(বাঁ দিক থেকে) অরুণিতা কাঞ্জিলাল, পবনদীপ রাজন, জিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সময়টা নব্বইয়ের দশক। তখন পুজোর গান মানেই মণ্ডপে মণ্ডপে ‘ঢাকের তালে কোমর দোলে’, ‘এলো যে মা’। তারও কয়েক বছর পরে ‘ঢাক বাজা কাঁসর বাজা’, ‘জয় জয় দুর্গা মা’ গান দুটো ছেয়ে গিয়েছিল পুজোর আবহে। তিনটি গানেরই সুরকার জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কাট টু ২০২৪-এর শারদীয়া। মহালয়ায় প্রকাশ্যে এল তাঁর এ বছরের পুজোর গান, ‘ঝিঙ্কু নাকুড় দুগ্গা ঠাকুর’। সুরকারের কথায়, “গানের অডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই নানা বয়সের শ্রোতাদের আর্জি, মিউজ়িক ভিডিয়ো কবে দেখা যাবে?” গেয়েছেন অরুণিমা কাঞ্জিলাল, পবনদীপ রাজন। সব থেকে বড় ব্যাপার, এই প্রথম পুজোর গানে জিতের সঙ্গে জুটি বাঁধলেন তাঁর গীতিকার স্ত্রী চন্দ্রাণী গঙ্গোপাধ্যায়।
নিজের তৈরি আগের তিনটি গানকে সুরকার নিজেই ছাপিয়ে যেতে পারছেন না। পুজোর অন্যান্য গান জনপ্রিয় হলেও ওই তিনটি গানের জনপ্রিয়তা তারা ছুঁতে পারেনি। নিজের গানকে ছাপিয়ে আবারও নজির গড়তেই কি জিৎ নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়ার চেষ্টা করলেন? আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নে জিতের জবাব, “চন্দ্রাণী আমার অনেক গান লিখেছে। কিন্তু আমার এখনও কোনও পুজোর গান লেখেনি। পাশাপাশি, আমার ইউটিউব চ্যানেলেও কোনও দুর্গাপুজোর গান নেই। সেই জায়গা থেকেই আমি আর চন্দ্রাণী পুজোর গান বানালাম।” পবন-অরুণিমার প্রসঙ্গে তাঁর মত, দু'জনেই এই প্রজন্মের পছন্দের শিল্পী। সব ধরনের গান ওঁদের কণ্ঠে মানায়। তাই জিৎ ওঁদের বেছে নিয়েছেন।
জিতের পুজোর গান মানেই হয় অভিজিৎ ভট্টাচার্য নয় শ্রেয়া ঘোষাল। জনপ্রিয় চারটি গান তেমনই বলছে। পঞ্চম বার তিনি নিজের হাঁটা পথ নিজেই বদলালেন। কেন? গানের বাণিজ্যিক সাফল্যের কথা মাথায় রেখে অধিকাংশ সুরকার নামী শিল্পীদেরই বেছে নেন। তাঁর কথায়, “অরুণিমা বা পবনদীপ এই প্রজন্মের শিল্পী। আমরা যদি ওঁদের সুযোগ না দিই তা হলে ওঁরাই বা কী করে নিজেদের প্রমাণ করবেন?” এই ভাবনা থেকেই অভিজিৎ, শ্রেয়া বা সুরকার নিজে নন, দুই নতুন শিল্পীর উপরে ভরসা রেখেছেন। একই কারণে তিনি পুজোর মিউজি়ক ভিডিয়োয় এ বার আর কোনও তারকাকে নেননি। সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে পরিবেশ করেছেন দুই কণ্ঠশিল্পীকেই। দাবি, “দেব, শুভশ্রী বা পরের গান দুটোয় যাঁদের দেখা গিয়েছে তাঁরাও ওই সময় নতুন ছিলেন। দর্শক-শ্রোতা ওঁদের অভিনীত গান জনপ্রিয় বানিয়েছেন। তাই কোনও তারকাকে এ বারের গানের ভিডিয়োয় দেখা যাবে না।”
এটা সুরকারের দৃষ্টিভঙ্গি। গীতিকার চন্দ্রাণী জিতের সঙ্গে প্রথম পুজোর গান বানিয়ে কী বলছেন? তাঁর প্রথম কথা, “আমি আর জিৎ একসঙ্গে কাজ করা মানেই বাড়ির ঘটিবাটি তুবড়ে যাওয়া! কারণ, জিৎ গানের কথা নিয়ে কিছু না কিছু বলবেই। আমি রেগে গিয়ে বাসন আছড়ে ফেলব। এই প্রথম সেটা হয়নি।” না হওয়ায় গানটি কি বেশি ভাল হল? শ্রোতারা গানটি ইতিমধ্যেই শুনে ফেলেছেন। বক্তব্য শুনে হেসে ফেলেছেন চন্দ্রাণী। বলেছেন, “শ্রোতাদের চাপেই গানমুক্তি এগিয়ে ৫ অক্টোবরের বদলে ৩ অক্টোবর করতে হল। গান শুনে সবাই খুশি।”
গান নিয়ে কথা বলতে বলতে চন্দ্রাণী ফিরে গিয়েছেন নিজের মেয়েবেলায়। জানিয়েছেন, তিনি তখন তরুণী। অন্যান্য বন্ধুরা চুটিয়ে প্রেম করছে। বাড়ির বড়দের লুকিয়ে সে সময় দেখা করার উন্মাদনাই অন্য রকম ছিল। সেই গল্প তাঁরা পরে ভাগ করে নিতেন গীতিকারের সঙ্গে। সেই অনুভূতি তিনি এই গানের প্রতিটি কথায় বুনে দিতে চেষ্টা করেছেন। এ-ও জানিয়েছেন, তাঁকে বন্ধুদের গল্প শুনেই সন্তুষ্ট থাকতে হত। কারণ, চন্দ্রাণীর পরিবার প্রচণ্ড কড়া। সেই অভাবও নিশ্চয় গানে জায়গা পেয়েছে? তাঁর মতে, “এখনকার প্রেমিক-প্রেমিকার মনে পাওয়া না পাওয়ার দ্বন্দ্ব হয়তো আগের মতো এতটাও কাজ করে না। তবু অপেক্ষা থেকেই যায়। সেই বার্তাই আমার লেখা গান এই প্রজন্মকে উপহার দেবে।”