‘মেয়েবেলা’ সিরিয়ালে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিবর্তে দেখা যাচ্ছে অনুশ্রী দাসকে। —ফাইল চিত্র।
সমাজমাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী টলিপাড়ায় তাঁর বয়স ৩২ বছর। কিন্তু তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল আরও আগে থেকে। যাত্রার মঞ্চ থেকে শিশুশিল্পী হিসাবে অভিনয় জীবনের হাতেখড়ি অভিনেত্রী অনুশ্রী দাসের। তার পর সেই যাত্রা আর থামেনি। যাত্রার মঞ্চ থেকে সিনেমা, তার পর টেলিফিল্ম এবং বর্তমানে সিরিয়ালে চুটিয়ে কাজ করে চলেছেন তিনি। সম্প্রতি ‘মেয়েবেলা’ সিরিয়ালে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিবর্তে অনুশ্রীকে দেখা যাচ্ছে বীথি চরিত্রে। যা নিয়ে চলছে বিস্তর চর্চাও। ‘মেয়েবেলা’র সেটে আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি অনুশ্রী।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে তো অনেক দিন হয়ে গেল?
অনুশ্রী: প্রায় তিন যুগ। ‘বৌরাণী’ ছবিতে অভিনয়টা প্রথম ধরা হলে ৩২ বছর। তবে তারও আগে বেণুপিসির (সুপ্রিয়াদেবী) একটি যাত্রায় অভিনয় করেছিলাম। তখন একটা বাচ্চা ছেলের প্রয়োজন ছিল। ‘ষষ্ঠী থেকে যষ্ঠী’ আমার প্রথম যাত্রা।
প্রশ্ন: এত বছর কাটিয়ে ফেললেন ইন্ডাস্ট্রিতে, তবু সাক্ষাৎকার দিতে এত ভয়?
অনুশ্রী: ভয় আমার বরাবরই। কী প্রশ্ন আসবে, কী উত্তর দেব। এখন তো আবার কথায় কথায় ট্রোল হয়ে যায় সবাই। আমি এখনও এ সব কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারিনি।
প্রশ্ন: অভিনেত্রীই হতে চেয়েছিলেন বরাবর?
অনুশ্রী: না, আমি সব সময়ই যাত্রা অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলাম। কাকলি চৌধুরী হতে চেয়েছিলাম। যাঁর অভিনয় দেখার পর ১০০ জন তাঁর পিছনে ছুটছে। স্টেজে উঠলে উনি যেন এক অন্য মানুষ। কাকলিদির মাধ্যমেই ক্যামেরার সামনে আসা। অনেকে প্রথমে বলেছিল, ক্যামেরার সামনে আসা এত সহজ নাকি! পরে অবশ্য কাকলিদিই উৎসাহ দেয় আমায়। যাত্রার নম্বর ওয়ান অভিনেত্রী হওয়াই লক্ষ্য ছিল।
প্রশ্ন: তার পর সিরিয়ালে এলেন কী ভাবে?
অনুশ্রী: প্রথম দিকে আমি খুব বেশি সিরিয়াল করিনি। কারণ বলা হত, সিরিয়ালে বেশি অভিনয় করা মানে দর্শকের সামনে বেশি চলে আসা। তখন তো বিয়ের কথাও প্রকাশ্যে আনা যেত না। তবে বর্তমানে টেলিভিশন অভিনেতাদের জন্য অনেক সুবিধা করে দিয়েছে। আমারও ভালই লাগছে এই মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যেতে।
প্রশ্ন: ‘মেয়েবেলা’য় বীথি চরিত্রটিতে তো মাঝপথে কাজ শুরু করলেন?
অনুশ্রী: মাঝপথে বলাটা ভুল বলা হবে। এখনও ২০০ পর্বও হয়নি। এর মধ্যে কিছু দিন আমি শুটিং শুরু করে ফেলেছি। বলতে পারেন কিছু দিন পরে কাজ শুরু করলাম।
প্রশ্ন: দর্শক তো ‘বীথি মাসি’ হিসাবে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে গ্রহণ করেছিলেন। এক জনের পরিবর্তে নিজেকে দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা কতটা কঠিন?
অনুশ্রী: দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে শুধুমাত্র চিত্রনাট্যে। গল্প ছাড়া আর কারও সেই ক্ষমতা আছে বলে আমি মনে করি না। অবশ্যই পারফরম্যান্স ভাল না হলে তো কেউ ফিরে দেখবে না। তবে কাঠামোটাই দাঁড়িয়ে আছে গল্প লেখার উপর। তেমন প্রভাব ফেলার মতো চরিত্র না দিলে দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হবে কেন?
প্রশ্ন: রূপা গঙ্গোপাধ্যায় বীথি চরিত্রটি ছাড়ার আগে বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন। সেই একই চরিত্রে হ্যাঁ বলার আগে মনে হয়নি, কেন করব?
অনুশ্রী: রূপাদিকে নিয়ে কিছু বলা ধৃষ্টতা হবে। কারণ যখন আমি ছোট, তখন রূপাদি স্টার। তখন তিনি হিন্দিতে কাজও করছেন চুটিয়ে। আমরা অবশ্য পরে একসঙ্গে অনেক কাজও করেছি। দুই বোনের চরিত্রেও অভিনয় করেছি। এই চরিত্রটিতে হ্যাঁ বলার সময়ও আমি রূপাদিকে ফোন করেছিলাম। বলেছিলাম আরও এক বার কি ভেবে দেখবে? আমায় শুধু ভালবাসা জানিয়েছিল। আমি আর কিছু বলিনি। ওর সঙ্গে আমার কোনও তুলনা চলে না।
প্রশ্ন: শাশুড়ি-বৌমার দ্বন্দ্ব, বাংলা সিরিয়ালের গল্প নিয়েও তো অনেক প্রশ্ন উঠেছে। এত বিতর্কের মধ্যে আসতে ইচ্ছে হল?
অনুশ্রী: আমি এত বিতর্ক কিছুই জানি না, শুনিনি। চরিত্রটা আমায় যখন বলা হয়েছিল, তা শুনে ভাল লেগেছিল। আর যাঁরা গল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা কি আদৌ প্রতিটা পর্ব দেখেন। গল্পের গতি কোন দিকে যাচ্ছে, তা লক্ষ করেন? দেখে বললে তবে সত্যিই খুশি হব। না হলে আমি কিছু শুনতে রাজি নই।