Pujarini Ghosh

রাজনীতিতে কুকথা আজকের নাকি? ১৯৬৭-র বাম নেতার নজির টেনে প্রশ্ন পূজারিণীর

‘‘আমাদের রাজ্য এই মুহূর্তে একটা ভয়ঙ্কর অবস্থার সম্মুখীন। কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না থাকলে নিজের কাজের জায়গায় থিতু থাকা যাচ্ছে না।’’

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২১ ২০:১৩
পূজারিণী ঘোষ।

পূজারিণী ঘোষ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

ভোট প্রচারে কু’কথা কি ’২১-এর নির্বাচনে বঙ্গ রাজনীতির অঙ্গ? রাজ্য রাজনীতি ঠিক কোন ছবি তুলে ধরছে সাধারণের সামনে? ভরসা দেওয়ার মতো কোনও রাজনৈতিক দল এই মুহূর্তে বাংলায় আদৌ আছে কি? আনন্দবাজার ডিজিটালের প্রশ্নের উত্তরে বিস্ফোরক পূজারিণী ঘোষ

Advertisement

প্রশ্ন: অনেকেই বলছেন, তারকাদের ভোট যুদ্ধ, নির্বাচনের আগে দলবদল নাকি '২১-এর নির্বাচনের বিশেষত্ব। আপনারও তাই মত?

পূজারিণী: ২ মে-র পরে আবার হয়তো দল বদলের হিড়িক দেখবেন রাজ্যবাসী। আসল ঘটনা হল, আমি ‘কাজ’ করতে চাই-য়ের থেকেও তারকাদের এখন একটাই লক্ষ্য, তাঁরা যে পেশায় আছেন সেই পেশায় টিকে থেকে ভাল করে কাজ করতে চান। যার জন্য তাঁদের ‘মানুষের কাজ’ করতে হবে। আমি বোঝাতে পারলাম?

প্রশ্ন: আরেকটু বিশদে বলবেন?

উত্তর: আমাদের রাজ্য এই মুহূর্তে একটা ভয়ঙ্কর অবস্থার সম্মুখীন। কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না থাকলে নিজের কাজের জায়গায় থিতু থাকা যাচ্ছে না। কোনও দল বা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকাটা যেন বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা কেন হবে? এই পরিস্থিতির মুখোমুখি তারকারাও। তাঁরা নিজেদের কাজ ঠিক রাখতে বলতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা মানুষের কাজ করতে চান। এমনটাই করতে হচ্ছে তাঁদের।

প্রশ্ন: তারকারা কি নিজেদের নিরাপত্তার খাতিরেই জড়াচ্ছেন রাজনীতিতে?

উত্তর: খানিকটা হয়তো তাই। এর আগের এক আলোচনায় এই প্রশ্নটা আমি রিমঝিম মিত্রের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, অভিনেতারা গেরুয়া শিবিরে যোগ দিচ্ছেন কাজের জায়গা নিরাপদ করতে? রিমঝিম পরিষ্কার জানিয়েছিলেন, হ্যাঁ সেই কারণেই সবাই যোগ দিচ্ছেন।

প্রশ্ন: বাংলার রাজনীতিতে পালাবদল আসতে চলেছে...

উত্তর: দেখুন আমার বন্ধুরা খোলাখুলি জানিয়েছেন, যোগ দিলে পদ পাব। কেন যোগ দেব না!

প্রশ্ন: বিরোধী শিবির টোপ দিয়ে তারকা কিনছে, এই গুঞ্জন তা হলে সঠিক?

উত্তর: সেটা কোন দল করছে না? সব দলই করছে। বিজেপি-র কথা বেশি শোনা যাচ্ছে। কারণ, এরা রাজ্যের শাসকদল নয়। ক্ষমতায় আসতে তাই এদের হয়তো এই কাজ আরও বেশি করে করতে হচ্ছে। যেটা সংবাদমাধ্যম মারফত ছড়াচ্ছে বেশি। লোকে জানছেও বেশি।

প্রশ্ন: বন্ধুদের দেখে আপনার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে হয়নি?

উত্তর: না হয়নি। ডাক পাওয়া সত্ত্বেও হয়নি। একে আমি রাজনীতি বুঝি না। তার উপর আমি যোগ দিলে বাবা বলেছেন, বাড়ি থেকে বের করে দেবেন (হাসি)।

প্রশ্ন: কেন্দ্র আর রাজ্য সরকার এক হলে, রাজ্যবাসীর লাভ কতটা?

উত্তর: কে এলে কী সুবিধে হবে, সত্যিই আমার জানা নেই। এই মুহূর্তে আমাদের রাজ্য খুব খারাপ আছে, সেটাও নয়। পুরোটাই এখনও ধোঁয়াশায় ঢাকা। পরিষ্কার ছবি আমরা পাব ২ মে ফল ঘোষণার পর। তবে এটুকু বলতে পারি, ভবিষ্যতে লাভ সাধারণ মানুষের কতটা হবে সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। তবে রাজনীতিতে যাঁরা যোগ দিচ্ছেন বা দিয়েছেন তাঁদের অবশ্যই লাভ হবে। পাশাপাশি নেতাদেরও। নইলে কেন দলে দলে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ছেন রাজনীতিতে?

প্রশ্ন: সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে দেখলে আপনার কাছে এই মুহূর্তে বাংলার রাজনীতির ছবিটা কেমন?

উত্তর: ভীষণ নোংরামি হচ্ছে। বাকি রাজ্য বা বিদেশে কিন্তু উচ্চস্তরের রাজনীতি হয়। আমাদের রাজ্যে নিম্নস্তরের রাজনীতি চলছে। যা দেখে বাকিরা হাসাহাসি করছেন। প্রচার সভায় কী কদর্য ভাষায় একে অন্যকে আক্রমণ করা হচ্ছে! এটাই কি রাজনীতি? মন্তব্য বা বক্তব্য পছন্দ না হলেই হুমকি-ধমকি। সেটা তারকা থেকে সাধারণ মানুষ, সবাইকে। এ সব কী? তারকাদেরও যে সম্মান আছে, তাই নিয়ে কারওর মাথাব্যথা নেই! কারণ, মানুষের ‘হিরোইজম’ মারাত্মক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

প্রশ্ন: মুখ্যমন্ত্রীকে ‘বারমুডা পরা’র পরামর্শকেই কি ইঙ্গিত করছেন?

উত্তর: ওটা তো আছেই। আরও আছে। 'হোঁদল কুতকুত' বলা। 'পাগল' বলা। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি? রীতিমতো বডি শেমিং হচ্ছে প্রচার সভায়! ভাবা যায়? এক জন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে, এক জন নারীকে এ ভাবে বলা যায়! বলা উচিত?

প্রশ্ন: মুখ্যমন্ত্রী ‘মহিলা’ বলেই কি বেশি আপত্তি?

উত্তর: আমি লিঙ্গভেদ করছি না। পুরুষ হলে আক্রমণের ভাষা অন্য হত। তখন হয়তো তাঁর চরিত্র নিয়ে টানাটানি হত। তবে নারীকে তো নারীর প্রাথমিক সম্মান দিতেই হবে। তাই না? তিনি যে পদেই থাকুন। আর এই কদর্যতা তো হালের নয়। বাম আমল এই নোংরামি শিখিয়েছে। প্রমোদ দাশগুপ্ত এক বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটা সময় বলেছিলেন, ‘পুলিশের বন্দুকে কি নিরোধ পরানো? না হলে গুলি বেরোচ্ছে না কেন?’ তখনও দেওয়াল লিখনে ইন্দিরা গাঁধীকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করা হত। কে কতটা বলতে পারেন, তার মাত্রাজ্ঞান অবশ্যই থাকা দরকার।

প্রশ্ন: তা হলে তারকা-প্রার্থী শিবলিঙ্গে কন্ডোম পরানোর ছবি শেয়ার করে কি খুব অন্যায় করেছেন?

উত্তর: উনি তো নিজে ওই রকম ছবি তৈরি করে প্রচার করেননি। বিজ্ঞাপনী প্রচার নেটমাধ্যমে ভাগ করেছেন। হ্যাঁ, তাতে কারওর মূল্যবোধে আঘাত লাগতেই পারে। আমার বাড়িতেও শিব মন্দির আছে। আমিও শিবভক্ত। এ ক্ষেত্রে বলব, তারকা প্রার্থীকে কাঠগড়ায় না তুলে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিন। সেটা কিন্তু কেউ করছেন না।

প্রশ্ন: বাংলার রাজনীতি তা হলে সেই তিমিরেই?

উত্তর: এগনোর বদলে আরও অবনতি হয়েছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই নোংরামি হয়েই চলেছে। ‘ওরা করেছে আমরাও করব’-- এই মানসিকতা থেকে। সুস্থ রাজনৈতিক মনোভাবটাই উঠতে বসেছে।

প্রশ্ন: রাজ্যবাসী তা হলে কাকে ভরসা করবে?

উত্তর: আমারও এটাই প্রশ্ন। রাজনীতিতে ছবির মতো সেন্সরশিপ নেই। গালাগালি দিলে ‘এ’ ছাপ দিয়ে তাকে কাটছাঁট করারও ব্যপার নেই। চ্যানেলে চ্যানেলে যা বলছেন সবাই আনকাট সম্প্রচারিত হচ্ছে। কোনও রাখঢাক নেই। মাইক হাতে কী উদ্ধত ভঙ্গিতে সবাই কথা বলছেন! পরের প্রজন্ম কী শিখছে এঁদের থেকে, দেখে অবাক হচ্ছি। আমাকে এমনটাও বলা হয়েছে, ‘কী হয়েছে অভিনয়-ই তো করো। এটাও করবে।’ রাজনীতি আর অভিনয় এক?

প্রশ্ন: নেতারা তাহলে অভিনেতা?

উত্তর: (হেসে ফেলে) দুঃখের কথা কী বলি! এক জন অভিনেতার মুখ থেকে আমায় এ কথা শুনতে হয়েছে।

আরও পড়ুন
Advertisement