উৎসবের মধ্যে আর এক উৎসব।
পুজোয় ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখা? সে তো আছেই। তবে বাঙালির হুজুগ বহুমাত্রিক। খাওয়া হোক, পরা বা দেখা— যাতেই উৎসবের আমেজ, তা-ই আপন করে নিতে জানে বাঙালি। প্রতি বছরই সিনেমাপ্রেমী বাঙালির জন্য একগুচ্ছ ছবি নিয়ে পসরা সাজায় টলিউড। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। রয়েছে বেশ কিছু ‘হেভিওয়েট’ ছবি। তবে পাল্লা দিতে তৈরি নাট্যদলেরাও। সিনেমার পাশাপাশি এ বার পসরা সাজাচ্ছে মঞ্চও। পুজোর চার দিন কেটে যাবে নাটকে। অ্যাকাডেমিতে চলবে জমজমাট নাট্যোৎসব, যার টিকিট বুকিং শুরু হয়ে গিয়েছে এখনই।
ষষ্ঠীতে বোধন। ১ অক্টোবর দুপুর থেকে রাত চার ভাগ করে নিয়েছে দুই নাট্যদল। কসবা অর্ঘ্য প্রযোজিত ‘টয়ট্রেন’ এবং ‘আমেরিকান ফুটবল’ শুরু হবে দুপুর ৩টে থেকে। বিকেল সাড়ে ৬টায় মঞ্চে উঠবে বেহালা ব্রাত্যজন। তাদের প্রযোজনায় দর্শককে হর্ষ-বিষাদে ভরিয়ে তুলবে ‘একটি স্বপ্নময় মৃত্যু’।
সপ্তমী সাজাতে আসছেন সীমা মুখোপাধ্যায়। মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের নাটক ‘মায়ের মতো’ মঞ্চস্থ হবে তাঁরই নির্দেশনায়। সময় দুপুর ৩টে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সীমার প্রযোজনায় দ্বিতীয় নাটক ‘স্পেয়ার পার্টস’।
অষ্টমীর দুপুর জমে যাবে সৌরভ পালোধীর দল ইচ্ছেমতো-র সঙ্গে। ২টো ৪৫ মিনিটে মঞ্চ মাতাবে ‘ক্যাপ্টেন হুররা’। পরিচালনায় সৌরভ। অভিনয়ে তূর্ণা দাশ। সাড়ে ৬টায় শুরু হবে ইচ্ছেমতো-র আরও এক জনপ্রিয় নাটক ‘ঘুম নেই’।
৪ অক্টোবর নবমীতে ঠিক দুপুর ৩টেয় হাজির হবে ‘নান্দীকার’। পরিচালক দম্পতি সপ্তর্ষি মৌলিক এবং সোহিনী সেনগুপ্তের ঝুলি থেকে একে একে বেরিয়ে পড়বে দু’টি ভাবিয়ে তোলার গল্প। ‘এক থেকে বারো’ এবং ‘মানুষ’।
পুজোর দিনে জোড়া নাটকের শো। তা হলে কি দিনটাই মাটি? একেবারেই না, মনে করছেন নাট্যব্যক্তিত্বরা। আনন্দবাজার অনলাইন পুজো-পরিকল্পনা জিজ্ঞাসা করলে ‘এক থেকে বারো’র পরিচালক সপ্তর্ষি বলেন, ‘‘এই প্রথম পুজোয় একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে বলে মনে হচ্ছে। আগের ক’দিন টানা রিহার্সাল। নবমীর দিন মঞ্চে উদ্যাপন শেষে ঘরে ফিরে বিশ্রাম।’’ তার পর যাবেন দেশের বাড়ি। পুজোটা দারুণ কাটবে বলেই মনে করছেন। তাঁর কথায়, “বহু বছর ধরে নান্দীকার পুজোর দিনে নাটক করে চলেছে। মানুষের অপেক্ষাও থাকে। প্রচুর দর্শক হয়। সংযোগ স্থাপন হয়। তার মধ্যে একটা আনন্দ আছে।”
অন্য দিকে পুজোয় নাট্যোৎসব নিয়ে রোমাঞ্চিত ‘ঘুম নেই’-এর পরিচালক সৌরভও। আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন,“পুজোয় সব সময় ছবি মুক্তির উন্মাদনা থাকে। কিন্তু আমরা তো পুজোয় থিয়েটারও করি প্রত্যেক বছর, সেটাকে উৎসবের মরসুমে আর একটা উৎসবে রূপ দেওয়া যাবে না কেন? এই ভাবনা থেকেই কয়েকটি দলের প্রযোজনাকে ছাতার নীচে আনা হল এ বার। পুজোর চার দিনে আটটা নাটক ঘিরে নাট্যোৎসব।”
উৎসবের মধ্যে আর এক উৎসবের খবরে উচ্ছ্বসিত নাটকপ্রেমীরাও। কে বলেন তাঁরা সংখ্যায় কম? বছর বছর পুজোয় নাটক দেখে বেড়ান, এমন এক দর্শক মধুরিমা বললেন, “নাটক দেখতেই তো ভালবাসি। পুজোর ভিড় একদম ভাল লাগে না। নতুন জামা পরে নাটক দেখতে যাব, সবার সঙ্গে দেখা হবে, সেটাই তো দুর্দান্ত উদ্যাপন। উৎসব তো এমনই আমার কাছে। অ্যাকাডেমিতে নাট্যোৎসবের খবর পেয়ে গিয়েছি। পুজোয় ওখানেই থাকছি।”