা হল না। এ বছরও তাঁর বক্তৃতায় তিনি সিনেমার ইতিহাস, বাক্স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং আরও নানা প্রসঙ্গ ছুঁয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এ শহরকে ধন্যবাদ জানালেন, তাঁর প্রথম চাকরির জন্য। প্রতি বারের মতো অমিতাভের বক্তৃতা ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ। ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসের নানা তথ্য ঘেঁটে, রীতিমতো গবেষণা করেই অন্যান্য বারের মতো একটু সুপরিকল্পিত বক্তৃতা তৈরি করেছিলেন। তবে অমিতাভের আগে ডেকে নেওয়া হয়েছিল জয়া বচ্চনকে। তিনি কোনও রকম গুরুগম্ভীর বক্তব্যে না গিয়ে পরিষ্কার বাংলায় অমিতাভকে নিয়ে রসিকতা করলেন। বলেই দিলেন, অনেক দিন ধরেই কলকাতা আসার জন্য অমিতাভকে বলেছিলেন তিনি। কিন্তু নানা রকম অসুস্থতার কারণেই আগে তাঁদের আসা হয়ে ওঠেনি।
জয়া বরাবরই স্বল্পভাষী। কোনও বারই তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে উঠে খুব বেশি বাক্যব্যয় করেন না। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। তবে এ বার তিনি যেন তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। খুব বেশি কথা না বললেও গোটা সময়টাই তিনি মজা করে কাটালেন। শেষ করার আগে মজা করে বললেন, ‘‘জামাইয়ের সামনে মেয়ের দাম খুব কমে গিয়েছে।’’